২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ বুধবার বিকাল ৪টায় বটিয়াঘাটার কৈয়া বাজারে ২৭তম ঐতিহাসিক বিল ডাকাতিয়া দিবস উপলক্ষ্যে এক কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত

21688381_220365688496248_2556717973996054606_o

তারিখঃ ২০/০৯/২০১৭ প্রেস বিজ্ঞপ্তি
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ বুধবার বিকাল ৪টায় বটিয়াঘাটার কৈয়া বাজারে ২৭তম ঐতিহাসিক বিল ডাকাতিয়া দিবস উপলক্ষ্যে এক কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত

২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ বুধবার বিকাল ৪টায় খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার কৈয়া বাজারে কৃষক সংগ্রাম সমিতি খুলনা জেলা কমিটির উদ্যোগে ২৭তম ঐতিহাসিক বিল ডাকাতিয়া দিবস উপলক্ষ্যে এক কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। জেলা সভাপতি গিয়াস উদ্দিনের সভাপতিত্বে জনসভায় প্রধান ও বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন যথাক্রমে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্যামল কুমার ভৌমিক ও জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি তোজাম্মেল হোসেন। জনসভায় আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি হাফিজুর রহমান, যুগ্ম-সম্পাদক অধ্যাপক তাপস বিশ্বাস, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের খুলনা জেলা সভাপতি আবুল হোসেন, ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের খুলনা জেলা সভাপতি নাজিউর রহমান নজরুল, সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাত্তার, যশোর জেলার সভাপতি আশুতোষ বিশ্বাস, কৃষক সংগ্রাম সমিতি খুলনা জেলার সহ-সভাপতি মোকাম মোল্লা প্রমুখ। সমাবেশটি পরিচালনা করেন জেলা সম্পাদক নিবিড়- কান্তি বিশ্বাস মিঠু।

প্রধান অতিথি বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর উপর স্বৈরাচারী অংসান সুচি সরকার নির্মম ও বর্বর নির্যাতন চালিয়ে হত্যা, ধর্ষণ, বাড়িঘর লুটের পর আগুন জ্বালিয়ে রোহিঙ্গাদের দেশান্তরে বাধ্য করছে। নারী, শিশু, বয়স্কসহ সেখানকার সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে সারাবিশ্বে জনগণ প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। এতদসত্ত্বেও মিয়ানমারের সরকার তা আমলে নিচ্ছে না। সাম্রাজ্যবাদী সংস্থাসমূহ তথা জাতিসংঘও কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এ রকম পরিস্থিতিতে ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে মিয়ানমারের স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে রোহিঙ্গা জনগণের পাশে দাঁড়ানোর দাবি জানান। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর লোক যাতে ভয়-ভীতি ছাড়া আবাসভূমিতে প্রত্যাবর্তন করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে রাখাইন রাজ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতে জরুরি ভিত্তিতে মিয়ানমার সরকারের উপর চাপ প্রয়োগের জন্য এবং জাতিগত নিপীড়ন বন্ধ করার জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

তিনি আরো উল্লেখ করেন, চলতি বছরে দেশে মার্চের শেষে আগাম বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট পাহাড়ী ঢল ও অকাল বন্যা, এরপর ফসলে ছত্রাক আক্রমণে, দেশের প্রায় ৪০টির অধিক জেলায় বন্যা ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জলাবদ্ধতায় কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, গোবাদি পশুখাদ্য ঘাটতিসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। এর ওপর চলতি মৌসুমে ব্যাপক পাটের চাষ হলেও কৃষক পাটের মূল্য না পেয়ে দিশেহারা। শিল্প ক্ষেত্রে সারাদেশের ন্যায় খুলনা বিভাগে সরকারি পাটকলগুলি একের পর এক বন্ধ, উৎপাদন হ্রাস করে চলেছে, অন্যদিকে বেসরকারি পাটকল মালিকেরা একটা থেকে দুইটি এভাবে পাটকল বৃদ্ধি করে চলেছে। নৌ-যান, হোটেলসহ বিভিন্ন শিল্পে শ্রম আইন ও গেজেট বাস্তবায়নে সরকার-প্রশসানের কোন কার্যকরি পদক্ষেপ নাই। শ্রমিকের ন্যূনতম বেঁচে থাকার মত মজুরির নিশ্চয়তা এখনো হয়নি। সারাদেশের ন্যায় চাঁদাবজি, টেন্ডারবাজি, নারী ও শিশু ধর্ষণ, নির্যাতন, হত্যা, গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড ঘটেই চলেছে। চাল, পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীনভাবে মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। বিদ্যুৎ, গ্যাসের মূল্যসহ বাড়ি, গাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। সারাদেশের ন্যায় রাস্তা-ঘাট ভেঙ্গে খানা-খন্দর হয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ভারত কর্তৃক উজানের অভিন্ন নদ-নদীতে ফাঁরাক্কাসহ অন্যান্য বাঁধের প্রভাব পদ্মা অববাহিকার নদ-নদীতে তীব্র। এ অঞ্চলের জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণও উজানের মিঠা পানি না পেয়ে নদ-নদীর নাব্য বিনষ্ট হওয়া ও সমুদ্র থেকে লবণপানিসহ পলি দ্বারা নদ-নদী তলদেশ ভরাট হয়ে পানি নিষ্কাশনের তীব্র সমস্যা সৃষ্টি হওয়া যা এ অঞ্চলে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করেছে যার অন্যতম ‘ভবদহ জলাবদ্ধতা’। এর ওপর রয়েছে সুন্দরবন বিনাশকারী বাগেরহাটের রামপালে কয়লা ও পাবনা রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের মত জাতীয় ও জনস্বার্থ তথা পরিবেশ-প্রতিবেশ বিনাশী অপতৎপরতা। চলতি বছর আমাদের দেশসহ সারাবিশ্বে অতিবৃষ্টি বিশেষ করে সংক্ষিপ্ত সময়ে ব্যাপক পরিমাণ বৃষ্টি, ঝড় বিশ্ব আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের কুপ্রভাব রূপেই উপস্থাপিত হচ্ছে।

বিশেষ অতিথি বলেন, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ শুক্রবার ভোর আনুমানিক ৪টার দিকে সিলেট র‌্যাব-৯ মাখরখোলা এলাকা থেকে কৃষক সংগ্রাম সমিতি সিলেট জেলার যুগ্ম-আহ্বায়ক ও সিলেট রাবার শ্রমিক সংঘের যুগ্ম-সম্পাদক সুজন মিয়াকে আটক করে তাকে নির্যাতন করে গুরুতর অবস্থায় সিলেট এমএজি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশের তত্ত্বাবধানে ভর্তি করেছে। উল্লেখ্য, সুজন মিয়া কালাগুল রাবার শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে এবং কালাগুল মৌজার কৃষকদের ভূমি রক্ষার জন্য দীর্ঘদিন যাবৎ আন্দোলন করে আসছিলেন। স্থানীয় ভূমি খেকোরা পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে তার নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে। তাকে র‌্যাব হেফাজতে নির্যাতনের প্রতিবাদ জানান। সুজন মিয়াকে নির্যাতনে মানবাধিকার লংঘনের বিষয়ের উপর দিক পাত করে বলেন, সারাদেশে আজ গুম, হত্যা, পুলিশী নির্যাতন বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। এ প্রেক্ষিতে মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার রক্ষায় ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।

নেতৃবৃন্দ বলেন, ঐতিহাসিক বিল ডাকাতিয়া কৃষক অথ্যুত্থান থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশে বন্যা ও জলাবদ্ধতা কবলিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। নেতৃবৃন্দ বলেন, বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, উজানের দেশ ভারত কর্তৃক একতরফাভাবে অভিন্ন নদ-নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করায় নদীর নাব্যতা নষ্টসহ পানি প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টিকারী অপরিকল্পিত অবকাঠামো ও স্থাপনা নির্মাণের কারণে আজকের এই বন্যা ও জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির ভয়াবহতা। এপ্রেক্ষিতে ফারাক্কাসহ অভিন্ন নদ-নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা, নদ-নদী খনন, বন্যা ও জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানসহ জরুরী দাবি-দাওয়ার ভিত্তিতে আন্দোলন গড়ে তুলতে কৃষক সমাজের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।

উল্লেখ্য, ১৯৮৪ সালে সারা বিল ডাকাতিয়ায় থোড় আসা ধান ডুবে পঁচে যায়। ৭৬ হাজার একর জমির জলাবদ্ধ মানুষকে বাঁচাবার সংগ্রামে কৃষক সংগ্রাম সমিতি মিটিং, মিছিল, ঘেরাও আন্দোলনের মাধ্যমে এলাকার সমস্ত কৃষক-জনতাকে এক মতের মধ্যে নিয়ে আসে, তা হলো জোয়ার-ভাটার মাধ্যমে জলাবদ্ধতা দূরীকরণ। সরকারের অপারগতায় তারা বসে থাকেনি, নিজেরা সমস্ত রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে পাকা রাস্তা কেটে দিয়ে পানি অপসারণের ব্যবস্থা করেছে। এক বছর গেছে আবার বর্ষার মৌসুমে সমস্ত বিল ডুবে গেছে। তারপর স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা এ অঞ্চলের মানুষের ঘাড়ে চেপে বসেছে। বাড়ী-ঘর, রাস্তা-ঘাট সব কিছু পানির নীচে তলিয়ে থেকেছে। এ সময়ও তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে ১৯৯০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর এক ঐতিহাসিক লড়াইয়ের বিজয় গাঁথা অর্জিত হয়েছিল। ১৪৪ ধারা ভেঙে জনতার বিজয় অর্জন এবং পরবর্তিতে পাকা রাস্তা কেটে চুড়ান্ত ভাবে জোয়ার-ভাটা চালু করা হয়। বিল ডাকাতিয়া আন্দোলনের চুড়ান্ত পর্বে ১৯৯০ সালে ঐতিহাসিক মহাসমাবেশ ১৮ সেপ্টেম্বরের আগের দিন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। মাস্টার ইমান আলী এবং সাইফুল¬াহ লস্কর’র নেতৃত্বে সেদিনের আন্দোলন ১৯৮৮ সালের ২২ জুলাই যশোরের কেশবপুরের ঐতিহাসিক ডহুরীর কৃষক অভ্যুত্থানের শিক্ষায় উজ্জীবিত হয়ে আন্দোলনকে স্তিমিত ও বিপদ গামী করার জন্য বিভিন্ন মহলের সকল পাঁয়তারা উপেক্ষা করে দৃঢ়চিত্তে জোয়ার-ভাটা কার্যকর করার সংগ্রামকে শেষ পর্যন্ত সফল করে। এরপর বিল বুড়–লি-বিল পাথরা, বিল পাঁজিয়াসহ যশোর-খুলনার অসংখ্য বিলে ওয়াপদা বাধ উচ্ছেদ করে জোয়ার-ভাটা সৃষ্টি করে। সর্বশেষ ১৯৯৭ সালের ২৯ অক্টোবর যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার আগরহাটি-ভায়না বিলে ওয়াপদার বিরুদ্ধে হাজার হাজার কৃষক-জনগণ কৃষক সংগ্রাম সমিতির নেতৃত্বে জোয়ার-ভাটা করে।

বার্তা প্রেরক
নিবিড় কান্তি বিশ্বাস
সাধারণ সম্পাদক
মোবাঃ ০১৯-১৯৮৬-১৬৪৬

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *