আগামী ২২ অক্টোবর রবিবার বিকাল ৩টায় খুলনা হাদিস পার্কে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের বিভাগীয় সমাবেশ সফল করুন
► রূপপুর পারমাণবিক ও রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ সকল জাতীয় ও জনস্বার্থ বিরোধী চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক বাতিল ও বন্যা, জলাবদ্ধতা তথা প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে মুক্তির দাবিতে সংগ্রাম বেগবান করুন।
► রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠিকে নিয়ে ষড়যন্ত্র উন্মোচন ও তাদের ওপর স্বৈরাচারী মিয়ানমার সরকারের গণহত্যাসহ বর্বর নির্যাতন বন্ধ, আশ্রয়, ত্রাণ, চিকিৎসা ও নিরাপদে মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনে সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিতে সোচ্চার হোন, সাম্রাজ্যবাদী অন্যায় যুদ্ধে বাংলাদেশকে সম্পৃক্ত করার তৎপরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।
► চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমানোসহ জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট ঘোষিত ১৩ দফার ভিত্তিতে আন্দোলন গড়ে তুলুন, শ্রমিক-কৃষক-জনগণের রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধান প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বেগবান করুন।
সংগ্রামী সাথী ও বন্ধুগণ
জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের পক্ষ থেকে সংগ্রামী শুভেচ্ছা। দেশ আজ প্রতিবেশি মিয়ানমারের প্রায় দশ লক্ষাধিক নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। এমনিতেই চলতি বছরে দেশে মার্চের শেষে পাহাড়ী ঢল ও অকাল বন্যা, এরপর ফসলে ছত্রাক (ব্লাস্ট) আক্রমণে, দেশের প্রায় ৪০টির অধিক জেলায় বন্যা ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জলাবদ্ধতায় কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, গোবাদি পশুখাদ্য ঘাটতিসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। এর ওপর চলতি মৌসুমে পাটের ফলন ভাল হলেও কৃষক পাটের মূল্য না পেয়ে দিশেহারা। শিল্প ক্ষেত্রে সারাদেশের ন্যায় খুলনা বিভাগে সরকারি পাটকলগুলি একের পর এক বন্ধ, উৎপাদন হ্রাস করে চলেছে, অন্যদিকে বেসরকারি পাটকল মালিকেরা একটা থেকে দুইটি এভাবে পাটকল বৃদ্ধি করে চলেছে। নৌ-যান, হোটেলসহ বিভিন্ন শিল্পে শ্রম আইন ও গেজেট বাস্তবায়নে সরকার-প্রশাসনের কোন কার্যকরি পদক্ষেপ নাই। শ্রমিকের ন্যূনতম বেঁচে থাকার মত মজুরির নিশ্চয়তা এখনো হয়নি। সারাদেশের ন্যায় চাঁদাবজি, টেন্ডারবাজি, নারী ও শিশু ধর্ষণ, নির্যাতন, হত্যা, গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড ঘটেই চলেছে। চাল, ডাল, পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। বিদ্যুৎ, গ্যাসের মূল্যসহ বাড়ি, গাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। রাস্তা-ঘাট ভেঙ্গে খানা-খন্দক হওয়ায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ফাঁরাক্কাসহ ভারত কর্তৃক উজানের ৫৪টি অভিন্ন নদ-নদীতে বাঁধ ও গ্রোয়েন নির্মাণের প্রভাবে পদ্মা অববাহিকার নদ-নদীতে বর্ষা মৌসুমে ভাঙ্গন ও শুষ্ক মৌসুমে নাব্যতা সংকট তীব্রতর হয়ে ওঠে। এ অঞ্চলের জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণও উজানের মিঠা পানি না পেয়ে নদ-নদীর নাব্যতা বিনষ্ট হওয়া ও সমুদ্র থেকে লবন পানিসহ পলি দ্বারা নদ-নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে পানি নিষ্কাশনের তীব্র সমস্যা সৃষ্টি হয়। যা এ অঞ্চলে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করেছে যার অন্যতম ‘ভবদহ জলাবদ্ধতা’। এর ওপর রয়েছে সুন্দরবন বিনাশকারী বাগেরহাটের রামপালে কয়লা ভিত্তিক পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংসের অপতৎপরতা। এর পাশাপাশি রয়েছে পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের বিস্তীর্ণ জনপদ ও পরিবেশ বিধ্বংসী জাতীয় ও জনস্বার্থ বিরোধী তৎপরতা। এখানে উল্লেখ্য, বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে আমাদের দেশসহ গোটা বিশ্বে।
সংগ্রামী সাথীরা
আমাদের সংগঠন শ্রমিক-কৃষক-জনগণের সংবিধান, রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য জন্মলগ্ন থেকে তৎপরতা চালিয়ে আসছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রশ্নে বিচার বিভাগ ও শাসন বিভাগের বিরোধ প্রকাশ্য রূপ পেয়েছে যা প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতির নানা বক্তব্যে প্রতিভাত হয়। গত ৩ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার হাইকোর্টের রায় ঐক্যমতের ভিত্তিতে বহাল রেখে সরকারপক্ষের আপিল খারিজ করেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর পর্যবেক্ষণে “সবকিছুর ব্যক্তিকরণের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থে একটি ‘ভুয়া ও মেকি গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা”, “সংসদ একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত”, “ রাজনীতি এখন বাণিজ্যে পরিণত”, “ সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে সাংসদেরা দলের হাইকমান্ডের কাছে জিম্মি”, “ক্ষমতার অপব্যবহার ও দাম্ভিকতা দেখানোর ক্ষেত্রে বাঁধা দেওয়ার মতো কোনো প্রতিষ্ঠান (ওয়াচডগ) নেই”, “ রাষ্ট্রক্ষমতা সাম্প্রতিক সময়ে গুটিকয়েক মানুষের একচ্ছত্র বিষয়ে পরিণত”- এ রকম নানা বিষয়ে অবতারণা দ্বারা নয়াউপনিবেশিক আধাসামন্তবাদী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্যে নতুন সংবিধান সভার প্রশ্নটিকে সামনে আনা হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের প্রচলিত সমাজব্যবস্থার অসারতা ঢাকার সকল অপকৌশলকে মোকাবেলা করতে শ্রমিক-কৃষক-জনগণের রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৩ দফা ভিত্তিক আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলার বিকল্প নাই।
সংগ্রামী বন্ধুগণ
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বের শিকার হয়ে আজ চরম অমানবিক জীবন যাপনে বাধ্য হচ্ছে। এর একদিকে রয়েছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, যারা মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদেরকে তাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধির হাতিয়ার হিসাবে কাজে লাগিয়ে সে দেশের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত অঞ্চলের পরিস্থিতিকে অশান্ত করে তুলেছে। আর অন্যদিকে রয়েছে মিয়ানমারের রাখাইন জনগোষ্ঠি, যাদের মদত দিয়ে চলেছে মিয়ানমার সরকার। এদিকে মিয়ানমার সরকারের সাথে জড়িত রয়েছে চীনের ভূমিকা। বস্তুত চীন মিয়ানমারের রাখাইন অধ্যুষিত অঞ্চলে সংঘাত বৃদ্ধি পেয়ে তার জন্য কোন সমস্যা তৈরি হোক, বা তার পরিকল্পিত মেরিটাইম সিল্ক রোড সংক্রান্ত সমস্যা তৈরি হোক তা সে চায় না। তাই সে মিয়ানমারের সরকারকে সমর্থন দিয়ে আসছে। মিয়ানমারের রাখাইন ও রোহিঙ্গাদের দ্বন্দ্বের পেছনে ক্রিয়াশীল রয়েছে বাজার ও প্রভাব বলয় বিস্তারের আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব। এমতাবস্থায় মিয়ানমারের স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে নিপীড়িত-নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগণের পাশে দাঁড়াতে হবে। রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর লোক যাতে ভয়-ভীতি ছাড়া মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে রাখাইন রাজ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতে জাতিগত নিপীড়ন বন্ধ ও তাদের নাগরিকত্ব প্রদানের জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার বিকল্প নাই। ১৯৮২ সালে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের ব্যাপারে যে আইনই করে থাকুক না কেন, সংশ্লিষ্ট সকল মহল অবগত আছে যে, ১৯৭৭ সালে যে ২ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল, ১৯৭৮ সালে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিক চুক্তির অধীনে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নিজ নাগরিক হিসেবে মেনেই বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। আজ মিয়ানমারসহ বিশ্বের দেশে দেশে জাতিগত নিপীড়নের অবসান ঘটানোর জন্যে প্রয়োজন হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদ আমলা দালালপুঁজি বিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামকে আরো বেগবান করা।
সংগ্রামী সাথীগণ,
বাংলাদেশের শ্রমিক-কৃষক-জনগণ সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনায় ক্ষমতার পালা বদলের খেলায় জিম্মি। সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের শোষণ-শাসনে শৃঙ্খলিত জনগণ গভীর উদ্বেগ ও উৎকন্ঠায় দিনাতিপাত করছেন। তারা এই দুঃসহ শোষণ-লুন্ঠন ও নৈরাজ্যিক অবস্থা থেকে মুক্তি চান। এ সময়ে সংলাপ ও সমঝোতার মধ্য দিয়ে নির্বাচন; সমঝোতাবিহীন একক নির্বাচন বা এতে প্রধান বিরোধী দলকে আসতে বাধ্য করা ইত্যাদি কর্মসূচির মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করে তত্ত্বাবধায়ক বা বিকল্প নির্বাচনকালীন সরকার; সংঘাতজনিত পরিস্থিতিতে সামরিক সরকার ইত্যাদি বিভিন্ন সম্ভাবনার দিক সামনে রয়েছে। সাম্রাজ্যবাদের এক দালালের পরিবর্তে আরেক দালাল এবং এক সাম্রাজ্যবাদের পরিবর্তে আরেক সাম্রাজ্যবাদ আসলে জনগণের কোন লাভ নেই। জনগণের মুক্তির পথ হল, জনগণের তিন শত্রু সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও আমলা-দালালপুঁজি এবং তাদের স্বার্থরক্ষাকারী স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে পরিবর্তন সাধন করে শ্রমিক-কৃষক-জনগণের রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধান প্রতিষ্ঠা করা- এ ভিন্ন মুক্তির বিকল্প নেই। তাই আসুন সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালাল এবং স্বৈরাচারী সরকার বিরোধী সকল সংগঠন, শক্তি ও ব্যক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়ে ১৩ দফার ভিত্তিতে দূর্বার আন্দোলন-সংগ্রাম অগ্রসর করে অবসান ঘটাই সকল দাঙ্গা-হাঙ্গামা, জাতিগত, সম্প্রদায়গত বিরোধের এবং প্রতিষ্ঠা করি জাতীয় গণতান্ত্রিক সমাজ।
তারিখ: ১ অক্টোবর, ২০১৭
সংগ্রামী অভিনন্দনসহ
জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট
কেন্দ্রীয় কমিটি
৮ বি বি এভিনিউ (৩য় তলা) গুলিস্তান, ঢাকা থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত