সংবাদ বিজ্ঞপ্তি তারিখঃ ১৪ অক্টোবর, ২০১৭
কমরেড অজয় ভট্টাচার্য’র স্মরণসভায় বক্তারা বলেন
সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদ আমলা দালাল পুঁজি বিরোধী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে বেগবান করার মধ্য দিয়েই কমরেড অজয় ভট্টাচার্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হবে।
ঐতিহাসিক নানকার বিদ্রোহের সংগঠক, সাম্রাজ্যবাদ-সামন্তবাদ বিরোধী কমিউনিস্ট বিপ্লবী নেতা কমরেড অজয় ভট্টাচার্যের ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী পালনের উপলক্ষ্যে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-NDFসিলেট জেলা শাখার পক্ষ থেকে গতকাল ১৩ অক্টোবর ’১৭ সকাল ৮.০০ টায় সিলেট মহানগরীর চালিবন্দর শ্মশানে কমরেড অজয় ভট্টচার্যের শেষকৃত্যস্থলে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়েছে এবং প্রয়াত নেতার স্মরণে সন্ধ্যা ৭.০০ টায় বন্দর বাজারস্থ জেলা কার্যালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন NDF সিলেট জেলা শাখার সভাপতি এডভোকেট কুমার চন্দ্র রায়। প্রয়াত নেতার স্মরণে আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ জেলা শাখার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রমজান আলী পটু, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সম্পাদক ইমদাদুল হক ইমন জাতীয় ছাত্রদল শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আল আমিন তালুকদার ও সাংগঠনিক সম্পাদক রুপেল চাকমা, সিলেট শহর পূর্বাঞ্চল শাখার আহবায়ক আঃ সালাম, মালনীছড়া রাবার শ্রমিক সংঘের সভাপতি জয় মাহাত্ম কুর্মী, স’মিল শ্রমিক সংঘের সিলেট বিভাগীয় কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন, সিলেট জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ছাদেক মিয়া ও সদস্য ময়না মিয়া, সিলেট জেলা প্রেস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক একে আজাদ সরকার প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ছাত্রাবস্থায় কমরেড অজয় ভট্টাচার্য কুলাউড়া কৃষক বিদ্রোহ এবং ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৩৫-৩৬ সালে ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের সংস্পর্শে আসেন। ১৯৩৬ সালে সিলেটে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির শাখা গঠিত হলে তিনি পার্টির রাজনৈতিক নেতৃত্বে পরিচালিত সর্বভারতীয় ছাত্র ফেডারেশনের সুরমা উপত্যকা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও কৃষক সভা কাছাড় জেলার সহ-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৩৭ সালে অজয় ভট্টাচার্য ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। ১৯৪০ সাল থেকে তিনি পার্টির সার্বক্ষণিক কর্মী হিসেবে আত্মগোপনে থেকে বিপ্লবী কর্মকান্ড পরিচালনা করেন। ১৯৪১ সালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টি সিলেট জেলা কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৮ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির দ্বিতীয় কংগ্রেসের ডেলিগেট নির্বাচিত হন। অজয় ভট্টাচার্য সিলেটের ঐতিহাসিক নানকার বিদ্রোহে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী নানকার বিদ্রোহের প্রাণকেন্দ্র ছিল লাউতা বাহাদুরপুর। ১৯৪৮ সালের মে মাসে গ্রেফতারের পূর্ব পর্যন্ত লাউতা বাহাদুরপুর কেন্দ্রিক পঁয়তাল্লিশ সদস্য বিশিষ্ট নানকার আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালনা কমিটির সম্পাদক ছিলেন তিনি।
ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে তিনি মোট সাতবার কারাবন্দি হন। বিশ শতকের পঞ্চাশের দশকে তিনি কারাগারে থেকেই কমরেড আব্দুল হকের সাথে সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা ক্রুশ্চেভ সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেন। বিশ শতকের ষাটের দশকে আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনে ক্রুশ্চেভতত্ত্ব কেন্দ্রিক মহাবিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি বিভক্ত হয়। ১৯৬৭ সালে পার্টির চতুর্থ কংগ্রেসে গড়ে ওঠে পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) [ইপিসিপি(এম-এল)]। তিনি এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। একজন অভিজ্ঞ প্রবীণ বিপ্লবী নেতা হিসেবে তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা, জ্ঞান, পরামর্শ, মতামত ও সহযোগিতা দিয়ে আমৃত্যু পার্টিতে ভূমিকা পালন করেন। বিশ শতকের নববইয়ের দশকের শুরুতে সোভিয়েত রাশিয়া ও পূর্ব-ইউরোপের দেশসমূহের পতনের সময় তিনি সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। এ সময় তিনি ছদ্মনাম পরিত্যাগ করে স্বনামে লিখতে শুরু করেন। নানকার বিদ্রোহের ঘটনাবলী, কৃষক আন্দোলনের খুঁটিনাটি চিত্র এবং তৎকালীন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ ও সামগ্রিক মূল্যায়ন তুলে ধরে অজয় ভট্টাচার্য রচনা করেন ‘নানকার বিদ্রোহ’ নামক অমূল্য গ্রন্থ, যা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে রেফারেন্স বই হিসাবে গৃহীত হয়েছে। এছাড়াও তার রচিত গল্প, প্রবন্ধ, রাজনৈতিক নিবন্ধ ও স্মৃতিচারণ মিলিয়ে পত্র-পত্রিকায় ১২৫টি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। তার প্রকাশিত আরো উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে ‘নীড়’, ‘ইতিহাসের ছেঁড়াপাতা’, উপন্যাস ‘এঘর ওঘর’, ‘অরণ্যানী’, ‘কুলিমেম’, ‘বাতাসীর মা‘, ‘সুবল মাঝির ঘাট’, ‘রাজনগর’ প্রভৃতি।
বক্তারা বলেন, পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থায় অর্থনৈতিক সংকট তীব্রতর হয়ে মহামন্দার দিকে ধাবিত হচ্ছে। এর থেকে পরিত্রাণে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো পুঁজি ও শক্তি অনুপাতে বাজার ও প্রভাব বলয় বন্টন-পুনর্বন্টন ও সর্বোচ্চ মুনাফার লক্ষ্যে দেশে দেশে একচেটিয়া লগ্নিপুঁজির বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও নিয়ন্ত্রণ জোরদার করার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। এ প্রেক্ষিতে চলছে বাণিজ্যযুদ্ধ, মুদ্রাযুদ্ধ, স্থানীয়যুদ্ধ এবং বিশ্বযুদ্ধের প্রস্ততি। দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান আঞ্চলিক শক্তি নয়া উপনিবেশিক ভারতকে কেন্দ্র করে এতদাঞ্চলে আন্ত:সাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব সুতীব্র। আন্ত:সাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বে এতদাঞ্চলকে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক করিডোর, টিকফা, সোফা, টিপিপি, টিটিআইপি, জাপানের বে-অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট(বিগ-বি) ইত্যাদি চুক্তি করে অগ্রসর হচ্ছে। অন্যদিকে চীন-রাশিয়া সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (SCO), BRICS, RIC, BCIM করিডোর ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলায় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা ক্রমেই জোরদার হচ্ছে।
বাংলাদেশ একটি নয়া উপনিবেশিক দেশ হওয়ায় শুরু থেকে অদ্যাবধি প্রতিটি সরকারই অনেক জাতীয় স্বার্থ বিরোধী প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে যা সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থ রক্ষা করে চলেছে। ক্ষমতায় আসা বা টিকে থাকার জন্য আমাদের দেশের সরকারগুলো সাম্রাজ্যবাদের র্স্বাথকে প্রাধান্য দিয়ে চলে। রামপুর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ বিভিন্ন চুক্তি সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থেই করা হচ্ছে। তাই আজ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী দেশপ্রেমিক শক্তিকে জাতীয় ও জনস্বার্থ বিরোধী সকল পদক্ষেপের বিরুদ্ধে এবং বাংলাদেশকে নিয়ে সাম্রাজ্যবাদীদের সকল অপতৎপরতা রুখে দাঁড়াতে হবে। অগ্রসর করতে হবে সকল সাম্রাজ্যবাদ ও দালালদের সৃষ্ট রাষ্ট্রীয় ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এক্যবদ্ধ আন্দোলন। প্রতিষ্ঠা করতে হবে সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদ আমলা দালাল পুঁজি বিরোধী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা এবং এর মধ্য দিয়েই কমরেড অজয় ভট্টাচার্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হবে।
বার্তাপ্রেরক
জয়দীপ দাস চম্পু 01673-983 296
সাধারণ সম্পাদক
জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-NDF
সিলেট জেলা শাখা