এশিয়ায় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সামরিক ও সামগ্রিক রণনীতির অংশ হিসাবে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর মোহনায় মার্কিনের ব্যক্তি মালিকানাধীন (এস.এস.এ কোম্পানী) কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ, গ্যাস রপ্তানী ও মার্কিন সামরিক ঘাটি নির্মানের পায়তারার তাৎপর্য শীর্ষক- ”সেমিনার”

19749

এশিয়ায় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সামরিক ও সামগ্রিক রণনীতির অংশ হিসাবে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর মোহনায় মার্কিনের ব্যক্তি মালিকানাধীন (এস.এস.এ কোম্পানী) কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ, গ্যাস রপ্তানী ও মার্কিন সামরিক ঘাটি নির্মানের পায়তারার তাৎপর্য প্রসঙ্গে।

”সেমিনার”

চট্টগ্রাম বাংলাদেশের বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর। এছাড়াও রয়েছে পশুর নদীর তীরে মংলা বন্দর। বাংলাদেশ হিমালয়ের পাদদেশে গঙ্গা (পদ্মা)-ব্রক্ষ্মপুত্র(যমুনা)-মেঘনা-কর্ণফুলী ইত্যাদি প্রধান নদীসহ অসংখ্য নদী প্রবাহিত গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ। প্রাকৃতিক ও ভৌগলিকভাবে দেশের অভ্যন্তরে নদীপথের যোগাযোগের জাল এবং তার সাথে বঙ্গোপসাগরের মাধ্যমে গভীর সমুদ্র তথা বৈদেশিক যোগাযোগের এই অপূর্ব সুযোগ বাংলাদেশের গুরুত্বকে বিশ্বদরবারে সামনে নিয়ে আসছে।

সুদূর অতীত থেকে বিশেষত মধ্যযুগে আরব বণিকদের উপকূলীয় সামুদ্রিক যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রক্রিয়ায় বিদেশী বণিকদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ দ্বার হিসাবে চট্টগ্রাম বন্দর গড়ে উঠার যাত্রা শুরু হিসাবে ধরা যায়। বঙ্গোপসাগরের সাথে সংযোগকারী প্রধান প্রধান নদীর মাধ্যমে বিদেশী বণিক ও জলদস্যুরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকলেও আনুষ্ঠানিক বৈদেশিক ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম দেশের একমাত্র সমুদ্র বন্দর হিসাবে বিবেচিত হয়। বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ তাদের শোষণ-লুন্ঠন জোরদার করে ভারতবর্ষ ও বঙ্গদেশ থেকে বৃটেনে সম্পদ পাচার ও তাদের তৈরি পণ্য  এদেশে বিক্রি করার জন্য বঙ্গদেশে কলিকাতা বন্দর ও নগর গড়ে তুললেও পূর্ববঙ্গ ও উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য গড়ে তোলে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর। এতদ্বাঞ্চলের আভ্যন্তরীণ নৌ-যোগাযোগ তথা ষ্টিমার সার্ভিস এবং রেল যোগাযোগ সমন্বয়ে বাংলাদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারতের সম্পদাদি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ এই চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে স্বদেশে এবং বিশ্ব বাজারে পাচার করেছে। ঔপনিবেশিক ব্যবস্থায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে চট্টগ্রামের বীর জনগণসহ বঙ্গদেশ ও ভারতবর্ষের শ্রমিক-কৃষক-জনগণের লড়াই-সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তরকালে ১৯৪৭ সালে সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনায় সাম্প্রদায়িক প্রতিক্রিয়াশীল দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে নয়া ঔপনিবেশিক পাকিস্তান ও ভারতীয় ইউনিয়ন সৃষ্টি হয়।

দেশ বিভাগের পর পাকিস্তানের প্রধান বন্দর হিসাবে করাচিকে এবং দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর হিসাবে চট্টগ্রামকে গণ্য করা হতো।   পাকিস্তান আমলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক)-এর সরাসরি অপারেশনাল নিয়ন্ত্রণাধীন মূল বন্দর এলাকায় ১৭টি জেটি ছিল।তার মধ্যে ১-১৩নং জেটি ছিল  অবিচ্ছিন্নভাবে এক নাগাড়ে  নদীর  তীর বরাবর নির্মিত ।আর ১৪,১৫,ও ১৬ নং জেটিগুলি ছিল অস্থায়ী ও বিচ্ছিন্নভাবে নিঊমুরিং এলাকায় । ১৭নং জেটি বিস্ফোরক ও সামরিক সরঞ্জামাদি হ্যান্ডিলিং-এর জেটি হিসাবে ব্যবহৃত হতো। এছাড়া সিমেন্ট, ক্লিংকার, ফুডগ্রেইন, সাইলো জেটি ও অন্যান্য তেল স্থাপনাসমূহেরও জেটি ছিল। এই সময়কালে পূর্ব পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান আমদানি-রফতানি চাহিদার  প্রেক্ষিতে খুলনার পশুর নদীর তীরে প্রথমে ‘চালনা সমুদ্র বন্দর’ এবং পরবর্তীতে তাকে মংলায় স্থানান্তরিত করে ’মংলা সমুদ্র বন্দর’ প্রতিষ্ঠিত করা হয়। এই সকল বন্দরের মাধ্যমে ৬০- এর দশকে সোনালী আঁশ  খ্যাত পাট রফতানি  উল্লেখযোগ্যভাবে সামনে আসে । পাকিস্তান আমলেই বিশ্বের বৃহত্তম পাটকল আদমজীসহ ৭৭টি পাটকল, কিছু বস্ত্রকল ও অন্যান্য ছোটখাটো শিল্প কারখানা গড়ে ওঠার মধ্য দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে অল্প হলেও যে শিল্প গড়ে ওঠে  তার প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের  গুরুত্ব বৃদ্ধি পায় । সে কারণে বন্দরের উন্নয়ন সীমিত হলেও লক্ষণীয় ছিল। সে সময়ে কর্ণফুলি নদীর নাব্যতা রক্ষায় নদী খননের জন্য ‘পতেঙ্গা’ ও ‘কর্ণফুলী’ নামে দুটি ড্রেজার ছিল।

পাকিস্তান আমলে পূর্ব পাকিস্তানের শিল্প- কৃষি,আমদানি-রফতানি তথা অর্থনৈতিক অবস্থার অংশ হিসাবে  চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দরের অবস্থা বিবেচিত হয়। সে কারণে তৎকালীন অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক দিক সামনে রাখলে দেখা যায় পাকিস্তান ছিল একটি নয়া ঔপনিবেশিক- আধাসামন্তবাদী দেশ। এদেশে ক্ষমতায় ছিল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দালাল মুসলিম লীগ সরকার। পাকিস্তানে সাম্রাজ্যবাদের দালালদের  মধ্যে অবাঙ্গালী দালাল বুর্জোয়ারা ক্ষমতায় থাকায় পূর্ব পাকিস্তানে বাঙ্গালী সামন্ত-আমলা মুৎসুদ্দী বুর্জোয়া শ্রেণীর দ্বন্দ্ব সামনে আসে। সাম্রাজ্যবাদের দালালদের মধ্যে ক্ষমতার প্রশ্নে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের  দ্বন্দ্ব হিসাবে আসে।আওয়ামীলীগ উগ্র বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদকে ব্যবহার করে ভাষা আন্দোলন,স্বায়ত্ত্বশাসনের আন্দোলন নামে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন  অগ্রসর  করে চলে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দালাল আওয়ামী লীগ প্রভু  সাম্রাজ্যবাদীদের  পরিকল্পনায় ৬দফা দাবীতে তাদের আন্দোলন অগ্রসর করে। এ সময়কালে বিশ্ব আধিপত্য, প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত দুই পরাশক্তি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও সোভিয়েত সামাজিক  সাম্রাজ্যবাদের  প্রতিদ্বন্দ্বিতা  তীব্র  থেকে তীব্রতর হয়। ১৯৭১সালে যুদ্ধের সময়ে ৯ আগষ্ট সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে নয়া ঔপনিবেশিক- আধাসামন্তবাদী ভারতের ২০ বছরের সামরিক চুক্তির মধ্য দিয়ে এতদ্বাঞ্চলে  আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী শক্তি সম্পর্কের (Balance of power) গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সাধিত হয়। ১৯৭১ সালে সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ ভারতের শাসকগোষ্ঠীর সাথে সমন্বিত হয়ে বাঙ্গালী জাতিসত্ত্বার আত্ম-নিয়ন্ত্রণাধিকারের আকাঙ্খাকে ব্যবহার করে উগ্র বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদকে সামনে রেখে আগ্রাসন চালায়। এর বিরুদ্ধে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ স্বীয় প্রভাব বলয় রক্ষার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দর অভিমুখে ৭ম নৌ-বহর প্রেরণ করে। কিন্তু তা চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানোর আগেই ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজীর নেতৃত্বে পাক বাহিনী ভারতীয় বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার জেনারেল অরোরার কাছে আত্মসমর্পন করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়।

বাংলাদেশের জন্মলগ্নেই চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব সামনে আসে। ১৯৭১-এর যুদ্ধ বিধ্বস্ত বন্দর মেরামত, ডুবে যাওয়া জাহাজ, পেতে রাখা মাইন অপসারণের প্রশ্ন সামনে আসে। যুদ্ধকালে ১০নং শেড বিধ্বস্ত হয় কিন্তু তা আজও পুনঃনির্মাণ হয়নি। যুদ্ধোত্তরকালে চট্টগ্রাম বন্দরকে ব্যবহার উপযোগী করার জন্য সোভিয়েত নৌ-বাহিনী ভূমিকা নেয়। এরপর চট্টগ্রাম বন্দর পুনরায় জাতীয় অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক নৌ-যোগাযোগে গুরুত্বের সাথে সামনে আসে। চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে ওঠে বাংলাদেশের প্রধান সামুদ্রিক বন্দর। বাংলাদেশের মোট আমদানির প্রায় ৮০% এবং রফতানির ৭৫% এই বন্দরের মাধ্যমে করা হয়। এসব ঘটনাবলীর মধ্যদিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক গুরুত্ব ছাড়াও এর সামরিক গুরুত্ব প্রতিফলিত হয়।

বাংলাদেশ সৃষ্টির পর চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দরের উন্নয়ন তৎপরতার বিষয়টা সামনে আসে। শেখ মুজিব-এর শাসনামলে চট্টগ্রাম বন্দরকে ব্যবহার উপযোগী করা এবং মংলা বন্দরে স্থায়ী জেটি নির্মাণের উদ্যোগ ছাড়া তেমন কোন উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ দেখা যায় না। ১৯৭৫ সনের ১৫ আগষ্ট মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের পরিকল্পনায় মুজিব হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের প্রাধান্যের বদলে বাংলাদেশে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ক্ষমতায় আসীন হয় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দালাল খন্দকার মোস্তাক আহমেদ সরকারের প্রক্রিয়ায় জিয়াউর রহমানের সরকার। এ সময়কালে বিশ্বব্যাপী নৌপথে কন্টেইনারের মাধ্যমে মালামাল পরিবহন ব্যবস্থার প্রেক্ষিতে ১৯৭৭ সালে আমাদের দেশে তা শুরু হয়। কন্টেইনারের মাধ্যমে মালামাল পরিবহন বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) ১৯৯২ সালে ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৫০ মিটার দীর্ঘ জেটি  ও পশ্চাদপদ সুবিধাসহ বাৎসরিক ৯০ হাজার টি ই ইউ এস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ক্ষমতা সম্পন্ন কন্টেইনার ও জেটি নির্মান সম্পন্ন করে। পরবর্তীকালে বর্ধিত কন্টেইনার সমস্যা মোকাবেলায়  মহেশখালের উপর সেতু নির্মান পূর্বক  মূল বন্দর এলাকায় (অর্থাৎ ১-১৩ নং জেটি এলাকায়) বেশ কিছু কন্টেইনার ইয়ার্ড নির্মান করে।

একটি দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে বন্দরের গুরুত্ব অপরিসীম। এ প্রেক্ষিতে জনগণ ও জাতীয় স্বার্থে সমন্বিত পরিকল্পনায় বন্দরসমূহের অব্যাহত উন্নয়ন সাধন ও আধুনিকীকরণ করতে হয়। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদের দালাল সরকারসমূহ তা না করে সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনা অগ্রসর করে চলে। ১৯৯১ সালের ঘুর্নিঝড়ের সময় ১৪, ১৫, ১৬ ও ১৭ নং জেটি বিধ্বস্ত হয়। কিন্তু তা আজও পুননির্মান করা হয়নি। ১৫০ টন মাল খালাসের ক্ষমতা সম্পন্ন ভাসমান ক্রেন “শক্তিমান” আমানত শাহ সেতুতে ধাক্কা লেগে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। অথচ সেই শূণ্যতা পূরণ হয়নি। বর্তমানে ড্রাই ডকের ৫০ ও ৭৫ টন মাল খালাসের ক্ষমতা সম্পন্ন ২টা ক্রেন দিয়ে ভারী ওজনের মালামাল খালাস করা হচ্ছে। পাকিস্তান আমলের ‘পতেঙ্গা’ ও ‘কর্ণফুলী’র ড্রেজার দুটি যথাক্রমে পুরাতন হয়ে ও ঝড়ে বিধ্বস্ত হলে সেগুলি নীলামে বিক্রি করা হয়। অথচ সেই শূন্যতা পূরণে নতুন ড্রেজার বহর সংযোজিত হয়নি। বর্তমানে ‘খনক’ নামক ড্রেজার দিয়ে কর্ণফুলী নদীর মধ্যবর্তী জায়গা খনন করা যায়। কিন্তু তা দিয়ে জেটির সম্মুখ ভাগ খনন করা যায় না। এ সমস্যা সমাধানে ১টি গ্রেভ হোপার ড্রেজার প্রয়োজন হলেও তা অদ্যবধি সংগ্রহ করা হয়নি। সরকার ১৯৮৪ সাল থেকে ২৩৫ কোটি টাকা যার মধ্যে ১৯৯৯-২০০০ সালেই ১৫০ কোটি টাকা বন্দরের লভ্যাংশ থেকে সরকারী তহবিলে নিয়ে গেলেও চট্টগ্রাম বন্দর উন্নয়নে কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করেনি। ব্রিটিশ আমলে সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে ও পরিকল্পনায় কর্ণফুলি নদীর উপর কালুরঘাট সেতু নির্মাণের ফলে চাকতাই এলাকা পর্যন্ত নদীর নাব্যতা হ্রাস পায়। আর বাংলাদেশ আমলে সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে ও পরিকল্পনায় কর্ণফুলী নদীর উপর শাহ আমানত সেতু নির্মাণের ফলে বর্তমানে ১-১৩নং জেটিতে, বন্দরের চ্যানেলসহ কর্ণফুলী নদীতে পানির গভীরতা হ্রাস পেয়েছে। অথচ এই সেতু দিয়ে এখন স্বাভাবিক যান চলাচল করা সম্ভব হচ্ছেনা। বর্তমানে পূর্ণ জোয়ার ছাড়া অন্যান্য সময় জেটিতে বিদেশী জাহাজ আগমন ও বহির্গমনে অসুবিধা হচ্ছে। বর্তমান সাম্রাজ্যবাদের দালাল জোট সরকার আমলে শাহ আমানত সেতুর ১০০ মিটার উপরে আরেকটি সেতু নির্মাণের যে উদ্যোগ শুরু হয়েছে তাতে বিদ্যমান সমস্যা আরো বৃদ্ধি পাবে। নদীর মোহনায় বন্দর নির্মাণ হলে চ্যানেলে পলি জমে নাব্যতা নষ্ট হবে। মোহনায় নদীতে জাহাজ বাঁধার কারনে নদীতে জোয়ারের বিঘ্ন ঘটবে। ফলে নদীতে পলি জমাট বেঁধে ভরাট হবে। তা হলে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হতে পারে। প্রস্তাবিত বন্দরে জাহাজ ভিড়িয়ে পুরো জাহাজ ঘুরানোর ফলে ঐ সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হবে। এই বন্দরের জেটিতে জাহাজ বাঁধলে ও মাল খালাসে বার্জ বাঁধলে নদীর প্রবেশ দ্বার সরু হয়ে যাবে। জলোচ্ছাস বা সাইক্লোনে প্রস্তাবিত বন্দরে জাহাজ ও জেটির মারাত্মক ক্ষতি হলে মূল বন্দরের চ্যানেল বন্ধ হয়ে যাবে। এর ফলে এতদ্বাঞ্চলের মারাত্মক প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা (Ecological Imbalance) সৃষ্টি হবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, লুইস বার্জার, মুনস্যাল, ডেনিস হাইড্রোলিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও মট ম্যাগডোনাল্ড ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান ইতোপূর্বে নদীর মোহনায় কোন পোর্ট নির্মানের পক্ষে মতামত দেয়নি।

সমুদ্র বন্দর আমদানি-রফতানি তথা বৈদেশিক বাণিজ্য এবং আন্তর্জাতিক নৌ-যোগাযোগের মাধ্যমই শুধু নয় বরং জাতীয় আয় বৃদ্ধির একটি উৎসও বটে। কিন্তু বাংলাদেশের বন্দরসমূহে বিরাজ করছে চরম অব্যবস্থাপনা ও দূর্নীতি। এর সাথে দালাল সরকার, বন্দর কর্তৃপক্ষই শুধু জড়িত তা নয় বরং সাম্রাজ্যবাদের দালাল শোষকগোষ্ঠীর রাজনৈতিক দলসমূহের ট্রেড ইউনিয়ন ও দালাল শ্রমিক নেতৃবৃন্দও জড়িত। বন্দরের উন্নয়ন, দূর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ইত্যাদির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে শ্রমিক শ্রেণীর বিপ্লবী নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন-সংগ্রাম। পাকিস্তান আমলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে শ্রমিক আন্দোলনে বামপন্থী প্রগতিশীল বিপ্লবী নেতৃত্বের প্রভাব থাকায় সে সময়ে গড়ে ওঠে কিছু ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলন। কিন্তু বাংলাদেশ সৃষ্টির পর শ্রমিক অঙ্গনে প্রগতিশীল বামপন্থী-বিপ্লবী শক্তির গণসংগঠন বর্জনের ত্রুটি-বিচ্যুতি ও দূর্বলতার কারণে মালিক শ্রেণী-শোষকগোষ্ঠী তথা সরকারের স্বার্থরক্ষাকারী ট্রেড ইউনিয়ন ও তাদের দালাল শ্রমিক নেতারা শ্রমিক অঙ্গনে প্রাধান্যকারী ও নিয়ন্ত্রণকারী হওয়ায় শ্রমিক শ্রেণী জিম্মি হয়ে পড়ে এবং শ্রমিকের স্বার্থ রক্ষার আন্দোলন মূলত অনুপস্থিত হয়ে যায়। সরকার ও শোষকগোষ্ঠীর সমর্থক দালাল ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রমিক নেতারা স্বীয় দলীয় স্বার্থ ও ব্যক্তি নেতৃত্ব রক্ষার জন্য মাঝেমধ্যে যে আন্দোলন করে তা লোক দেখানো এবং শ্রমিক শ্রেণী ও জনগণকে বিভ্রান্ত করা ছাড়া আর কিছুই নয়।

বন্ধুগণ,

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর মোহনায় মার্কিন প্রাইভেট কন্টেইনার পোর্ট নির্মাণের বিষয়টি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়- এর পিছনে কার্যকরী থাকে ‘৯০ দশকের শুরুতে বিশ্বব্যাপি রাজনৈতিক পরিস্থিতি। ১৯৯০ সালে সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের প্রভাবাধীন পূর্ব ইউরোপের পতনের প্রক্রিয়ায় ১৯৯১ সালের ডিসেম্বর মাসে পরাশক্তি হিসাবে সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের পতন ঘটে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিশ্বের একক পরাশক্তি হিসাবে সামনে আসে। ১৯৯০ সালে ইরাকের কুয়েত দখলকে কেন্দ্র করে ইরাকের বিরুদ্ধে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে জোটের আগ্রাসন উল্লেখযোগ্য। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলে ঘুর্ণিঝড় আঘাত হানে। এ প্রেক্ষিতে মার্কিন নৌ-বাহিনী মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত এলাকায় ত্রাণকার্যে অংশগ্রহণ করার অজুহাতে চট্টগামের সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় অপারেশন সি-এঞ্জেল নামে তৎপরতা চালায়। এই তৎপরতা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং তা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বাংলাদেশে ঘাঁটি গড়ার পরিকল্পনার সাথে সম্পর্কিত। এরপর থেকে প্রায় প্রতি বছর মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ তার আগ্রাসী যুদ্ধ পরিকল্পনা ও যুদ্ধ উন্মাদনার প্রেক্ষিতে আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালানোর পর ২০০২ সালের জানুয়ারী মাসে উত্তর কোরিয়া, ইরান ও ইরাককে “শয়তানের অশুভ অক্ষ (Axis of evil)” হিসাবে চিহ্নিত করে বর্তমানে ইরাককে লক্ষ্য করে সামগ্রিক আগ্রাসী যুদ্ধ করার চুড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। তা ছাড়া সাম্প্রতিকালে ২০০২ সালের জুলাই মাসে ‘এক্সারসাইজ ব্যালান্স বাফেলো (exercise balance buffalow)’ নামে মাসব্যাপী মার্কিন-বাংলাদেশ যৌথ সামরিক মহড়া, আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রেক্ষিতে ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে রাজেন্দ্রপুরে মার্কিন নেতৃত্ব ১৫ দিনব্যাপী “শান্তির দূত” নামে ‘বহুজাতিক প্লাটুন মহড়া-২ (MPE-II)’ শুরু করা হয়। এতে ৬টি দেশ (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মঙ্গোলিয়া) প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করে এবং অন্যান্য কিছু দেশ পর্যবেক্ষক হিসাবে উপস্থিত থাকে। আবার, চট্টগ্রামে ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে সপ্তাহ ব্যাপী “মার্কিন সপ্তাহ” পালনের বিষয়টাও তাৎপর্যপূর্ণ। অধিকন্তু সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে অক্টোবরের প্রথম দিকে যে কোন সময় মার্কিন সপ্তম নৌ-বহরের কয়েকটি ফ্রিগেট বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে আসা ও মার্কিন সৈন্যদের চট্টগ্রাম শহরে প্রায় ৮ লক্ষ ডলার মূল্যের কেনাকাটা করা এবং সে প্রেক্ষিতে ৪ সেপ্টেম্বর ৩ সদস্যের সার্ভে টিমের চট্টগ্রাম এসে বিভিন্ন মহলের সাথে আলোচনা করা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এভাবে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ছলে-বলে কলা-কৌশলে সোফা চুক্তি ও বাংলাদেশে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি করার লক্ষ্যে সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়ে চলেছে। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সামরিক রণকৌশলগত গুরুত্ব দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্যাসিষ্ট জাপানী অগ্রযাত্রা প্রতিহত করায় বাংলাদেশের কক্সবাজার, চকোরিয়া, পতেঙ্গা, ফেনী, কুমিল্লা,  শমশের নগর, সিলেট ইত্যাদি বিমান বন্দর নির্মাণসহ ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ঘাঁটি স্থাপন করার বিষয়টি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত।

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মধ্যদিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সংঘঠিত পরিবর্তনের প্রভাব উপমহাদেশেও পড়ে। নয়া ঔপনিবেশিক-আধাসামন্তবাদী ভারতে সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের প্রাধান্যের বদলে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের অবস্থান আরো শক্তিশালী হয়। এ প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশে রুশ-ভারতের দালাল আওয়ামী লীগ মার্কিন-ভারতের দালালে পরিণত হয়। ফলে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দালাল হিসাবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পথ প্রশস্ত হয়। এমতাবস্থায় মার্কিনসহ সাম্রাজ্যবাদীরা নয়াঔপনিবেশিক ভারতকে দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান আঞ্চলিক শক্তি হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে ভারতকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ এশিয়া নিয়ন্ত্রণ করার পরিকল্পনায় অগ্রসর হয়। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ পারমাণবিক শক্তিধর ভারতের শাসকগোষ্ঠীকে ব্যবহার করতে চায় বৃহৎ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিতে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে অগ্রসরমান পুঁজিবাদী চীনের পাল্টা শক্তি (Counter balance) হিসাবে। সাথে সাথে অন্যান্য পথ-পন্থা, পদক্ষেপ-প্রক্রিয়া জারি রাখে। এশিয়ায় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের আধিপত্য, কর্তৃত্ব, শোষন-লুন্ঠন তীব্রতর করার লক্ষ্যে দূরপ্রাচ্যে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় তার সামরিক ঘাঁটি অব্যাহত রাখছে। ফিলিপাইনে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় ঘাঁটি উঠিয়ে নিতে বাধ্য হলেও বর্তমানে সন্ত্রাস দমনের নামে পরিদর্শনকারী বাহিনীর চুক্তির (Visiting forces agreement) মাধ্যমে যৌথ মহড়ার অজুহাতে সেখানে মার্কিন বাহিনী অবস্থান করছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ বন্দর সিঙ্গাপুরে মার্কিন নৌ-বাহিনী প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে। ভারত মহাসাগরে দিয়াগো-গর্সিয়ায় সামরিক ঘাঁটি বজায় রাখছে। মধ্যপ্রাচ্যে ইরাকের কুয়েত দখল উচ্ছেদের প্রেক্ষিতে মার্কিন নেতৃত্বে আগ্রাসী যুদ্ধের পর সৌদী আরব ও কুয়েতে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি স্থাপন এবং বর্তমানে ইয়েমেনে মার্কিন সৈন্য অবস্থান করছে। ২০০১ সালে আফগানিস্তানের কান্দাহারে এবং দক্ষিণ এশিয়ার পাকিস্তানে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি গাড়ে। ভারতের সাথে যৌথ সামরিক মহড়া করাসহ সামরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করার উদ্যোগ অব্যাহত রেখেছে। সে প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের বিষয়টা সামনে আসে।

বাংলাদেশের গ্যাস, সম্ভাব্য তেলসহ প্রাকৃতিক সম্পদ লুটপাট করার লক্ষ্যে মার্কিন ও ইউরোপের বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তৎপরতা জোরদার করে। ১৯৯৩ সালে বিএনপি’র খালেদা জিয়ার সরকার আমলে প্রথম দফা ব্রিডিং-এ ২৩টি ব্লকের মধ্যে ৮টা ব্লক বরাদ্দ দেওয়া হয় যার অধিকাংশ পায় মার্কিন কোম্পানি। ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে দ্বিতীয় দফা ব্রিডিং প্রক্রিয়ায় বাদবাকী গুরুত্বপূর্ণ ব্লকগুলো একইভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দকৃত ব্লক নিয়ে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সাথে জাতীয় স্বার্থ বিরোধী ও লুন্ঠনমূলক উৎপাদন বন্টন চুক্তি (PSC) স্বাক্ষর করা হয়। এই লুন্ঠনমূলক উৎপাদন বন্টন চুক্তি (PSC) অনুযায়ী বহুজাতিক কোম্পানিগুলো উৎপাদন খরচ অনেক বেশী দেখিয়ে তা পরিশোধ বাবদ উত্তোলিত গ্যাসের ৬০% নিয়ে যাচ্ছে। বাকী ৪০%-এর অর্ধেক অর্থাৎ ২০% বহুজাতিক কোম্পানী শেয়ার বাবদ নিলে সর্বমোট ৮০% পাচ্ছে বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানি। আর বাংলাদেশ পাচ্ছে মাত্র ২০%। তদুপরি বহুজাতিক কোম্পানির কাছ থেকে বাংলাদেশকে উচ্চমূল্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রায় গ্যাস কিনতে হবে। স্বল্পতম সময়ে লুটপাট সম্পন্ন করে সর্বোচ্চ মুনাফা করার লক্ষ্যে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো পাইপ লাইনে ভারতে গ্যাস রফতানির পাঁয়তারা জোরদার করে চলে। গ্যাস প্রশ্নে প্রবল গণবিরোধিতা ও জনমতের চাপে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার কৌশল অবলম্বন করে। তারা মুখে ৫০ বছরের মজুদ রেখে গ্যাস রফতানির কথা বললেও অধিকাংশ ব্লক বরাদ্দ দিয়ে পিএসসি (PSC) স্বাক্ষর করে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে যাতে গ্যাস কোম্পানিগুলো একযোগে গ্যাস উত্তোলন শুরু করলে সেই গ্যাস সরকার বৈদেশিক মুদ্রায় তা নিতে ব্যর্থ হয়ে রফতানি করতে বাধ্য হবে। মার্কিন নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনায় ক্ষমতাসীন বিএনপি’র নেতৃত্বে জোট সরকারও গ্যাস রফতানির লক্ষ্যে “গ্যাস মজুদ নিরূপণ ও ব্যবহার কমিটি” গঠন করে তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়ার কৌশল অবলম্বন করে চলেছে।

১৯৯৬ সালে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দালাল শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর মার্কিন সাম্রাজ্যবাদও তার সামগ্রিক পরিকল্পনার অংশ হিসাবে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর মোহনায় এবং ঢাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর দক্ষিণ তীরে পানগাঁও-এ দুটি কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ প্রেক্ষিতে মার্কিন ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানি এস এস এ (বা.) লিঃ [SSA (B.)L= Stevedouring service of America (Bangladesh Limited) কে ১৯৯৭ সালে ১৫ ডিসেম্বর পতেঙ্গায় প্রাইভেট পোর্ট নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়। এ প্রেক্ষিতে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ২৫ জানুয়ারী ২০০০ একটি কমিটি গঠন করে যা পরে ৭ আগষ্ট ২০০০ তারিখে পুনর্গঠন করা হয়। এই কমিটি এস এস এ (বাঃ) লিঃ-এর সাথে ৭৪টি সমঝোতা সভার মাধ্যমে একটি সম্মত চুক্তি প্রণয়নে সক্ষম হয়। বিশ্বব্যাংকের পরামর্শক ইনফ্রাষ্ট্রাকচার ইনভেষ্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন সেন্টার (IIFC),নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, বি আই ডব্লিউ টি এ-সহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো ১৫ মাস ধরে এই বৈঠক করে ১৯টি আর্টিকেল, ৮টি এনেক্সার এবং ১১টি সিডিউলসহ মোট ১৭০ পৃষ্ঠার এই চুক্তি তৈরি করে। সরকার-সংস্থা ও এস এস এ (বাঃ) লিঃ-এর মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিগুলি নিুরূপ ঃ-

১। বাংলাদেশ সরকার এবং এস এস এ (বাঃ) লিঃ-এর মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন চুক্তি।

২। ভূমি ইজারা চুক্তি: চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণের জন্য কর্তৃপক্ষের সাথে নবায়নযোগ্য ৩০ বছর মেয়াদী ভূমি ইজারা চুক্তি।

৩। অপারেটিং চুক্তি: চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও এস এস এ (বাঃ) লিঃ-এর মধ্যে অপারেশন রিলেশনশিপ কি হবে সে সম্পর্কে উভয়ের মধ্যে একটি অপারেটিং চুক্তি।

৪। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং বাখরাবাদ গ্যাস সিষ্টেম লিঃ-এর সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদী ভূমি ইজারা চুক্তি।

৫। ঢাকার পানগাঁও-এ কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ আভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ভূমি ইজারা ও অপারেটিং চুক্তি যা ১৭ ডিসেম্বর ‘৯৮ তারিখে স্বাক্ষরিত হয়েছে; তবে প্রকল্প বাস্তবায়ন চুক্তি স্বাক্ষরের পর এটি শর্তানুযায়ী এই চুক্তি দুটিতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে।

কর্ণফুলী নদীর মোহনায় পতেঙ্গায় ১৫০০ মিটার নদী তীর সংলগ্ন জল এলাকাসহ প্রায় ২১১.৬৬ একর জমি কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণের জন্য এবং বুড়িগঙ্গা নদীর ১.৬১৮ একর নদীমূখসহ ৮৮.৮৩৫ একর জমি কন্টেইনার টার্মিনাল পোর্টের দৈর্ঘ্য ১৫০০ মিটার প্রস্থ ৪০ মিটার নির্ধারিত হয়। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৭৫% কন্টেইনার ১০টি বার্জের মাধ্যমে নদীপথে পানগাঁও-এ নিয়ে যাওয়া হবে। এস এস এ (বাঃ) লিঃ নামক কোম্পানিকে ৯৯x২= ১৯৮ বৎসরের জন্য দেশের জমি/ভূমি স্থায়ীভাবে বন্ধক দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেখা যায় আন্তর্জাতিক কোন টেন্ডার ছাড়াই এক পক্ষীয়ভাবে মার্কিন কোম্পানি এস এস এ (বাঃ) লিঃ-কে প্রাথমিকভাবে উক্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়। বিভিন্ন তথ্যে জানা যায়, ব্রিটেনের পোর্ট ভেঞ্চার লিঃ, চায়না ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানী ও পোর্ট অব সিঙ্গাপুর অথরিটির সমন্বয়ে গঠিত কনসোটিয়ামের পক্ষ থেকেও ১৯৯৭ সালে অথরিটি, দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের পক্ষ থেকেও ব্যক্তি মালিকানায় বন্দর নির্মাণের প্রস্তাব এসেছিল।

চট্টগ্রাম বন্দর ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা পুরোপুরি মার্কিন কোম্পানির হাতে চলে যাবে এ কথা জানা সত্ত্বেও সরকার এস এস এ (বাঃ) লিঃ-এর সাথে চুক্তি করতে প্রাথমিকভাবে সম্মত হয়। বন্দর নির্মাণের বৈজ্ঞানিক নিয়ম অনুসারে এর সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই এবং এর বিরূপ প্রভাব (অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিক, ভৌগলিক, পরিবেশগত ইত্যাদি) সম্পর্কে কোন অনুসন্ধান কার্যক্রম ছাড়াই সরকার একতরফাভাবে মার্কিন এস এস এ (বাঃ) লিঃ কোম্পানিকে তা দিয়ে দেওয়ার পথে অগ্রসর হয়। এ ক্ষেত্রে এ্যাক্ট -১৯০৮, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ অধ্যাদেশ-১৯৭৬, ডক শ্রমিক নিয়োগ ও নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ-১৯৮০, দেশের প্রচলিত ভূমি আইন ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ভূমিনীতি লঙ্ঘন করা সত্ত্বেও এ পথে অগ্রসর হয়। প্রস্তাবিত স্থানের পাশে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, নৌ-বাহিনী, নেভাল একাডেমী, মেরিন একাডেমী, পতেঙ্গা বিমান বন্দর, ড্রাইডক পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, ইষ্টার্ন রিফাইনারীসহ বিভিন্ন তেল স্থাপনা ইত্যাদি অবস্থিত। জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ক এ সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সম্পর্কে জানা সত্ত্বেও সরকার উক্ত স্থানে মার্কিন ব্যক্তিমালিকানাধীন কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণে প্রাথমিকভাবে সম্মতি দেয়। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-সামরিক তথা সামগ্রিক জাতীয় স্বার্থ বিরোধী হওয়া সত্ত্বেও সরকার মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের এই উদ্যোগকে অগ্রসর করার ভূমিকা নেয়। এস এস এ (বাঃ) লিঃ-এর চুড়ান্ত রিপোর্টে ৩টা অতিরিক্ত সংযোজনী আনা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে এস এস এ (বাঃ) লিঃ-এর প্রস্তাবিত টার্মিনাল এবং সামনের সমুদ্র বন্দর এলাকাকে গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে পোর্ট লিঃ-এর বাইরে আলাদা অঞ্চল ঘোষনা; ঐ অঞ্চলের জন্য আলাদা একজন সংরক্ষকের পদ সৃষ্টি; কোন টেন্ডার না করে নির্মাণ, পরিচালনা ও মালিকানা (BOA) লাভের ভিত্তিতে প্রকল্প স্থাপনের উদ্যোগ। তদুপরি এস এস এ (বাঃ) লিঃ এর সাথে চুক্তির শর্তে উল্লেখ আছে বাংলাদেশ সরকার চুক্তির সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ কোন আইন প্রণয়ন বা বিদ্যমান কোন আইন পরিবর্তন করতে বা কোন সময় চুক্তি বাতিল বা সংশোধন করতে পারবে না। এভাবে জাতীয় স্বার্থ বিরোধী ও দাসত্বমূলক পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়। এ ঘটনায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার যে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দালাল এবং প্রভূর স্বার্থ রক্ষায় নিয়োজিত তা উলঙ্গভাবে প্রকাশ পায়। আমরা পূর্বেই বলেছি যে, এটা হচ্ছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সামগ্রিক পরিকল্পনার একটা অংশ। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থল সংযোগ সেতু হওয়ায় এবং এতদ্বাঞ্চল তথা বাংলাদেশ, নেপাল, ভূটান, উত্তর-পূর্ব ভারত, বার্মা, এমন কি চীনের পশ্চিমাঞ্চল ইত্যাদি দেশের যোগাযোগ কেন্দ্র হিসাবে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বের প্রেক্ষিতে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ চট্টগ্রামে বন্দর নিয়ন্ত্রণসহ সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করতে চায়। এ লক্ষ্যে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বাংলাদেশের সাথে গোপনে সোফা (SOFA-Status of Forces Agreement) চুক্তি করার উদ্যোগ নেয়। প্রস্তাবিত সোফা চুক্তির মধ্যে অন্তর্ভূক্ত থাকে-

১) পাসপোর্ট ভিসা ছাড়াই মার্কিন সৈন্যদের বাংলাদেশে আগমন এবং শুধু পরিচয়পত্র (Identity Card) দেখিয়ে সমগ্র বাংলাদেশে অবাধে চলাচল করা,

২) তাদের অস্ত্রশস্ত্র সাজ-সরঞ্জাম পরিদর্শন ছাড়া (Without Cheeking) অবাধ আনা-নেওয়া করা,

৩) মার্কিন সৈন্যরা কোন অপরাধ করলে তা বাংলাদেশের আইনে ও কর্তৃপক্ষের অধীনে কোন ব্যবস্থা না নেওয়া ইত্যাদি ধারা।

কিন্তু এ বিষয়ে প্রতিবেশী ভারত, চীন, বার্মা স্ব স্ব স্বার্থে প্রতিক্রিয়া ও বিরোধিতা ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকার ভারত সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত হওয়ায় এ চুক্তি সম্পাদনে সরকারের মধ্যে টানা-পোড়েন চলে। ফলে বিষয়টি প্রকাশিত হয়ে গেলে জনমনে প্রতিক্রিয়া ও বিরোধিতা দেখা দেয়। সে কারনে ধাপে ধাপে লক্ষ্যে পৌঁছানোর কৌশল গ্রহণ করে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে হানা !( HANA= Humaneterian assistance need assesment) সমঝোতা স্মারক (MOU=Memorendum of understanding) স্বাক্ষর করে। এই ঘাঁটি নির্মাণের সাথে চট্টগ্রামে পতেঙ্গায় মার্কিন ব্যক্তি মালিকানাধীন কন্টেইনার বন্দর নির্মাণের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় এ ক্ষেত্রেও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মধ্যে টানা-পোড়েনের প্রভাব পড়ে। তার প্রতিফলন হিসাবে চট্টগ্রামের মেয়র মহিউদ্দিন, আওয়ামী লীগভূক্ত শ্রমিক সংগঠন ও বন্দর সি বি এ নেতাদের এর বিরুদ্ধে ভূমিকা লক্ষণীয়। সাথে সাথে শ্রমিক স্বার্থ ও জনমতের প্রেক্ষিতে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামের বিষয়টাও সামনে আসে।

যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দরের বিশেষ রণকৌশলগত গুরুত্ব সম্পর্কে আমাদের বক্তব্য আরো স্পষ্ট করা প্রয়োজন। সাম্রাজ্যবাদীদের তুলে ধরা মুক্তবাজার অর্থনীতি ও বিশ্বায়নের প্রক্রিয়ায় দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব এবং পূর্ব এশিয়ার বিশাল বাজার ও সস্তা শ্রমের প্রেক্ষিতে সাম্রাজ্যবাদী লগ্নিপুঁজী সর্বোচ্চ মুনাফার প্রয়োজনে এতদ্বাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ অবকাঠামো (Infrastructure)- বিষয়টা সামনে আসে। এ প্রেক্ষিতে জাতিসংঘের এসকাপ (ESCAP = Economic and social co-operation of Asia-Pacific)-এর উদ্যোগে এশিয়ান হাইওয়ে ও ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নির্মাণ কাজ দ্রুততর করা হয়। এক্ষেত্রে সমুদ্র পথের সংযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রয়োজন ও গুরুত্ব সামনে আসে। বাংলাদেশের নিকটবর্তী স্থলবেষ্টিত নেপাল, ভুটান এবং প্রতিবেশী ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাথে সমুদ্র পথে আন্তর্জাতিক যোগাযোগের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রেক্ষপটে এ অঞ্চলের দেশগুলো বিশেষ করে ভারত ও চীন স্বীয় স্বার্থে বিশেষ সুবিধা লাভের লক্ষ্যে সাম্রাজ্যবাদী উপরোক্ত সাধারণ পরিকল্পনার সাথে তাদের বিশেষ পরিকল্পনাকে সমন্বিত করতে চায়। এ প্রেক্ষিতে ভারত সরকার উত্তর-পূর্ব ভারতে পণ্য পরিবহনে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে চায়। এশিয়ান হাইওয়ে, ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে, চট্টগ্রাম বন্দর ইত্যাদি ব্যবহার ক্ষেত্রে ভারতের লক্ষ্য হচ্ছে ট্রানজিট সুবিধা আদায় করা। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতে ট্রানজিট লাভের ক্ষেত্রে ভারত সরকারের অর্থনৈতিক স্বার্থ ছাড়াও উত্তর-পূর্ব ভারতের জাতি স্বত্তাসমূহের সশস্ত্র লড়াই দমনের সামরিক দিকটা কার্যকরী রয়েছে। ভারতের শাসক-শোষকগোষ্টী উক্ত লক্ষ্য ধাপে ধাপে কার্যকরী করার জন্য বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তি এবং ঢাকা-কলিকাতা, ঢাকা-আগরতলা বাস সার্ভিস চালু করে। উপরোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ ছাড়াও ভারত, উত্তর-পূর্ব ভারতের সাথে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যোগাযোগ গড়ে তোলার জন্য মায়ানমার, থাইল্যান্ডের সাথে আরেকটি পৃথক যোগাযোগ রুট গড়ে তোলার উদ্যোগ নিচ্ছে। পূর্ব এশিয়ার পুঁজিবাদী চীন স্বীয় বিশেষ স্বার্থ হাসিলে সাম্রাজ্যবাদী এসকাপ পরিকল্পনার সাথে নিজস্ব পরিকল্পনাকে সমন্বিত করে অগ্রসর হচ্ছে। চীনের পশ্চিমাঞ্চলে মহাউন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসাবে কুনমিং থেকে বার্মা, ভারত হয়ে বাংলাদেশ অংশে এশিয়ান হাইওয়ে, ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের কার্যক্রম তরান্বিত করতে চায়। আবার চীন মায়ানমারের আকিয়াব বন্দর নির্মাণসহ কুনমিং, রেঙ্গুন-আকিয়াব (মায়ানমার), কক্সবাজার-চট্টগ্রাম (বাংলাদেশ) হয়ে এশিয়ান হাইওয়ে, ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সাথে সম্পর্কিত হওয়ার মাধ্যমে ত্রিভূজ আকৃতির আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলায়ও আগ্রহী। বাংলাদেশের বিএনপি নেতৃত্বে জোট সরকার বাংলাদেশ-মায়ানমার-থাইল্যান্ড স্থল যোগাযোগকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে বিগত জুলাই ২০০২ মাসে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনত্রার বাংলাদেশ সফরের সময় উভয় দেশের মধ্যে সমঝোতা হয়। এ ক্ষেত্রে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদী চীন স্ব স্ব স্বার্থে আগ্রহী হওয়ায় এই রুট কার্যকরী হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আত্মঘাতী বিমান হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের নামে আফগানিস্থানে অবস্থানরত ওসামা-বিন-লাদেনের আল-কায়দা ও তাদের আশ্রয়দাতা তালেবান সরকারকে দায়ী করে সে দেশে আগ্রাসন চালায়। এই আগ্রাসী যুদ্ধের কারণ ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে তা থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন সামরিক ঘাঁটি স্থাপনসহ বাজার ও প্রভাব বলয় আরো নিয়ন্ত্রিত ও বিস্তৃত করা; মধ্যপ্রাচ্যের তেল সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ জোরদার করে মধ্য এশিয়ার তেল-গ্যাস সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও লুটপাট করা; অর্থনীতি আরো সামরিকীকরণ ও অস্ত্র ব্যবসা জোরদার করা। সর্বোপরী পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোতে শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে জনগণের ক্ষোভ-বিক্ষোভ যাতে বিপ্লবী ধারায় অগ্রসর হতে না পারে সে জন্য সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধোন্মাদনা সৃষ্টি করা; আরব দেশগুলো, ইসলামিক রাষ্ট্রসমূহসহ এশিয়া-আফ্রিকা-ল্যাতিন আমেরিকার নয়াঔপনিবেশিক-আধাসামন্তবাদী দেশগুলোতে যাতে সাম্রাজ্যবাদ-সামন্তবাদ বিরোধী জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব অগ্রসর হতে না পারে সে জন্য ধর্মীয় উন্মাদনা ও সাম্প্রদায়িকতার পথে ঠেলে দেওয়া এবং জাতিগত দ্বন্দ্বকে উস্কে দিয়ে তাকে কাজে লাগানো। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জল-স্থল-আকাশসীমা ব্যবহারের মার্কিন প্রস্তাব নিয়ে সাম্রাজ্যবাদের দালাল তত্ত্বাবধায়ক সরকার আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র নেতৃত্বে জোট, জাতীয় পার্টি ইত্যাদি দালাল রাজনৈতিক দল ও জোটের সমর্থন নিয়ে তাতে সম্মতি প্রদান করে। এটা বাংলাদেশে মার্কিন ঘাঁটি নির্মানের উদ্যোগকে অগ্রসর করে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত মেরি-অ্যান-পিটার্স উত্থাপিত ৫ দফা তথা মার্কিন অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-সামরিক পরিকল্পনা কার্যকরীকরণ তরান্বিত করার লক্ষ্যে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ১ অক্টোবর ‘০১ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিএনপি’র নেতৃত্বে ৪ দলীয় জোট সরকারকে ক্ষমতায় আনে।

বিএনপি’র নেতৃত্বে জোট সরকার ক্ষমতাসীন হয়ে প্রভু মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের পরিকল্পনা কার্যকরী করার প্রেক্ষিতে ভূমিকা গ্রহণ করে। সরকার গ্যাস রফতানির কথা বললেও প্রবল জনমত ও গণবিরোধিতার মুখে তা কার্যকরী করার জন্য কৌশল গ্রহণ করে ‘মজুদ নিরুপণ ও ব্যবহার’ নামে দুইট কমিটি গঠন করে তাদের সুপারিশ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার কথা বলে। চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ব্যক্তি মালিকানাধীন বন্দর নির্মাণে মার্কিন এস এস এ (বাঃ) লিঃ-এর সাথে আলোচনা অগ্রসর করে। কিন্তু এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দরের শ্রমিক ধর্মঘটসহ প্রবল গণবিরোধিতা দেখা দেয়। এই আন্দোলনে ভারতপন্থী অবস্থান থেকে আওয়ামী লীগ অনুসারীদের ভূমিকা লক্ষ্যনীয়। তাছাড়া দায়েরকৃত মামলার প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এর উপর স্থগিতাদেশ জারি করে। ব্যক্তি মালিকানধীন কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণের বিষয়টি মার্কিন সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের সাথে সম্পর্কিত থাকায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া এতে তার প্রতিফলন ঘটে। এতদ্বসত্ত্বেও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ পতেঙ্গায় ব্যক্তি মালিকানাধীন কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী মোর্শেদ খানের সাথে ২০ মে আলোচনা শুরু করে চাপ প্রয়োগ জোরদার করে। সাথে সাথে বাংলাদেশে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের লক্ষ্যে সোফা (SOFA) চুক্তি স্বাক্ষর করার বিষয়টা জোরালোভাবে সামনে এনে মার্কিন রাষ্ট্রদুত মেরি এ্যান পিটার্স ৯ মে ঢাকায় সাংবাদিক সম্মেলন করে।

মার্কিন মালিকানাধীন এস এস এ (বাঃ) লিঃ কর্তৃক চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর মোহনায় কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণের বিষয়টা বিচ্ছিন্ন কোন বিষয় নয়। এটা বিশ্ব প্রেক্ষাপটে নয়াঔপনিবেশিক-আধাসামন্তবাদী বাংলাদেশসহ এতদ্বাঞ্চলে একক পরাশক্তি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের শোষন-লুন্ঠন, আধিপত্য-কর্তৃত্ব শক্তিশালী ও বি¯তৃত করার পরিকল্পনার অংশ। উপরোক্ত বিশ্লেষণে এটা স্পষ্ট যে বাংলাদেশের গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদসহ এতদ্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ লুন্ঠন করা, যোগাযোগ অবকাঠামো নিয়ন্ত্রণ করা এবং আমাদের দেশে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের সাথে মার্কিন ব্যক্তি মালিকানাধীন কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণের বিষয়টি সম্পর্কিত। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ সমগ্র পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থার গভীর অর্থনৈতিক সংকট ও মন্দার ফলে বাজার ও প্রভাব বলয়কে কেন্দ্র করে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব এবং সে প্রেক্ষিতে একক পরাশক্তি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ তার অবস্থানকে শক্তিশালী ও বিস্তৃত করা এবং শ্রমিক-কৃষক-জনগণের আন্দোলন-সংগ্রাম বিপ্লব ঠেকানোর লক্ষ্যে তৎপরতা চালাচ্ছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ আফগানিস্থানে আগ্রাসী যুদ্ধ চালানোর পর ইরাক, ইরান ও উত্তর কোরিয়াকে শয়তানের দুষ্ট চক্র (Axis of evil) আখ্যায়িত করে আগ্রাসী যুদ্ধকে বিস্তৃত করার পরবর্তী টার্গেট নির্ধারণ করে অগ্রসর হচ্ছে। এর সাথে সাম্রাজ্যবাদী ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ব্রিটেন বাদে), রাশিয়া এবং পুঁজিবাদী চীন একমত না।

ফলে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব-সংঘাত, বাণিজ্য যুদ্ধ, আঞ্চলিক যুদ্ধ বৃদ্ধিসহ বিশ্বযুদ্ধের বিপদ বেড়ে চলেছে। এ প্রেক্ষাপটে মার্কিন আগ্রাসী পরিকল্পনার সাথে আমাদের দেশে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের বিষয়টি জড়িত। দেশের গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ লুটপাট, মার্কিন ব্যক্তি মালিকানাধীন কন্টেইনার টার্মিনাল ও সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের বিষয় জনগণ ও জাতীয় স্বার্থের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তা সত্ত্বেও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দালাল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র নেতৃত্বে জোট সরকার শ্রেণী চরিত্রগত কারণে ধারাবাহিকভাবে এটাকে কার্যকরী করে চলেছে। সুতরাং জাতীয় স্বার্থ বিরোধী ও সমস্ত তৎপরতার জন্য দায়ী সাম্রাজ্যবাদ বিশেষ করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালাল সরকার এবং রাষ্ট্র ব্যবস্থা। শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে এদের বৈপ্লবিক উচ্ছেদ সাধন করে শ্রমিক-কৃষক-জনগণের রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে জনগণ ও জাতীয় স্বার্থে বন্দর উন্নয়ন ও নতুন নতুন সমুদ্রবন্দর নির্মাণসহ সকল ক্ষেত্রে গণমুখী উন্নয়ন পরিকল্পনা কার্যকরী করা সম্ভব। এই মূল সত্যকে আড়াল করা, পাশ কাটানো ও অস্বীকার করাটা জনগণকে বিভ্রান্ত করে সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের সেবা করা ছাড়া আর কিছু নয়। “চট্টগ্রাম বন্দর উন্নয়ন ফোরাম” এবং “বন্দর জাতীয় শ্রমিক লীগ, চট্টগ্রাম (সি বি এ)” ও “চট্টগ্রাম ডক বন্দর শ্রমিক কর্মচারী পরিষদ”-এর বক্তব্য সাম্রাজ্যবাদ ও সরকারের ভূমিকা আড়াল করে প্রশাসনের মধ্যকার কয়েকজন আমলাকে দায়ী করেছে। আবার কোন কোন মহল থেকে পোর্ট নির্মাণের স্থান পরিবর্তন করলে তা গ্রহণযোগ্য বলে যে বক্তব্য সামনে আসছে সেটাও জাতীয় স্বার্থ বিরোধী এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের পক্ষে কৌশলে ভূমিকা গ্রহণ ছাড়া কিছু নয়। বাম নামধারী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতৃত্বে ৮ দলীয় বামফ্রন্ট মুখে গ্যাস সহ জাতীয় সম্পদ রক্ষা, মার্কিন ব্যক্তি মালিকানাধীন বন্দর ও ঘাঁটির বিরুদ্ধে কথাবার্তা বললেও তা তার সকল সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালাল সরকার বিরোধী অবস্থান থেকে করছে না। তারা তা করছে পুঁজিবাদী চীনকে সমাজতান্ত্রিক দেশ হিসাবে আখ্যায়িত করা এবং সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়া, পুঁজিবাদী চীন এবং নয়াঔপনিবেশিক-আধাসামন্তবাদী ভারতকে নিয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে এককেন্দ্রীক বিশ্ব (Uni-polar world) ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বহুকেন্দ্রীক বিশ্ব (Multi-polar world) ব্যবস্থার অবস্থান থেকে। তাদের সুবিধাবাদী, সংশোধনবাদী, লেজুড়বৃত্তির চরিত্র স্পষ্ট হয় যে আওয়ামী লীগ সরকার পূর্বেকার ধারাবাহিকতায় অধিকাংশ গ্যাস ব্লক বরাদ্দ ও পিএসসি স্বাক্ষর চুড়ান্ত করে ও মার্কিন ব্যক্তিমালিকানাধীন এস এস এ (বাঃ) লিঃ-কে পতেঙ্গায় বন্দর নির্মাণের অনুমতি দিয়ে আলোচনা অগ্রসর করে এবং মার্কিন সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ প্রশ্নে হানা (HANA) সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে সেই আওয়ামী লীগের নির্লজ্জ লেজুড়বৃত্তি করে ‘৭১ এর “মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির ঐক্য” ও “মৌলবাদ” বিরোধিতার নামে। বর্তমানে তারা সাম্রাজ্যবাদের দালাল আওয়ামী লীগের সাথে সম্পর্কের ভিত্তিতে কৌশলে বিভিন্ন ঐক্যবদ্ধ তৎপরতা চালাচ্ছে। তারা সাম্রাজ্যবাদের চিহ্নিত দালাল ডঃ কামাল হোসেনকে সামনে রেখে ১১ দলীয় জোটকে টিকিয়ে রেখে অগ্রসর হচ্ছে।

এমতাবস্থায় চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় মার্কিন ব্যক্তি মালিকানাধীন কন্টেইনার টার্মিনাল ও সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ, গ্যাসসহ প্রাকৃতিক সম্পদ লুটপাট ও রফতানির বিরুদ্ধে জনগণ ও জাতীয় স্বার্থকে সমুন্নত রেখে সকল সাম্রাজ্যবাদ বিশেষ করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালাল সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। এ আন্দোলন-সংগ্রাম অগ্রসর করতে নেতৃত্ব প্রদান করতে হবে শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে বিপ্লবী গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহকে। এ সব বিষয় নিয়ে যে মিথ্যা ও প্রতিক্রিয়াশীল বক্তব্য ছড়িয়ে শ্রমিক-কৃষক-জনগণকে বিভ্রান্ত ও বিপথগামী করা হচ্ছে তার স্বরূপ উদঘাটন করতে হবে। প্রকৃত সত্যকে তুলে ধরে জনগণকে সচেতন ও সংগঠিত করে শত্রুকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করে আন্দোলন-সংগ্রামকে সঠিক লক্ষ্যে অগ্রসর করতে হবে। এজন্য সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালাল এবং সরকার বিরোধী সকল দেশপ্রেমিক ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, শক্তি, গোষ্ঠী, ব্যক্তি ইত্যাদিকে নিয়ে ব্যাপক ভিত্তিক ঐক্য গড়ে তুলে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং দূর্বার আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। এ প্রেক্ষিতে-

► মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সামগ্রিক পরিকল্পনার অংশ হিসাবে বাংলাদেশে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি করার লক্ষ্যে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর মোহনায় মার্কিন ব্যক্তিমালিকানধীন কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে, প্রতিহত করতে হবে।

► বন্দরসহ দেশের অর্থনৈতিক øায়ু কেন্দ্রসমূহ সাম্রাজ্যবাদীদের আধিপত্য, নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব উচ্ছেদের আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।

► জনগণ ও জাতীয় স্বার্থে বন্দর উন্নয়ন, সম্প্রসারণ, আধুনিকীরণ, নতুন বন্দর নির্মাণে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণে ও তা বাস্তাবায়নের জন্য সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালাল বিরোধী শ্রমিক-কৃষক-জনগণের রাষ্ট্র ও সরকার গড়ে তুলতে হবে।

 

তারিখ:     মার্চ’ ২০০৩

সংগ্রামী অভিনন্দনসহ

কেন্দ্রীয় কমিটি

জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *