সুধি
আগামী ৭ নভেম্বর ২০১৭ মঙ্গলবার মহান রুশ বিপ্লবের শততম বার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। চলমান বিশ্ব ও জাতীয় পরিস্থিতিতে শোষণমুক্তির লক্ষ্যে শ্রমিক-কৃষক-জনগণের গণতান্ত্রিক সংগ্রাম বেগবান করার প্রত্যয়ে মহান রুশ বিপ্লবের শততম উদযাপন কমিটির উদ্যোগে বিকাল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে র্যা লি ও বিকাল সাড়ে ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
উক্ত অনুষ্ঠানে আপনাদের উপস্থিতি ও সহযোগিতা আমাদের অনুপ্রাণিত করবে।
অভিনন্দনসহ
ডা. এম.এ করিম
আহ্বায়ক
মহান রুশ বিপ্লবের শততম বার্ষিকী উদযাপন কমিটি
মহান রুশ বিপ্লবের অজেয়-অমর শিক্ষাকে সামনে রেখে বিশ্বব্যাপী শ্রমিকশ্রেণি, নিপীড়িত জাতি ও জনগণ ঐক্যবদ্ধ হউন
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিপদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান, বাংলাদেশকে আগ্রাসী যুদ্ধে সম্পৃক্ত করার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করুন
সংগ্রামী সাথী ও বন্ধুগণ,
রক্তিম শুভেচ্ছা। ২০১৭ সালের ৭ নভেম্বর মহান অক্টোবর বিপ্লব তথা রুশ বিপ্লবের শততম বার্ষিকী । রুশ বিপ্লব হচ্ছে পৃথিবীর ইতিহাসে যুগান্তকারী ঘটনা। রুশ বিপ্লব শ্রমিকশ্রেণি, নিপীড়িত জাতি ও জনগণের মুক্তির আলোকবর্তিকা। ১৯১৭ সালের ৭ নভেম্বর কমরেড লেনিনের পরিচালনাধীনে সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট (বলশেভিক) পার্টির নেতৃত্বে বলপ্রয়োগে বুর্জোয়া শ্রেণিকে উৎখাত করে রাশিয়ায় সর্বহারা একনায়কত্বাধীন মহান সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব জয়যুক্ত হয়। পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থার বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থা, বিশ্বব্যাপী তিন মৌলিক দ্বন্দ্বের সাথে আর একটি মৌলিক দ্বন্দ্ব যুক্ত হয়ে চার মৌলিক দ্বন্দ্ব এবং ‘দুনিয়ার শ্রমিক শ্রেণি ও নিপীড়িত জাতি ও জনগণ এক হও’ স্লোগান সামনে আসে। রাশিয়া তথা সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ও গঠন কার্যের মধ্য দিয়ে শ্রেণি শোষণ, বেকারত্ব, নারী নির্যাতন, দারিদ্র্য ইত্যাদির অবসান ঘটে। শ্রমিকশ্রেণির নেতৃত্বে কৃষক, জনগণ এবং নিপীড়িত জাতিসমুহের মুক্তি অর্জিত হয়। শিক্ষা-সংস্কৃতি, চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয় । জনগণের কল্যাণে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভূতপূর্ব বিকাশ সাধিত হয়। কমরেড লেনিনের নেতৃত্বে বিশ্ববিপ্লব অগ্রসর করার জন্য তৃতীয় আন্তর্জাতিক গঠিত হয়। তৃতীয় আন্তর্জাতিক পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোতে সর্বহারা বিপ্লবই শুধু নয়, বরং কলোনিয়াল থিসিস (COLONIAL THESIS) এর মধ্য দিয়ে ঔপনিবেশিক ও পরাধীন দেশগুলোতে শ্রমিক-কৃষক-জনগণের মুক্তির পথ নির্দেশ করে । কমরেড লেনিনের মৃত্যুর পর সমাজতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণ এবং বিশ্ববিপ্লবকে অগ্রসর করে নেন কমরেড লেনিনের যোগ্য উত্তরসূরী কমরেড স্টালিন। কমরেড লেনিনের সমাজতন্ত্র বিনির্মাণের রূপরেখাকে কমরেড স্টালিন বাস্তবায়ন করেন। গত শতকের ত্রিশের দশকের মহামন্দার পরিণতিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করার ক্ষেত্রে নির্ধারক ভূমিকা পালন করে কমরেড স্টালিনের নেতৃত্বে সোভিয়েত পার্টি ও লালফৌজ। ফলশ্রুতিতে পূর্ব ইউরোপ ও এশিয়ার কয়েকটি দেশে শ্রমিকশ্রেণির নেতৃত্বে জনগণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকায় জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের জোয়ার সৃষ্টি হয়।
রুশ বিপ্লব, সমাজতন্ত্র ও বিশ্ববিপ্লবের এই সাফল্য অর্জিত হয় সংশোধনবাদ-সুবিধাবাদের বিরুদ্ধে লেনিন ও স্টালিনের নেতৃত্বে আপসহীন মতাদর্শিক সংগ্রাম পরিচালনা ও পরাস্ত করার মধ্য দিয়ে। কমরেড স্টালিনের মৃত্যুর পর ১৯৫৬ সালে ২০তম পার্টি কংগ্রেসে পার্টির মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা সংশোধনবাদী বিশ্বাসঘাতক ক্রুশ্চেভ চক্র পার্টি ও রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে পুঁজিবাদ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে-যা ব্রেজনেভ আমলে ১৯৬৭ সালে সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ এবং দুই পরাশক্তির অন্যতম পরাশক্তিতে পরিণত হয়। আবার ১৯৪৯ সালে মাও সেতুং এর পরিচালনাধীন কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে চীনে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক বিপ্লব জয়যুক্ত হলেও সংশোধনবাদী মাও সে তুং চিন্তাধারার প্রভাবে চীন সর্বহারা একনায়কত্বাধীনে সমাজতন্ত্রের পথ না ধরে পুঁজিবাদী পথে অগ্রসর হয়। সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনা ও বিভিন্ন কারণে ১৯৯০-১৯৯১ সালে অন্যতম পরাশক্তি সামাজিক সাম্রাজ্যবাদী সোভিয়েত রাশিয়ার পতন ঘটে ও খন্ড-বিখন্ড হয়ে ১৫টি রাষ্ট্রে পরিণত হয়। সাম্রাজ্যবাদ-সংশোধনবাদ ও প্রতিক্রিয়াশীলরা এটাকে সমাজতন্ত্র, মার্কসবাদ-লেনিনবাদ ব্যর্থ বলে বিশ্বব্যাপী প্রতিবিপ্লবী প্রচারাভিযান চালায়। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো, এটা মার্কসবাদ-লেনিনবাদের ব্যর্থতা নয়, বরং তা মার্কসবাদ-লেনিনবাদ থেকে বিচ্যুত হয়ে সোভিয়েত রাশিয়ায় ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত পুঁজিবাদ ও পরবর্তীতে সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের অনিবার্য পরিণতি। অন্যদিকে কমরেড লেনিন ও তাঁর যোগ্য উত্তরসূরী কমরেড স্টালিনকে খুনি, ডাকাত আখ্যায়িত ও হিটলারের সাথে তুলনা করে বিশ্ব শ্রমিকশ্রেণি ও জনগণকে বিভ্রান্ত, বিভক্ত ও বিপথগামী করে বিশ্ববিপ্লবের পথ থেকে বিচ্যুত করতে চায়। তাদের এই অপপ্রচার অবশেষে ব্যর্থ হতে বাধ্য। বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনের এই সাময়িক বাধাবিঘ্ন ও ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে শ্রমিক শ্রেণির নেতৃত্বে বিশ্বজনগণকে মার্কসবাদ-লেনিনবাদের লাল পতাকা আরও উর্দ্ধে তুলে ধরে সমাজবিপ্লবের এই আবশ্যিক নিয়মকে আত্মস্থ করে বিপ্লবী সাহস ও দৃঢ়তা নিয়ে আত্মবলিদানে নির্ভীক হয়ে বিপ্লব সফল করতে হবে। চলমান বৈশ্বিক ও তিন মৌলিক দ্বন্দ্বের তীব্রতা বৃদ্ধির ফলশ্রুতিতে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বে বাজার ও প্রভাব বলয় পুনর্বণ্টনকে কেন্দ্র করে যুদ্ধ তথা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিপদ; শ্রম-পুঁজি এবং নিপীড়িত জাতি ও জনগণের সাথে সাম্রাজ্যবাদের দ্বন্দ্ব দেশে দেশে বিপ্লব তথা বিশ্ববিপ্লব আরও সামনে আসায় মার্কসবাদ-লেনিনবাদ, সমাজতন্ত্র কমিউনিজম এবং মার্কস-এঙ্গেলস, লেনিন-স্টালিন আবারও সামনে আসছে। বিশ্বব্যাপী শ্রমিকশ্রেণি ও জনগণের সামনে একমাত্র বিকল্প হচ্ছে সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ যা আমাদের নয়া-ঔপনিবেশিক, আধা-সামন্ততান্ত্রিক দেশগুলোতে সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করতে হবে। আজকেও বিপ্লব জয়য্ক্তু করতে হলে ইউরো কমিউনিজম মার্কা, মাওবাদ, ট্রটস্কিবাদ, যুচে ভাবধারাসহ সকল রূপের সুবিধাবাদ সংশোধনবাদ বিশেষ করে রাশিয়া চীনসহ আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট অঙ্গনে সংশোধনবাদী ধারার ‘আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট ও ওয়ার্কার্স পার্টি সমূহের সম্মেলন’ (INCWP) এবং চীনকে সামনে রেখে চীন, ভিয়েতনাম, উত্তর কোরিয়া ও কিউবাকে সমাজতান্ত্রিক দেশ আখ্যায়িত করে যে ধারা কার্যকরি রয়েছে-যার সাথে সম্পর্কিত সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টির স্বরূপ উন্মোচন করে শাণিত করতে হবে মতাদর্শিক সংগ্রাম। রুশ বিপ্লবের শততম বার্ষিকী উদ্যাপনে এই সংশোধনবাদীদের ছড়ানো বিভ্রান্তির বিরোধিতা করতে হবে । একই সাথে সংশোধনবাদ-সুবিধাবাদের পতাকাবাহী সকল বিভ্রান্তকারিদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংগ্রাম অগ্রসর করতে হবে।
সংগ্রামী সাথীরা,
রুশ বিপ্লবের এই প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে সমকালীন আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পরিস্থিতিকে কমিউনিস্ট বিপ্লবী আন্দোলন ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে এর শিক্ষা, দিক নির্দেশনা ও প্রাসঙ্গিকতা আরও সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। দেশব্যাপী শ্রমিক-কৃষক-জনগণ গভীর অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক তথা সামগ্রিক সংকটে জর্জরিত। সাম্রাজ্যবাদের দালাল স্বৈরাচারী মহাজোট সরকার প্রভূ সাম্রাজ্যবাদ ও তার বিশ্বসংস্থাসমূহের দিক নির্দেশনা, জাতিসংঘের এস ডি জি কার্যকরি করে শোষণ-লূণ্ঠন বৃদ্ধি করে চলেছে। সেই সাথে চাল,ডাল, তেল, লবন, পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতি; তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি; ব্যাংক ও শেয়ার বাজারে লুটপাট, চাঁদবাজী, টেন্ডারবাজী খুন, গুম, অপহরণ, বিনাবিচারে হত্যা নারী ও শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণ বিভিন্ন কালাকানুন জারি, সরকার দলীয় রাষ্ট্রুীয় সন্ত্রাস ইত্যাদি সর্বাত্মক রূপ ধারণ করেছে। জাতীয় ক্ষেত্রে শ্রমিকদের বাঁচার মতো নিম্নতম মজুরি না দেওয়া, অগতান্ত্রিক শ্রমআইন, কাজের নিরাপত্তাহীনতা, ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার না থাকা তথা শিল্প ও শ্রমিক সংকট তীব্রতর হয়ে চলা, কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি, উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, ভূমিহীন ও গরীব কৃষকের সংখ্যা বৃদ্ধি তথা কৃষিতে সংকট আরও বৃদ্ধি পাওয়া, বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, ত্রাণ নিয়ে প্রতিক্রিয়াশীল খেলা, শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষাকে পণ্যে পরিণত করা, ভর্তিবাণিজ্য, প্রশ্নপত্র ফাঁস, শিক্ষা উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি, শিক্ষার্থীদের বেতন বৃদ্ধি শিক্ষাঙ্গনে সরকার দলীয় সন্ত্রাস, শিক্ষা শেষে চাকরির সংকট, অপসংস্কৃতি ইত্যাদি শিক্ষাঙ্গন ও শিক্ষাব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করছে। এই সরকার বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে এদেশে অবাধ শোষণ লুণ্ঠন চালানোর সুযোগ করে দিয়েছে। ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার নেই, সেই সাথে বাঙালি ও পাহাড়ি জাতিসত্তার মধ্যে দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এন জি ও রা ক্ষুদ্র ঋণ, নারীবাদিতার নামে বিভক্তি সৃষ্টি করে বিপ্লব ঠেকানোর অপতৎপরতা চালাচ্ছে। মহাজোট সরকার উন্নয়নের গালভরা বুলি আউড়িয়ে ‘মুক্তিযুদ্ধে’র স্বপক্ষের শক্তির ঐক্যের উগ্র জাতীয়তাবাদ ও জঙ্গিবাদ বিরোধিতার স্লোগান সামনে রেখে সাম্রাজ্যবাদী প্রভূর আর্শির্বাদ নিয়ে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য তৎপর। সাম্রাজ্যবাদের দালাল প্রতিক্রিয়াশীল প্রধান দল বি এন পি ও বিশ দলীয় জোট জাতীয় ও জনজীবনের মূল সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতার স্লোগানকে সামনে রেখে তাদের ভারতবিরোধিতা বাদ দিয়ে প্রভুর আশীর্বাদ নিয়ে ক্ষমতায় যেতে চায়।
সংগ্রামী বন্ধুগণ,
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থলসংযোগ সেতু বঙ্গোপসাগরীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক ও রণনীতিগত গুরুত্বের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে চলেছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ তার প্রাধান্য ধরে রাখতে যৌথ অংশিদারিত্ব চুক্তি, যৌথ অংশিদারিত্ব সংলাপ, বাণিজ্য বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি (TICFA), সন্ত্রাস দমনে সহযোগিতা চুক্তি, নিরাপত্তা বিষয়ক সংলাপ ইত্যাদি কার্যকরী করা সহ সোফা চুক্তির পায়তারা চালাচ্ছে। মর্কিনের সাথে সমন্বিত হয়ে সাম্রাজ্যবাদী জাপান তার বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট (বিগ-বি) উদ্যোগ অগ্রসর করতে সচেষ্ট। এতদাঞ্চলের প্রধান আঞ্চলিক শক্তি নয়া-ঔপনিবেশিক ভারতকে চীনের পাল্টা ভারসাম্য হিসেবে গড়ে তোলার জন্য মার্কিনের এশিয়া প্যাসিফিক রণনীতির সাথে ভারতের ‘অ্যাক্ট এশিয়া পলিসি’ সমন্বিত কর অগ্রসর হচ্ছে। উত্তর পূর্ব ভারতের সাথে ভারতের মূল ভূখন্ডের সংযোগের প্রেক্ষিতে ভারত ট্রানিজিট, করিডোর সহ সকল যোগাযোগ মাধ্যম, সকল বন্দর ব্যবহার, সুন্দরবন ধ্বংসকারী রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, ভারত বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা চুক্তি ইত্যাদি কার্যকরী করে চলেছে। আবার রাশিয়া ও চীন বাংলাদেশে তাদের প্রভাব বৃদ্ধি করে নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়ার অস্ত্র বিক্রয় ও পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন চুক্তি সিকা (CICA) ও চীনের এশিয়ার অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক এর সদস্য করা, বিসিম (BCIM) প্রক্রিয়ার বি আর আই এ সম্পৃক্ত করা তাৎপর্যপূর্ণ।
সাম্প্রতিক রোহিঙ্গা সংকট এর থেকে বিচ্ছিন্ন কোন বিষয় নয়। বরং অভ্যন্তরীণ কারণ ছাড়াও এর পেছনে রয়েছে রণনীতিগত গুরুত্বপূর্ণ নয়া-ঔপনিবেশিক আধা-সামন্তবাদী মিয়ানমারকে কেন্দ্র করে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী পুঁজিবাদী দ্বন্দ্ব ও ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত। মিয়ানমারের গ্যাস, তেল, খনিজ ও বনজসহ প্রাকৃতিক সম্পদ স্বীয় স্বার্থে কাজে লাগানোর জন্য পুঁজিবাদী চীন গভীর সমুদ্র বন্দর ও পাইপলাইন, শিল্পপার্ক, যোগাযোগ ইত্যাদি প্রকল্পে বিপুল পুঁজি বিনিয়োগকে বিপর্যস্ত করে চীনের প্রভাব কমিয়ে মার্কিনের নেতৃত্বে পাশ্চাত্যের প্রভাব বৃদ্ধির লক্ষ্যে এতদাঞ্চলে বিশৃঙ্খল ও সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চায়। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ কৌশলী ভুমিকা নিয়ে রাখাইনে বসবাসরত রোহিঙ্গা ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের আকাঙ্খাকে ব্যবহার করে এবং তাদের ওপর দমন পীড়নমূলক পরিস্থিতির সৃষ্টির কৌশলে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু হয়ে বাংলাদেশে পাড়ি জমায়। এ প্রক্রিয়ায় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ স্বীয় আগ্রাসী পরিকল্পনায় বাংলাদেশকে সম্পৃক্ত করতে চায়।
বিশ্বব্যাপী শ্রমিকশ্রেণি ও জনগণের ওপর শোষণ-লুণ্ঠন, নিপীড়ন-নির্যাতন, দুঃখ-দারিদ্র্য, সন্ত্রাস, আগ্রাসী যুদ্ধ তথা বিশ্বযুদ্ধের মূল হোতা সাম্রাজ্যবাদ। সাম্রাজ্যবাদ তথা পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থাকে বৈপ্লবিক পন্থায় উচ্ছেদ সাধন করে সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা করায় বিশ্ব শ্রমিকশ্রেণি ও জনগণের মুক্তির একমাত্র বিকল্প। বাংলাদেশসহ নয়া-ঔপনিবেশিক দেশগুলোর জনগণের ওপর চেপে বসে থাকা সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের স্বার্থরক্ষাকারী স্বৈরাচারী সরকার নয়, শ্রমিক-কৃষক-জনগণের সংবিধান, সরকার ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব ছাড়া মুক্তির অন্য কোন পথ নেই। রুশ বিপ্লবের শততম বার্ষিকীতে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
সংগ্রামী অভিনন্দনসহ
মহান রুশ বিপ্লবের শততম বার্ষিকী উদ্যাপন কমিটি
৮ বি.বি এভিনিউ (৩য় তলা) গুলিস্তান, ঢাকা। প্রকাশকাল : ১৬-১০-২০১৭ইং