ঘোষণাপত্র, কর্মসূচি ও গঠনতন্ত্র
জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের
ঘোষণাপত্র
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সাম্রাজ্যবাদ, সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদ বিরোধী লড়াইয়ের মাধ্যমে জন্মলাভ করেনি বিধায় এদেশের সমাজদেহে সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও আমলা দালাল পুঁজির শোষণ অব্যাহত রয়ে গেছে। এই শোষণমূলক আর্থসামাজিক ব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে দেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক সঙ্কটকে গভীর থেকে গভীরতর করছে এবং জনজীবনকে বিপর্যস্ত ও সঙ্কটাপন্ন করে ঠেলে দিচ্ছে এক চরম অনিশ্চয়তার দিকে। সমাজের সকল শ্রেণির মেহনতি জনগণ এ পরিস্থিতির শিকার। দেশের সংখ্যারিষ্ঠ অংশ কৃষক জোতদারি-মহাজনী তথা সামন্ততান্ত্রিক শোষণে পিষ্ট। কৃষি উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হয়ে, ভূমি সম্পর্কের বিভিন্ন জটিল রূপের ফলশ্র“তিতে মাঝারি কৃষক জমি হারিয়ে গরিব-ভূমিহীন কৃষকে পরিণত হচ্ছে। গ্রামীন জনসংখ্যার ৭২% জন ভূমিহীন ও গরিব কৃষক। শহরে অবস্থানরত বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত, অফিস আদালতে চাকুরিরত, সাধারণ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি, মধ্যবিত্ত শ্রেণির জীবনও দুর্বিষহ। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতি, আয়-ব্যয়ের বৈষম্য এবং প্রতিনিয়ত জীবনযাত্রার মান কমে যাওয়ায় এই অংশসমূহকে দিশেহারা করছে। দেশের শিক্ষিত জনতাসহ ছাত্র সমাজের দশাও একই রকম। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের সৃষ্ট আমলা ও কেরানী সৃষ্টির শিক্ষা ব্যবস্থা অব্যাহত থাকায় একদিকে যেমন ব্যাপক জনগণ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত, অন্যদিকে তেমনি ডিগ্রিধারি বেকারের পরিমাণ মাত্রারিতিক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ডিপ্লোমাধারি, টেকনিক্যাল শিক্ষায় শিক্ষিতরাও আজ বেকার। দেশের শিল্প কারখানায় নিয়োজিত শ্রমিকসহ মুটে-মজুর, রিক্সাওয়ালা ইত্যাদি শ্রমজীবী জনগণের জীবন আজ গভীরভাবে সঙ্কটাপন্ন। এক কথায় বিভিন্ন শ্রেণির জনগণ জীবন-জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে দুরবস্থা তীব্রতর। কৃষি, শিল্প, শিক্ষাক্ষেত্রে চলছে সীমাহীন অরাজকতা। জনগণের সম্পত্তি ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। শিল্প বিকাশে কোন সুষ্ঠু পরিকল্পনা নেই। সাম্রাজ্যবাদী পুঁজি জাতীয় শিল্প প্রয়াসকে কণ্ঠরুদ্ধ করে রেখেছে। শিল্পক্ষেত্রসহ গোটা জাতীয় অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্রগুলি নিয়ন্ত্রণ করছে সাম্রাজ্যবাদ এবং চলছে সাম্রাজ্যবাদী নয়াঔপনিবেশিক নির্মম শোষণ ও লুণ্ঠন। জনগণের ঘাড়ে চেপে বসেছে প্রায় ৩,৮০০ কোটি ডলার বিদেশী ঋণ ও অনুদানের বোঝা। অবাধ আমদানী নীতি ও অসম বাণিজ্যের মাধ্যমে লুট করে নেওয়া হচ্ছে আমাদের দেশের সম্পদ। বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ৩২ হাজার কোটি টাকা। ঋণ ও বাণিজ্যিক ঘাটতি প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে ফলে প্রতিপদে শিল্প বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে এবং যেসব সামান্য শিল্প গড়ে উঠেছে তারও অগ্রগতি বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। এরই ফলশ্র“তিতে শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছে নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে না। জাতীয় অর্থনীতি সামগ্রিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছ। বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালাল জোতদার, মহাজন-আমলা দালাল পুঁজির নিরন্তর শোষণে কৃষক জনগণ জর্জরিত। প্রতিটি শিক্ষাঙ্গন মাস্তানদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। সামাজিক ক্ষেত্রেও বিরাজ করছে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি। হত্যা, গুম, খুন, ডাকাতি, রাহাজানি, নারীহত্যা, নারীধর্ষণ, প্রাত্যাহিক ঘটনায় পর্যবসিত হয়েছে। দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি এক সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তংচঙ্গা, প্রো, রিয়াং, খুমি, চাক, মুরং, বনযোগী, পাংকো, লুসাই, সিলেট-ময়মনসিংহ অঞ্চলে মনিপুরী, খাসিয়া, গারো, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন ঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা সাঁওতাল ইত্যাদি ক্ষুদ্র জাতিত্ত্বার সকল অধিকার উগ্র বাঙালী জাতীয়তাবাদের পদতলে পিষ্ট হচ্ছে। সে কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বাসমূহের বিকাশ আজ রুদ্ধ যার ফলশ্রুতিতে বৃহৎ বাঙালী জাতির সাথে ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বাসমূহে দ্বন্দ্ব জাতিগত সঙ্কটকে তীব্র করছে।
দেশের এই চরম অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সঙ্কট এবং জাতিগত বৈষম্যের কারণ সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও আমলা দালাল পুঁজির শোষণ। ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের আগমনের মধ্য দিয়ে বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আঁতাতে উপমহাদেশের গণতান্ত্রিক শক্তির বিকাশকে প্রতিহত করে যে ঔপনিবেশিক ব্যবস্থা কায়েম হয় সেই ব্যবস্থা মূলতঃ আজও অব্যাহত রয়েছে। যুগ যুগ ধরে এদেশের জনগণ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রাম করে আসছেন কিন্তু সংগ্রামের পরিণত আজও হয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর কালে বিশ্বব্যাপী জাতীয় মুক্তি, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের সংগ্রামের সুতীব্র হলে বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদ ঔপনিবেশিক শোষণকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে গ্রহণ করে নয়াঔপনিবেশিক কৗশল। এই পদ্ধতিতেই সাম্রাজ্যবাদের সৃষ্ট দালাল শ্রেণীর মাধ্যমে নয়াঔপনিবেশিক রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। ভারতবর্ষের জনগণের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আকাঙ্খাকে সাম্রাজ্যবাদের দালালরা ব্যবহার করে। বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের পরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তে প্রতিক্রিয়াশীল সাম্প্রদায়িক দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে সৃষ্টি হয় নয়াঔপনিবেশিক ভারত ও পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র। পাকিস্তান ও ভারত নামক যে রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়, তার চরিত্র হয় নয়াঔপনিবেশিক তাই পাকিস্তান আমলেও এই সমস্যা অব্যাহত থাকে। বাংলাদেশও সাম্রাজ্যবাদ-সামন্তবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক বিপ্লবের পরিননিতে সৃষ্টি হয়নি। ফলে অর্জিত হয় না প্রকৃত স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং জাতিসত্ত্বাসমূহের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার। বাংলাদেশ বর্তমানে একটি নয়া–ঔপনিবেশিক, আধা–সামন্ততান্ত্রিক রাষ্ট্র।
বাংলাদেশে সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদ ও আমলা মুৎসুদ্দী পুঁজি বিরোধী গণতান্ত্রিক বিপ্লবের কর্মসূচি রয়ে গেছে অসমাপ্ত। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের মধ্যকার প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রেক্ষিতে ১৯৭১ সালে সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ তার মদদপুষ্ট নয়াঔপনিবেশিক ভারতের শাসক-শোষকগোষ্ঠিকে দিয়ে বাঙালী জাতিসত্ত্বার আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের আকাঙ্খাকে কাজে লাগিয়ে উগ্র বাঙালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে সৃষ্টি করে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র। বাংলাদেশে কার্যকরি হয় সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের আধিপত্য ও প্রভাব বলয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের পরিকল্পনার প্রেক্ষিতে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে রুশ-ভারতের প্রাধান্যের বদলে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ক্ষমতাসীন হয় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দালাল খন্দকার মোস্তাক আহমেদ সরকারের ধারাবাহিকতায় জিয়াউর রহমান সরকার। সামনে আনা হয় ও পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হয় সাম্প্রদায়িক মতাদর্শ ও রাজনীতি। ১৯৮২ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত স্বৈরাচারি এরশাদ সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অবস্থান আরো সুসংহত করা হয়।
মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদীরা অপর পরাশক্তি সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ ও তার প্রভাববলয়কে বিপর্যস্ত করে “এক বিশ্ব ব্যবস্থা” (Uni-Polar World System) প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা কার্যকরি করার লক্ষ্যে বিশ্ব্যাপি তাদের কার্যক্রম অগ্রসর করে চলে ও সফল হয়। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনায় ১৯৯০ সালের ৪ ডিসেম্বর শহর কেন্দ্রীক ছাত্র যুব-মধ্যবিত্তদের আন্দোলন সংগ্রাম-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারি এরশাদ সরকারের পরিবর্তন ঘটানো হয়। নয়াঔপনিবেশিক শোষণ তীব্রতর করা, শ্রমিক-কৃষক-জনগণের আন্দোলন-সংগ্রামকে বিভ্রান্ত ও বিপথগামী করা এবং সাম্রাজ্যবাদের দালাল দলগুলোর দ্দন্দ্ব নিয়ন্ত্রিত করার জন্য সামনে আনা হয় ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার মডেল’। এ প্রক্ষিতে ১৯৯১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসে সাম্রাজ্যবাদের আরেক দালাল খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকার। এ সময়কালে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে ১৯৯১ সালে আলবেনিয়ায় সমাজতন্ত্রের পতন এবং পরাশক্তি হিসেবে সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের পতন। ফলে একক পরাশক্তি হিসেবে সামনে আসে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ। সাম্রাজ্যবাদী লগ্নিপুঁজির শোষণ-লুণ্ঠন তীব্রতর করার লক্ষ্যে জোরেসোরে সামনে আনা হয় মুক্ত বাজার অর্থনীতি এবং বিশ্বায়নের শ্লোগান ও কার্যক্রম। এ প্রেক্ষিতে আমাদের মত নয়াঔপনিবেশিক দেশগুলোতে বিশ্বব্যাংক (World Bank), আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (IMF), বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা (WTO), এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক (ADB), প্যারিস সাহায্য সংস্থা ইত্যাদি বিশ্ব সংস্থার নীতি-নির্দেশে শিল্পক্ষেত্রে ঢালাও বিরাষ্ট্রীয়করণ ও ব্যক্তিমালিকানার নীতি; কৃষি ক্ষেত্রে ভর্তুকি প্রত্যাহার ও ব্যক্তি মালিকানায় কৃষি উপকরণ বিপণন নীতি; অবাধ আমদানী নীতি; অবাধ মুদ্রা নীতি ইত্যাদি কার্যক্রম জোরদার করে। তাছাড়া সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ (FDI) , যৌথ বিনিয়োগ (Joint venture), রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (EPZ), শেয়ার বাজার ইত্যাদি ব্যবস্থাকে সম্প্রসারিত করা হয়।
বাজার ও প্রভাব বলয় নিয়ে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী শফক্ত সম্পর্কের পুনর্বিন্যাস প্রক্রিয়া চলে। এ প্রেক্ষিতে সামনে আসে মার্কিন নেতৃত্বে নাফটা (NAFTA), ফাটা (FATA), প্রক্রিয়া। ফ্রান্স, জার্মানকে সামনে রেখে অখন্ড ইউরোপ প্রক্রিয়া; এপেক (APEC)) প্রক্রিয়া যার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থাকলেও জাপান সামনে আসার দি থাকে। যা সাম্প্রতিক সময়ে জাপানকে সামনে রেখে পুঁজিবাদী চীনকে অন্তর্ভুক্ত করে পূর্ব এশিয়ার ১৩টি দেশকে নিয়ে পূর্ব এশিয়া জোট হিসেবে সামনে আসছে। তাছাড়া একক পরাশক্তি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে একবিশ্ব ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়া ও পুঁজিবাদী চীন বহুকেন্দ্রীয় বিশ্ব ব্যবস্থার শ্লোগান তুলে ধরে।
উপমহাদেশসহ পৃথিবীর সর্বত্র এর প্রভাব পড়ে। নয়াঔপনিবেশিক, আধা-সামন্তবাদী ভারতে সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের প্রাধান্যের বদলে প্রতিষ্ঠিত হয় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রাধান্য। এ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে রুশ-ভারতপন্থী দল আওয়ামী লীগ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের পুরোপুরি দালালে পরিণত হয়। ভারতের বিশাল বাজার, সস্তা শ্রম, বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ এবং ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের প্রেক্ষিতে প্রধান আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে ভারতের রণনীতিগত গুরুত্ব বেশি হওয়ার কারণে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো ভারতকে কেন্দ্র করে এতদ্বাঞ্চলে তাদের সামগ্রিক বিন্যাস-পুনর্বিন্যাস ঘটাচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদ বিশেষ করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে নয়াঔপনিবেশিক শোষণ-লুণ্ঠন তীব্রতর করা, শ্রমিক-কৃষক-জনগণকে আন্দোলন-সংগ্রাম বিপ্লবের পথ থেকে দূরে সরিয়ে রেখে বিভ্রান্ত, বিভক্ত ও বিপথগামী করার লক্ষ্যে এবং তাদের দালাল দলগুলোর দ্বন্দ্ব নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য তথাকথিত গণতান্ত্রিক সরকারের সাধারণ কর্মনীতির আলোকে এদেশে অগ্রসর করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার মডেল। উপরোক্ত প্রেক্ষাপটে সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনায় ১৯৯৬ সালের ১২ জুন বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসে সাম্রাজ্যবাদের দালাল খাদেলা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকারের পরিবর্তে আরেক দালাল শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার। সাম্রাজ্যবাদের দালাল বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সরকার সাম্রাজ্যবাদের তুলে ধরা মুক্ত বাজার অর্থনীতি ও বিশ্বায়ন কার্যকরীকরণ জোরদার করায় শিল্প, কৃষিসহ গোটা জাতীয় অর্থনীতিতে সঙ্কট আরো ঘনীভূত করে। বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ- গ্যাস, সম্ভাব্য তেল ও প্রাকৃতিক সম্পদ অবাধে লুটপাট চালানোর জন্য সাম্রাজ্যবাদী বহুজাতিক কোম্পানীর হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনার সাথে সম্পৃক্ত ভারতের শাসক শোষকগোষ্ঠির স্বার্থে আওয়ামী লীগ সরকার একের পর এক জাতীয স্বার্থ বিরোধী চুক্তি সম্পাদন ও কার্যকরী করে চলে।
তিন শত্রুর শোষণ-লুণ্ঠনকে তীব্রতর করা এবং শ্রমিক-কৃষক-জনগণের আন্দোলন-সংগ্রাম দমন করার লক্ষ্যে একের পর এক কালা-কানুন জারি করে সরকারের স্বৈরশাসন তীব্র থেকে তীব্রতর করে। বভাংলাদেশে ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতা বহির্ভূত প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলাম ঐক্যজোট ইত্যাদি সকল দলই সাম্রাজ্যবাদের দালাল। তাই শোষকগোষ্ঠির ক্ষমতার পালাবদলে সাম্রাজ্যবাদের দালাল দলগুলো যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন তারা তিন শত্রুর স্বার্থের সেবা করবে, এতে শ্রমিক-কৃষক-জনগণের লাভ নেই।
ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সহ বাম নামধারী সংশোধনবাদী দলগুলো মুখে কিছু বামপন্থী কথাবার্তা বললেও “৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির ঐক্য” ও “মৌলবাদ বিরোধিতা” নামে ধারাবাহিকভাবে আওয়ামী লীগের লেজুড়বৃত্তি করে। বাম নামধারী এই সব সংশোধনবাদী দল পুঁজিবাদী চীনকে সমাজতান্ত্রিক আখ্যায়িত করে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যে সংশোধনবাদী নতুন ধারা কার্যকরি রয়েছে তারা “বিকল্প ধারা” হিসেবে আখ্যায়িত করে কর্মি ও জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালায়।
এ পরিস্থিতিতে জাতীয় জীবনের প্রয়োজন মিটিয়ে জনগণের আকাঙ্খাকে মৌলিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে নিতে পারে সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক শক্তি। প্রচলিত আর্থ-সামাজিক কাঠামো অটুট রেখে স্বৈরতন্ত্রের অধীনে প্রচলিত নির্বাচন পদ্ধতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের মুক্তি অর্জন সম্ভব নয়। তাই এই আর্থ-সামাজিক কাঠামো পরিবর্তনের জন্য জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব সফল করার লক্ষ্যে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলা ও অগ্রসর করার পরিপ্রেক্ষিত নির্বাচনের বিষয়টা বিবেচনা করা যেতে পারে। এই আন্দোলনের মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদ বিরোধী প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে হবে। আজ তাই গণতান্ত্রিক শক্তিকে বিকল্প শক্তি হিসেবে সামনে আসতে হবে। এ জন্য সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও আমলা মুৎসুদ্দি পুঁজি বিরোধী সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে চলমান আন্দোলনকে সমাজ ব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে পরিচালিত করতে হবে। এই ঐক্য বিভিন্ন শ্রেণীর ঐক্য। এই ঐক্য জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লরে ঐক্য। এটা নিছক রাজনৈতিক দলসমূহের তথাকথিত ঐক্য নয়। এদেশের দালাল রাজনৈতিক দলসমূহ সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তের অংশ হিসেবে বিভিন্ন শ্রেণীকে বিভ্রান্ত ও বিভক্ত করে তাদের স্বার্থ হাসিল রছে। দালাল রাজনৈতিক দলগুলি ঐক্যবদ্ধ হলেই তাদের অঙ্গ সংগঠনসমূহও ঐক্যবদ্ধ হয় ্এবং দালাল বুর্জোয়া শ্রেণীর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। ফ্রন্ট গঠনের এই নয়া ঔপনিবেশিক কৌশলের বিপরীতে শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি জনগণ, মধ্যবিত্ত, বুদ্ধিজীবী, ছাত্রসহ সকল গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার লক্ষ্যে নিম্নলিখিত কর্মসূচির ভিত্তিতে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গঠনের আহ্বান জানানো হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সাম্রাজ্যবাদ ও তার দুই বিশ্বস্ত দালাল সামন্ত ও আমলা মুৎসুদ্দি পুঁজির একনায়কত্ব। এদেশের জনগণের ওপর চেপে বসে আছে তিন শক্তি- সাম্রাজ্যবাদ ও তার দুই দালাল সামন্তবাদী জোতদার-মহাজন ও আমলা মুৎসুদ্দি পুঁজি। এই তিন শোষণের যাতাকলের নীচে পিষ্ট হচ্ছে জাতীয় জীবনের সমস্ত আশা আকাঙ্খা। যে রাষ্ট্র কায়েম হয়েছে সেই রাষ্ট্রব্যবস্থা এই তিন শোষণের ধারকবাহক। এই রাষ্ট্র ব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তন ঘটিয়ে শ্রমিক-কৃষক, মধ্যবিত্ত-বুদ্ধিজীবী ও জাতীয় বুর্জোয়াদের স্বার্থের পতাকাবাহী সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদ ও আমলা মুৎসুদিদ্দ পুঁজি বিরোধী শ্রমিক-কৃষক, জনগণের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করতে হবে। তাহলেই জাতীয় জবিনে সৃষ্টি হবে গতি এবং দেখা দেবে সৃজনশীল শ্রমের এক মহান বিকাশ। জনজীবনের শোষণ পীড়ন ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির আর কোন বিকল্প পথ নেই। তাই আসুন এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে নিম্নলিখিত কর্মসূচিকে সামনে রেখে সারা দেশব্যাপি গড়ে তুলি জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট।
কর্মসূচি
১। রাজনৈতিক
বাংলাদেশ থেকে সাম্রাজ্যবাদ বিশেস করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও আমলা মুৎসুদ্দি পুঁজির শোষণ ও শাসনকে উৎখাত করে জাতীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে সংগ্রাম করা।
২। রাষ্টীয় কাঠামো।
জনগণই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী এবং জনগণ নিম্নোক্ত প্রতিষ্ঠানগুলির মাধ্যমে সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ করবে।
(ক) এই রাষ্ট্রের কার্যকলাপ পরিচালনা করবে সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ, আমলা-মুৎসুদ্দি পুঁজি বিরোধী গণতান্ত্রিক সরকার। সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ, আমলা মুৎসুদ্দি পুঁজি বিরোধী শাসনতন্ত্র প্রণীত হবে। এই শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করা হবে সংবিধান সভার (Constituent Assembly) মাধ্যমে। ১৮ বছর বয়স থেকে সকলের থাকবে ভোটের অধিকার। এই শাসনতন্ত্রে থাকবে এক কক্ষ বিশিষ্ট সরকার। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে অবাধ নির্বাচন হবে। প্রতিষ্ঠিত হবে গণপরিষদ (People Assembly)। গণপরিষদ একদিকে আইন প্রণয়ন করবে এবং তা কার্যকরী করবে। গণপরিষদ সদস্যদের কার্যকলাপের জন্য জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। গণপরিষদের সদস্যদের কার্যকলাপের পরিপ্রেক্ষিতে জনগণের অধিকার থাকবে তাদের অপসারণ (Recall) করার। মন্ত্রিসভা গণপরিষদের নিকট দায়ী থাকবে।
(খ) জাতীয় পর্যায়ে ছাড়াও স্থানীয় পর্যায়ে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সামঞ্জস্যপূর্ণ সংস্থাসমূহ গড়ে তোলা হবে।
(গ) প্রত্যেকটি সংস্থার আওতাধীন এলাকার জন্য দেওয়ানী, ফৌজদারী ও শ্রম সংক্রান্ত ইত্যাদি বিষয়ক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য এক বা একাধিক নির্বাচিত ও সকল প্রকার প্রশাসনিক প্রভাবমুক্ত বিচারকের সমন্বয়ে আদালত থাকবে। সকল মামলার নিষ্পত্তির জন্য সহজ, সরল ও ব্যয়শূন্য পদ্ধতিগত আইনের প্রবর্তন করা হবে। প্রশাসন বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ আলাদা করা হবে। আমলাতন্ত্রের অভিশাপ থেকে প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে মুক্ত করা হবে।
(ঘ) সকল প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদেরকে সামরিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা হবে।
(ঙ) বিভিন্ন পর্যায়ে জনগণের সদস্য ও নির্বাচিত কর্মকর্তা, বিচারকসহ রাষ্ট্রর সকল কর্মচারীর বেতন শ্রমিকের বেতনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্ধারিত হবে।
(চ) সর্বস্তরের নির্বাচিত সদস্য, কর্মকর্তা ও বিচারক নির্বাচকমন্ডলী কর্তৃক যে কোন সময়ে অপসারণযোগ্য হবে।
(ছ) সর্বতোভাবে প্রশাসনিক ব্যয় হ্রাস করতে হবে এবং প্রশাসনকে গণমুখী করা হবে।
৩। মৌলিক অধিকার।
(ক) অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে গণ্য হবে এবং এসব অধিকার ভোগের সকল প্রকার সুযোগের নিশ্চয়তা বিধান হবে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে।
(খ) বাক, ব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাসহ প্রত্যেক নাগরিকের মত প্রকাশের, বিভিন্ন ধরনের সংগঠনে সংগঠিত হওয়ার, সমাবেশের স্বাধীনতা, নির্বাচনে নানাভাবে অংশ নেওয়ার, রাষ্ট্রীয় তথ্য জানার, রাষ্ট্রীয় কাজে অংশ নেওয়ার অধিকার থাকবে এবং কোনভাবে তা খর্ব করা যাবে না।
(গ) প্রত্যেক নাগরিকের গতিবিধির অবাধ স্বাধীনতা এবং বিচারকের পরওয়ানা ব্যতীত গ্রেফতার করা কিংবা বিনা বিচারে আটক রাখার মাধ্যমে অথবা অন্য কোন বেআইনীভাব এ অধিকার খর্ব করা চলবে না।
(ঘ) বিশেষ ক্ষমতা আইন, জননিরাপত্তা আইন, প্রেস এণ্ড পাবলিকেশন্স এ্যাক্ট, অভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইন, চলচ্চিত্র সংসদ রেজিষ্ট্রেশন এ্যাক্ট, বিভিন্ন ধরনের সেন্সরশীপ, ধর্মঘট নিষিদ্ধকরণ আইন, রাজনৈতিক, ট্রেড ইউনিয়ন, সাংস্কৃতিক, প্রকাশনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিদ্যমান সকল প্রকার কালাকানুন পরিপূর্ণ উচ্ছেদ সাধন করা হবে।
৪। অর্থনৈতিক।
(ক) জাতীয় অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণকারী সমস্ত রকমের সাম্রাজ্যবাদী পুঁজি ও গণবিরোধী সাম্রাজ্যবাদীদের সেবাদাস, আমলা মুৎসুদ্দি পুঁজিপতিদের পুঁজি বাজেয়াপ্ত করা হবে। ব্যাংক, বীমা, বিমান ও বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা, রাষ্ট্রীয় খাতে ভারী মূল শিল্প অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গড়ে তোলা, ভোগ্য পণ্য প্রস্তুতকারক হালকা শিল্পের ওপর যথাযথ দৃষ্টি রাখা, কুটীর শিল্প ও ক্ষুদ্র শিল্প বিকাশের পথে সমস্ত বাধা দূর করা অর্থাৎ শিল্পীয় অর্থনীতি গড়ে তোলা হবে। বৈদেশিক বাণিজ্য পরিচালনা করবে রাষ্ট্র। ব্যক্তি মালিকানা খাতের ক্ষেত্রেও প্রয়োজনীয় সুবিধার ব্যবস্থা নেয়া হবে।
(খ) গণবিরোধী সামন্তবাদী-জোতদারী মহাজনী ব্যবস্থার অবসান ঘটানো এবং ‘কৃষকের হাতে জমি’ এই নীতির ভিত্তিতে ভূমি সংস্কার করা হবে। জোতদার-মহাজনদের জমি বিনা ক্ষতিপূরণে বাজেয়াপ্ত করে ভূমিহীন গরীব কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। কৃষিযোগ্য সরকারী খাস জমিও ভূমিহীন গরীব কৃষকদের ভিতর বন্টন করা হবে। জলার ওপরে মৎস্যজীবীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা ও ইজারাদারি প্রথা বাতিল করা হবে। সরকারী জলা, জোতদার-মহাজনদের জলা, গরীব ও নিঃস্ব মৎস্যজীবীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
(গ) ধান, পাট, ইক্ষু, তুলা ও তামাকসহ সকল ধরনের কৃষি পণ্যের খোদ উৎপাদক, ক্ষুদ্র ও মাঝারী কৃষক এবং মৎস্যজীবী, কামার, কুমার, তাঁতী ও মুচি ইত্যাদি পেশাজীবীরা যাতে তাদের উৎপাদিত পণ্যের মূল্য উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণভাবে পায় তার নিশ্চয়তা বিধান করা এবং এই সব পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের তৎপরতা বন্ধ করা ও সকল প্রকার মহাজনী প্রথা বাতিল করা হবে।
(ঘ) সারা দেশে রেশনিং ব্যবস্থা প্রবর্তন করা ও তার মাধ্যমে খাদ্য, বস্ত্রসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা, যাতায়াতের ব্যয় ও সকল প্রকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
(ঙ) ভূমি ও বিভিন্ন পেশা থেকে উৎখাত হওয়া এবং স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন কারিগরি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাপ্রাপ্ত কর্মক্ষম জনগণের বেকারত্ব দূর করে তাদের জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থান করা হবে।
৫। শ্রমিক ও শ্রমনীতি।
(ক) জাতীয় নিম্নতম মজুরি কমিশন ঘোষণা করা হবে। বিরাষ্ট্রীয়করণ ও হোল্ডিং কোম্পানী গঠন বন্ধ করা হবে। সরকারী ছত্রছায়ায় শিল্প এলাকায় শ্বেত সন্ত্রাস বন্ধ করা এবং শ্রমিক ছাঁটাই, লে-অফ, লকআউট বন্ধ করা ও বন্ধ কল-কারখানা অবিলম্বে চালু করা হবে।
(খ) কারখানা শ্রমিক, কৃষি শ্রমিক এবং সকল সরকারী ও বেসরকারী গণকর্মচারীর জন্য বাঁচার মত মজুরি নিশ্চিত করা হবে।
(গ) কারখানা শ্রমিক, অফিস কর্মচারী ও গৃহহীনদের জন্য বাসসস্থানের উপযুক্ত ব্যবস্থা করা এবং বাসস্থানগুলিতে স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থা করা ও সীমিত আয়ের লোকদের সংগতির মধ্যে বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।
(ঘ) আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থা (আইএলও)-র কনভেনশন অনুযায়ী সকল কল কারখানা প্রতিষ্ঠানে ও কৃষি কাজে নিয়োজিত শ্রমিকসহ সকল শ্রমিক কর্মচারীর অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হবে।
শ্রমিক নিয়োগ স্থায়ী অধ্যাদেশ ১৯ (ক) আইনের ধারা, আই আর ও ৭ (ক) ধারাসহ সমস্ত কালাকানুন বাতিল করা হবে।
৬। চিকিৎসা।
(ক) জনগণের চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্প্রসারণ করা ও সহজলভ্য করা এবং চিকিৎসাকে সার্বজনীন করার জন্য মাতৃমঙ্গল কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। এ সমস্ত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিনামূল্যে পর্যাপ্ত ঔষধ সরবরাহ করা, চিকিৎসা সরঞ্জামাদি সরবরাহ নিয়মিত করা, প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক ও সেবিকা নিয়োগ করা এবং সামগ্রিকভাবে চিলিৎসা ব্যবস্থার সুষ্ঠু পরিচালনা করা হবে।
(খ) অনাথ, আতুর, পংগু ও প্রবীনদের দায়-দায়িত্ব বহন করবে সরকার।
৭। শিক্ষা ও সংস্কৃতি।
(ক) সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও আমলা মুৎসুদ্দি পুঁজির ধারক ও বাহক অশ্লীল, অশোভন, অগণতান্ত্রিক ও কর্মবিমুখ সংস্কৃতির বিলোপ সাধন করা হবে এবং তার স্থলে শালীন, শোভন, কর্মপ্রেরণাময় ও জাতীয় গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির প্রবর্তন করা হবে তার বিকাশ ঘটানো হবে।
(খ) মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা প্রদানের নীতি কার্যকর করে, ঔপনিবেশিক আমল থেকে প্রচলিত গণবিরোধী ও অবৈজ্ঞানিক শিক্ষা ব্যবস্থা বাতিল করে তার স্থলে সার্বজনীন, বিজ্ঞানভিত্তিক গণমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে।
(গ) শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে সকল প্রকার আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার করে তার স্থলে সম্পূর্ণরূপে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন করা হবে এবং শিক্ষকদের শিক্ষাগত মানোন্নয়নে রাষ্ট্রীয় সহায়তার নিশ্চয়তা বিধান করা হবে।
(ঘ) নির্দিষ্ট একটা মান পর্যন্ত শিক্ষাকে সকল নাগরিকের জন্য বাধ্যতামূলক করা হবে এবং মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষাকে অবৈতনিক করা হবে।
(ঙ) সকল পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের পেশাগত মানোন্নয়নের জন্য বিশেষ শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হবে এবং ব্যাপক হারে পাঠাগার স্থাপন কর হবে।
(চ) শিক্ষাক্ষেত্রে শ্রেণীগত বৈষম্য দূর করা হবে। বর্তমানে প্রচলিত একাধিক ধরনের পাঠ্যক্রমের প্রচলিত শিক্ষানীতি সম্পূর্ণভাবে বর্জন করে এক ও অভিন্ন পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা ও কার্যকর করা হবে।
৮। নারী সমস্যা।
(ক) পুরুষ ও নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, নারী-পুরুষের মধ্যকার সকল প্রকার বৈষম্য দূর করা এবং নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
(খ) নারী শ্রমিক ও যে কোন কাজে রত সকল মহিলার গর্ভাবস্থায় প্রসবের আগে ও পরে ২ মাস করে ৪ মাসের সবেতন ছুটির ব্যবস্থা করা হবে। কাজ করার সময় মায়েদের অবর্তমানে শিশুদের তদারক করার জন্য নার্সারীস্কুল খোলা হবে।
৯। জাতি সমস্যা।
সংখ্যালঘু জাতিসত্ত্বাসমূহের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও বিচ্ছিন্ন হওয়ার অধিকার স্বীকার রে নেওয়া হবে। বাঙালী জাতিসত্ত্বার বিকাশ ও সমস্ত সংখ্যালঘু জাতিসত্ত্বার বিকাশ একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হবে না, হবে পরিপূরক। এই সমস্ত সংখ্যালঘু জাতিসত্ত্বার ভাষা, ইতিহাস, কৃষ্টিকে বিকশিত করে তোলা হবে। উগ্র বাঙালী জাতীয়তাবাদের সমস্ত রকম প্রকাশের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা ও তাকে বাতিল করা হবে। সাথে সাথে সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে।
১০। বন্যা সমস্যা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ।
(ক) বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা হবে।
(খ) উপযুক্ত ড্রেজিং ব্যবস্থা চালু এবং ত্রুটিযুক্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা বাতিল করে সেচ ব্যবস্থাসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণের সুষ্ঠু বৈজ্ঞানিক কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
১১। ধর্ম।
এদেশের জনগণের ধর্মীয় অধিকারসমূহকে পরিপূর্ণভাবে স্বীকার ও রক্ষা করা হবে। প্রত্যেকের ধর্মীয় অধিকার পালনের ক্ষেত্রে নিশ্চয়তা বিধান করা হবে কিন্তু ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা চলবে না। সমস্ত রকমের সাম্প্রদায়িকতা উচ্ছেদ করা হবে।
১২। পররাষ্ট্রনীতি।
(ক) বিশ্বের দেশে দেশে সাম্রাজ্যবাদ, ইহুদীবাদ, বর্ণবাদ ও স্বৈরতন্ত্র বিরোধী জনগণের গণতান্ত্রিক ও বিপ্লবী সংগ্রামে একাত্মতা প্রকাশ, সমর্থন ও পরিস্থিতি অনুযায়ী সহযোগিতা করা হবে।
(খ) মার্কিন সাম্রাজ্যবাদসহ সকল সাম্রাজ্যবাদ, সাম্রাজ্যবাদের দালাল ভারত সরকারসহ বিদেশের সাথে সকল ধরনের অসম অসম্মানজনক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ও সাংস্কৃতিক ইত্যাদি চুক্তি বাতিল করা হবে।
১৩। বিবিধ।
(ক) বকেয়া সকল প্রকার কৃষি ঋণ মওকুফ করে সহজ শর্তে কৃষি ঋণ প্রদান ও ঋণ আদায়ের ক্রোকী পরোয়ানা জারী করে কৃষককে হয়রানী ও জমি থেকে উচ্ছেদ বন্ধ করা হবে।
(খ) ভূমি উন্নয়নের নামে সকল প্রকার অন্যায্য কর আদায় বন্ধ করা হবে।
(গ) সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদ বিরোধী প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর থেকে পুলিশী নির্যাতন বন্ধ করা, কারাগারে আটককৃত সকল রাজনৈতিক বন্দীকে মুক্ত করা, বিনা বিচারে কারাগারে অন্তরীণ রাখা বন্ধ করা, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও হুলিয়া প্রত্যাহার করা এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল করা হবে।
(ঘ) বাংলাদেশে সকল প্রকার সাম্রাজ্যবাদী শোষণ বন্ধ করার লক্ষ্যে বিদেশী সাহায্য সংস্থা, এনজিও এবং তাদের তল্পীবাহকদের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনতাকে সচেতন করা এবং তাদের তৎপরতা প্রতিরোধ করা হবে।
(ঙ) ঘুষ, দূর্নীতি, প্রশাসনিক ও পুলিশী হয়রানী, গুন্ডামী ও মাস্তানী প্রতিহত করা হবে।
উপরোক্ত কর্মসূচিকে কার্যকরী করার আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলা, বিকশিত করে তোলা ও জয়যুক্ত করার জন্য আজ এগিয়ে আসতে হবে সমস্ত সাম্রাজ্যবাদ, সমন্তবাদ ও আমলা মুৎসুদ্দি পুঁজি বিরোধী শ্রেণী, শক্তি ও ব্যক্তিকে। ইতিহাস আজ ামাদের উপর এ ঐতিহাসিক দায়িত্ব অর্পণ করেছে। আসুন এদেশের মহান সন্তান হিসেবে এ ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করে সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ, আমলা দালাল পুঁজি মুক্ত এক বাংলাদেশ গড়ে তুলি। একথা সত্য যে, মুক্তির সূর্য তোরণকে উদ্দেশ্য করে আমাদের যে যাত্রা সে পথে রয়েছে অনেক চড়াই-উৎরাই, সঙ্গে সঙ্গে পথ হল আঁকা-বাঁকা এবং পথে রয়েছে কাঁটা বিছানো। এই পথে অগ্রসর হতে রক্ত ঝরবে অঝোরে কিন্তু সমস্ত রক্ত, অশ্রু ও বেদনা ভিতর দিয়ে জন্ম নেবে মুক্তির লাল সূর্য। তাই এই পথই আমাদের পথ।
গঠনতন্ত্র
আদর্শ, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য
(১) এদেশে বা উপমহাদেশে কোথাও কখনো প্রকৃত গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা ছিলো না এবং এখনো নেই। উপমহাদেশের সর্বত্র ঔপনিবেশিক সামন্ততান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র নয়াঔপনিবেশিক আধাসামন্ততান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্রে রূপান্তরিত হয়েছে মাত্র। এ দেশে রাষ্ট্রযন্ত্রের যে সব প্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠান আছে বা ছিলো তার কোনটিই প্রকৃত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান নয়। এ দেশে গণতন্ত্রের নামে ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার শ্লোগানে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আন্দোলন হয়েছে এবং হচ্ছে। প্রকৃতার্থে এই সকল আন্দোলনের অধিকাংশই সঠিক গণতান্ত্রিক আন্দোলন নয়। সুতরাং জাতীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জনগণের বিভিন্ন অংশের আন্দোলনকে জাতীয় পর্যায়ের আন্দোলনে রূপ দেওয়ার উপলব্ধির ভিত্তিতে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট জন্ম নেয়।
(২) জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও আমলা দালাল পুঁজি বিরোধী সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক আদর্শ ও মূল্যবোধ প্রচারের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে গঠিত একটি ফোরাম।
(৩) এ দেশের নয়াঔপনিবেশিক আধাসামন্ততান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্রের ও এ ধরণের স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রযন্ত্রের নিয়ন্ত্রণলাভে অভিলাসীদের স্বরূপ উন্মোচন করা, সাম্রাজ্যবাদ-সামন্তবাদ-আমলা দালাল পুঁজি বিরোধী জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থার তাৎপর্য জনসমক্ষে তুলে ধরা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সমস্যাবলীর ভিত্তিতে আন্দোলন করা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। ফ্রন্টের গঠন প্রক্রিয়া
(৪) এই ফোরামের নাম হবে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট। ইংরেজী পরিভাষায় National Democratic Front সংক্ষেপে NDF (এনডিএফ)।
(৫) এই সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঢাকায় থাকবে।
(৬) সংগঠনের পতাকা– পতাকার রং হবে গাঢ় লাল। পতাকার উপরের দিকে বাম কোণে থাকবে সাদা রং-এর পাঁচ কোণ বিশিষ্ট তারকা। পতাকার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত হবে ৩ঃ২।
(৭) সদস্য হবার যোগ্যতা।
(ক) কমপক্ষে ১৮ বৎসর ও তার উর্ধ্বে যে কোন বয়সের সুস্থ সক্ষম সক্রিয় গণমুখী বাংলাদেশের যে কোন নাগরিক, নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল স্তরের ব্যক্তি, গোষ্ঠি বা শ্রেণী ও গণসংগঠন, পেশাজীবী সংগঠন, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টর ঘোষণাপত্র, গঠনতন্ত্র ও কর্মসূচির প্রতি আস্থা স্থাপন করলে এবং সে অনুযায়ি কাজ করতে ইচ্ছুক থাকলে তিনি এ সংগঠনের সদস্য হতে পারবেন।
(খ) প্রাথমিক সদস্য হবার জন্য ৩ (তিন) টাকা মাত্র চাঁদা দিতে হবে এবং প্রতি দুই বছরে ১ (এক) টাকা মাত্র চাঁদা প্রদান করে সদস্যপদ নবায়ন করতে হবে।
(গ) বিভিন্ন কমিটি কর্তৃক আদায়কৃত চাঁদার ১/৪ অংশ উচ্চতর কমিটিকে প্রদান করতে হবে। প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহের আদায়কৃত চাঁদার ২৫% কেন্দ্রীয় কমিটিকে প্রদান করতে হবে।
(৮) জাতীয় কাউন্সিল ঃ
(ক) প্রত্যেক সাংগঠনিক জেলা ও নগরের প্রতি ৫০ (পঞ্চাশ) জন প্রাথমিক সদস্য হতে একজন কাউন্সিলার মনোনীত হবে।
ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সকল কর্মকর্তা ও সদস্য পদাধিকার বলে কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে পরিগণিত হবেন। ফ্রন্টের সাথে তালিকাভূক্ত প্রত্যেকটি গণসংগঠন ও শ্রেণী সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সকল কর্মকর্তা ও সদস্যগণ পদাধিকার বলে কেন্দ্রীয় কাউন্সিলার হিসেবে গণ্য হবে। এ ভাবে মনোনিত সদস্যবৃন্দ সম্মিলিত ভাবে জাতীয় কাউন্সিল বিবেচিত হবে। বিশেষ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় কমিটি নির্দিষ্ট সংখ্যক কউন্সিলার মনোনিত করতে পারবেন। তবে মনোনিত কাউন্সিলারের সংখ্যা কেন্দ্রীয় কমিটির এক-পঞ্চমাংশের বেশি হবে না।
(খ) জাতীয় কাউন্সিল নীতি নির্ধারণের ব্যাপারে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হবে। সংগঠনের ঘোষণাপত্র, গঠনতন্ত্র ও কর্মসুচির পরিবর্তন, পরিবর্ধন করার ক্ষমতা একমাত্র এই কাউন্সিলেরই থাকবে। কাউন্সিল কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করবে। কাউন্সল কর্তৃক নির্ধারিত নীতি অনুসারে কেন্দ্রীয় কমিটি তার কার্যক্রম পরিচালনা করতে ও কেন্দ্রীয় কমিটি তার সমস্ত কার্যকলাপের জন্য কাউন্সিলের নিক জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে। প্রতি ২ বছর অন্তর একবার কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে।
(গ) কমপক্ষে কাউন্সিল অধিবেশনের ৩ মাস পূর্বে ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির কাউন্সিল অধিবেশনের তারিখ নির্ধারণ করবে এবং প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাদি গ্রহণ করার জন্য সকল মহলকে নোটিশ প্রদান করবে। এক-তৃতীয়াংশের উপস্থিতি কোরাম বলে গণ্য হবে।
(ঘ) বিশেষ পরিস্থিতির উদ্ভব হলে অথবা জাতীয় কাউন্সিল ১/৩ (এক তৃতীয়) অংশ সদস্য লিখিত আবেদন জানালে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উক্ত আবেদনের ৪৫ (পঁয়তাল্লিশ) দিনের মধ্যে কমপক্ষে ২১ (একুশ) দিনের নোটিশে বিশেষ কাউন্সিল অধিবেশন আহ্বান করবেন। কাউন্সিলে ২/৩ (দুই তৃতীয়) অংশ কাউন্সিলার উপস্থিত হলে কাউন্সিল বৈধ বিবেচিত হবে।
(৯) কেন্দ্রীয় কমিটি।
(ক) সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও আমলা দালাল পুঁজি বিরোধী লড়াইতে নিয়োজিত সমস্ত গণসংগঠনের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি ও ব্যক্তিদের নিয়ে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের কেন্দীয় কমিটি গঠিত হবে। এতে প্রতিটি গণসংগঠন ও শ্রেণী সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব থাকবে।
(খ) সভাপতি ও ৬ জন হ-সভাপতি মোট ৭ (সাত) জন সমন্বয়ে সভাপতিমন্ডলী গঠিত হবে। সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে অন্যান্য সম্পাদকের সমন্বয়ে মোট ৯ (নয়) জন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে সম্পাদকমন্ডলী। অবশিষ্ট নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে গণ্য হবেন ও কাজ করবেন। সভাপতিমন্ডলীর সভাতে সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত থাকবেন এবং সম্পাদকমন্ডলীর সভাতে সভাপতি পদাধিকার বলে সভাপতিত্ব করবেন। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা হবে অনুর্ধ্ব ৬১ (একষট্টি) জন। কমিটিতে নিম্নোক্ত কর্মকর্তা নির্বাচিত হবেন।
সভাপতি- ১ জন, সহ-সভাপতি- ৬ জন, সাধারণ সম্পাদক- ১ জন, সহ-সাধারণ সম্পাদক- ২ জন, সাংগঠনিক সম্পাদক- ১ জন, প্রচার সম্পাদক- ১ জন, দপ্তর সম্পাদক- ১ জন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক- ১ জন, যুব বিষয়ক সম্পাদক- ১ জন, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক- ১ জন, কোষাধ্যক্ষ- ১ জন ও সদস্য সংখ্যা- ৪৪ জন, সর্বমোট ৬১ (একষট্টি) জন।
(১০) কেন্দ্রীয় কমিটির ক্ষমতা ঃ
(ক) নিম্নতর কমিটিসমূহকে অনুমোদন দান, নিম্নতর কমিটিসমূহের সম্মেলন, সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ ও নির্বাচনের নির্দেশ প্রদান এবং প্রয়োজন বোধে কোন কমিটি বাতিল, তদস্থলে এডহক কমিটি গঠনের এখতিয়ার এই কমিটির থাকবে। জাতীয় কাউন্সিল বা জরুরী পরিস্থিতিতে বিশেষ কাউন্সিল অধিবেশন আহ্বান করতে পারবে। প্রয়োজনে সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে।
(খ) সংগঠনের কোন সদস্য সংগঠনের আদর্শ, উদ্দেশ্য, ঘোষণাপত্র অথবা গঠনতন্ত্র বিরোধী কাজ করলে বা লিপ্ত থাকলে তার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে শাস্তিমূলক ববস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে শাস্তি প্রদানের পূর্বে অভিযুক্ত সদস্যদের কারণ দর্শানোর নোটিশ ও আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার থাকবে। কেন্দ্রীয় কমিটি সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনবোধে নিয়ম-কানুন প্রণয়ন করতে পারবেন। তবে তা কোন ক্রমেই গঠনতন্ত্রের পরিপন্থি হবে না।
(১১) কেন্দ্রীয় কমিটির সভা ঃ
(ক) সভাপতির সাথে পরামর্শ করে অথবা সভাপতির নির্দেশে সাধারণ সম্পাদক সভা আহ্বান করবে। সাধারণ সম্পাদক অনুপস্থিত থাকলে বা সভা আহ্বান করতে না চাইলে সভাপতি নিজেই বা তার নির্দেশে সহ-সাধারণ সম্পাদক সভা আহ্বান করতে পারবেন।
(খ) আলোচ্যসূচি, স্থান ও সময়ের উল্লেখ করে কমপক্ষে ১০ (দশ) দিনের নোটিশে সভা আহ্বান করবে। জরুরী পরিস্থিতি উদ্ভব হলে অথবা সময়ের অভাবে সংবাদপত্র মারফত নোটিশ দেয়া যাবে। ১/৩ (এক তৃতীয়) অংশ উপস্থিত হলে সভার কোরাম হবে।
(১২) কেন্দ্রীয় কমিটির কর্মকর্তাবৃন্দের ক্ষমতা ও দায়িত্ব ঃ
(ক) সভাপতি- সভাপতি সংগঠনের প্রধান হিসেবে গণ্য হবেন। সংগঠনের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে কি না সে সম্পর্কে লক্ষ্য রাখার মূল দায়িত্ব তার ওপর ন্যস্ত। তিনি জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশন ও কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করবেন, আবশ্যক মত গঠনতন্ত্রের যে কোন ধারা ব্যক্ত করে রুলিং দিতে পারবেন। সংগঠনের কোন সদস্য সংগঠনের আদর্শ, উদ্দেশ্য, ঘোষণাপত্র, গঠনতন্ত্র বিরোধী কাজ করলে বা লিপ্ত থাকলে এবং সংগঠনসমূহ ক্ষতিকারক হলে তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। তবে এ পদক্ষেপ কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক অনুমোদন করে নিতে হবে।
(খ) সহ-সভাপতি- সভাপতির অনুপস্থিতিতে সহ-সভাপতিবৃন্দের মধ্য হতে ক্রমানুসারে একজন সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন। কোন কারণবশতঃ সভাপতি ৪৫ (পঁয়তাল্লিশ) দিন বা তদূর্ধ্বকাল সংগঠনের কার্যক্রম হতে অনুপস্থিত থাকলে সে ক্ষেত্রে ক্রমানুসারে একজন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক নিয়োজিত হবেন। এ ছাড়া সহ-সভাপতিবৃন্দ সভাপতির নির্দেশিত ও কেন্দ্রীয় কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন।
(গ) সাধারণ সম্পাদক- তিনি হবেন প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যনির্বাহী কর্মকর্তা। সভাপতির সহিত পরামর্শ করে সভাপতি কর্তৃক নির্দেশিত হয়ে প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কার্য পরিচালনা করবেন। তিনি জাতীয় কাউন্সিল পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কমিটির সভা আহ্বান করবেন। প্রত্যেকটি সভায় সংগঠনের রাজনৈতিক, সাংঠনিক ও সংগ্রামগত রিপোর্ট পেশ করবেন। অন্যান্য সম্পাদকদের কাজ তদারক করবেন। তাদের কাজকর্মে পরামর্শ দান ও প্রয়োজনবোধে নির্দেশ দিতে পারবেন। সম্পাদকগণের কাজের জন্য তিনি কমিটির নিকট দায়ি থাকবেন। জাতীয় কাউন্সিল পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক গৃহিত সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রমের বাস্তবায়নে তার প্রচেষ্টা হবে সর্বাধিক।
(ঘ) সহ-সাধারণ সম্পাদক- সাধারণ সম্পাদকের অনুপস্থিতিতে সহ-সাধারণ সম্পাদকের মধ্য হতে ক্রমানুসারে একজন সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করবেন। কোন কারণবশতঃ সাধারণ সম্পাদক যদি ৪৫ (পঁয়তাল্লিশ) দিন অথবা তদূর্ধ্বকাল অনুপস্থিত থাকেন সে ক্ষেত্রে সহ-সাধারণ সম্পাদকের মধ্য হতে একজন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রূপে কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক নির্বাচিত হবেন। এছাড়াও তারা তাদের নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করবেন।
(ঙ) সাংগঠনিক সম্পাদক- সাধারণ সম্পাদকের সহিত পরামর্শ করে সংগঠনের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
(চ) প্রচার সম্পাদক- সংগঠনের সকল প্রকার প্রচার ও প্রকাশনার দায়িত্ব পালন করবেন। অন্য কোন দায়িত্ব অর্পিত হলে তাও পালন করবেন।
(ছ) দপ্তর সম্পাদক- কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিচালনার সকল দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া অন্য কোন দায়িত্ব অর্পিত হলে তাও পালন করবেন।
(জ) সাংস্কৃতিক সম্পাদক- সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে ভূমিকা পালন করবেন। অন্য কোন দায়িত্ব অর্পিত হলে তাও পালন করবেন।
(ঝ) যুব বিষয়ক সম্পাদক- যুব সমাজকে সচেতন ও সংগঠিত করার কাজে নিয়োজিত থাকবেন। এ ছাড়া অন্য কোন দায়িত্ব অর্পিত হলে তাও পালন করবেন।
(ঞ) মহিলা বিষয়ক সম্পাদক- নারী আন্দোলন গড়ে তুলবার জন্য ভূমিকা পালন করবেন। এছাড়া অর্পিত দায়িত্ব পালন পালন করবেন।
(ট) কোষাধ্যক্ষ- সংগঠনের আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখবেন। তহবিল গঠন ও সংরক্ষণে যতœবান হবেন। তহবিল সংক্রান্ত ধারায় বর্ণিত ক্ষমতা অনুযায়ি কোষাধ্যক্ষ তার দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করবেন।
(১৩) জেলা ও মহানগর– প্রত্যেক সাংগঠনিক জেলায় একটি জেলা কমিটি থাকবে। ৩ জন সহ-সভাপতি এবং ২ জন সহ-সাধারণ সম্পাদক কেন্দ্রীয় কমিটির অনুরূপ মোট ১৩ জন কর্মকর্তা ও ২৮ (আটাশ) জন সদস্য নিয়ে সর্বোচ্চ মোট ৪১ (একচল্লিশ) জনের জেলা কমিটি গঠিত হবে। মহানগর কমিটি, জেলা কমিটির অনুরূপ ও সমমর্যাদা সম্পন্ন হবে। প্রত্যেক জেলা ও মহানগর কমিটি কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে। প্রতি দুই মাস অন্তর একবার অর্থাৎ বৎসরে ন্যূনতম ৬ (ছয়) বার জেলা/মহানগর কমিটির সভা করতে হবে।
(১৪) উপজেলা কমিটি– জেলা কমিটির অনুরূপ কর্মকর্তা ও ১৮ (আটার) জন সদস্য নিয়ে সর্বোচ্চ ৩১ সদস্যের উপজেলা কমিটি গঠিত হবে। প্রতি মাসে একবার অর্থাৎ বৎসরে উপজেলা কমিটি ন্যূনতম ১২টি সভা করতে হবে। প্রত্যেক উপজেলা কমিটি জেলা কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে।
(১৫) ইউনিয়ন কমিটি– উপজেলা কমিটির অনুরূপ কর্মকর্তা ও সদস্য নিয়ে গ্রামাঞ্চলে ইউনিয়ন কমিটি এবং শহরাঞ্চলে পৌরসভা/ ওয়ার্ড কমিটি গঠিত হবে। প্রতি ১৫ (পনের) দিন অন্তর একবার অর্থাৎ প্রতিমাসে ন্যূনতম ইউনিয়ন/পৌরসভা/ওয়ার্ড কমিটিকে ২(দুই)টি সভা করতে হবে। প্রত্যেক ইউনিয়ন/পৌরসভা ও ওয়ার্ড কমিটি উপজেলা কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে।
(১৬) সাংগঠনিক তহবিল ঃ
(ক) কেন্দ্রীয় কমিটিসহ প্রত্যেক শাখা সংগঠনের নিজস্ব তহবিল থাকবে। সদস্যদের চাঁদা ও সমর্থক-দরদীদের বিভিন্ন সময়ে অথবা এককালীন দেয় চাঁদার মাধ্যমে অর্জিত টাকা দ্বারা এই তহবিল গঠিত হবে। প্রাথমিকভাবে প্রত্যেক কমিটির সংগৃহিত অর্থের তহবিলের পরিমাণ ৫০০ (পাঁচ শত) টাকার কম হলে সংগঠনের দৈনন্দিন খরচ বাবদ কিচু টাকা সম্পাদকের হাতে রেখে বাকী টাকা কোষাধ্যক্ষের নিকট গচ্ছিত থাকবে। সংগৃহিত টাকার পরিমাণ ৫০০ (পাঁচ শত) টাকা বা তদূর্ধ্ব হলে যে কোন ব্যাংকের স্থানীয় শাখায় কার্যকরী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক সংগঠনের নামে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের এবং কোষাধ্যক্ষের যুক্ত স্বাক্ষরে যথা নিয়মে জমা রাখতে হবে। তাদের যে কোন একজন অনুপস্থিত থাকলে সভাপতির যুক্ত স্বাক্ষরে একাউন্ট পরিচালনা করা যাবে। ব্যাংকে কখন কত টাকা জমা হলো তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে সাথেই জানাতে হবে। ব্যাংক হতে কি পরিমাণ টাকা কখন কেন উঠানো হলো তার রিপোর্ট টাকা উঠাবার এক সপ্তাহের মধ্যে সম্পাদক/সভাপতিকে লিখিতভভবে জানাবেন।
(খ) সংগঠনের দৈনন্দিন কার্য পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক ৫০ (পাঁচ শত) টাকা, জেলা কমিটির সম্পাদক ৩০০ (তিন শত) টাকা, উপজেলা কমিটির সম্পাদক ২০০ (দুই শত) টাকা ও ইউনিয়ন কমিটির সম্পাদক ১০০ (এক শত) টাকা মাত্র রাখতে পারবেন। দৈনন্দিন খরচের টাকা ব্যতীত অন্যান্য খরচের জন্য ব্যাংক হতে উঠানো টাকা কোন অবস্থাতেই ৭ (সাত) দিনের বেশি হাতে গচ্ছিত রাখা যাবে না।
(গ) সংগঠনের যাবতীয় আয়-ব্যয়ের হিসাব জাতীয় কাউন্সিল পরিষদের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে অনুমোদন সাপেক্ষে কার্যকরী কমিটির প্রত্যেক সভায় পাশ করাতে হবে।
শুভেচ্ছা মূল্য ঃ ১০ (দশ) টাকা