২৩ অক্টোবর ’১৭ সোমবার পাঁচ শহীদ বিপ্লবী (কমরেড আসাদ, শান্তি, মানিক, তোজো ও ফজলু)’র ৪৬ তম মৃত্যুবার্ষিকী এবং ২৪ অক্টোবর ২০১৭ মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩ টায় জাতীয় ছাত্রদল যশোর জেলা কমিটির উদ্যোগে যশোর দড়াটানা শহীদ চত্বরে স্মরণসভা

Sohid Somadhi.Chinatola.Jsr

তারিখঃ ২২/১০/২০১৭  প্রেস বিজ্ঞপ্তি

২৩ অক্টোবর ’১৭ সোমবার পাঁচ শহীদ বিপ্লবী (কমরেড আসাদ, শান্তি, মানিক, তোজো ও ফজলু)’র ৪৬ তম মৃত্যুবার্ষিকী

আগামীকাল ২৩ অক্টোবর ’১৭ সোমবার পাঁচ শহীদ বিপ্লবী (কমরেড আসাদ, শান্তি, মানিক, তোজো ও ফজলু)’র ৪৬ তম মৃত্যুবার্ষিকী। প্রয়াত বিপ্লবীদের মৃত্যুবার্ষিকীতে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট যশোর জেলা বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে সকাল ১০টায় প্রয়াতদের সমাধিস্থল মনিরামপুরের চিনাটোলায় শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পন, শোক নিরবতা পালন ও শপথ পাঠ করা হবে। এরপর সকাল ১১টায় কৃষক সংগ্রাম সমিতি মনিরামপুর থানা কমিটির উদ্যোগে চিনাটোলা বাজারে এক স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হবে। ২৪ অক্টোবর ২০১৭ মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩ টায় জাতীয় ছাত্রদল যশোর জেলা কমিটির উদ্যোগে যশোর দড়াটানা শহীদ চত্বরে অপর একটি স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে। সকালের কর্মসূচিতে মনিরামপুর ও কেশবপুরের নেতা-কর্মীদের এবং বিকালের দড়াটানার কর্মসূচিতে সদরের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের যথাসময়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য বিশেষভাবে আহ্বান করা হলো।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ২৩ অক্টোবর (বাংলা ৬ কার্তিক) পাকিস্তানী শাসকদের এদেশীয় দোসর রাজাকার বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন কমরেড আসাদ, শান্তি, মানিক, তোজো ও ফজলু। যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার চিনাটোলা বাজার সংলগ্ন গ্রাম থেকে রাজাকাররা গ্রেপ্তার করে বাজারের পাশ্ববর্তী হরি নদীর ব্রীজের উপর এই পাঁচজনকে হত্যা করে পৈশাচিক উল্লাসে শহীদ বিপ্লবীদের মরদেহ নদীর জলে নিক্ষেপ করে।

এই পাঁচ শহীদের সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত নিম্নে উল্লেখ করা হলো ঃ-

শহীদ কমরেড আসাদঃ- কমরেড আসাদউজ্জামান আসাদ ১৯৪৯ সালের ৬ জানুয়ারী যশোর শহরের খড়কি গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম  মোঃ শাহাদাত আলী, মাতা সাজেদা খাতুন। ৯ ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন ৪র্থ। ১৯৬৪ সালে যশোর জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করে মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয় থেকে ১৯৬৬ সালে এইচএসসি পাশ করে ভূগোলে সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি হন। ছাত্রাবস্থায় তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বে ছাত্র আন্দোলনে অগ্রণী ও নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেন। তিনি এম এম কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচিত জিএস ও পরে ভিপি হিসেবে এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্র রাজনীতিতে থাকাকালে তিনি শ্রমিকশ্রেণীর রাজনীতির সংস্পর্শে আসেন এবং পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিষ্ট পার্টি (এম-এল)-তে যোগদান করেন। তিনি যশোর রিক্সা চালক সমিতিরও সাধারণ সম্পাদক হিসাবে ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৭০ সালের দিকে পার্টি সভ্যপদ লাভ করেন এবং গ্রামাঞ্চলে পার্টির ডাকে কৃষকদের মধ্যে কাজে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৭১ সালের ২৩ অক্টোবর বাংলা ৬ কার্তিক অপরাপর শহীদদের সাথে রাজাকারদের হাতে মৃত্যুবরণ করেন।

শহীদ কমরেড শান্তিঃ- সিরাজুল ইসলাম শান্তি ১৯৪৫ সালে যশোর জেলার শার্শা উপজেলা সদরে মাতুলালয়ে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আছির উদ্দিন ও মাতা জোবেদা খাতুন। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। বড় ভাই অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম, মেজো ভাই নজরুল ইসলাম জীবিত ও একমাত্র বোন পেয়ারা খাতুন প্রয়াত। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তাঁর পিতা চার সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ভারতের বনগাঁ মহাকুমা ছেড়ে বিনিময় সূত্রে যশোর শহরের ষষ্টিতলা পাড়াস্থ পিটিআই রোডে বসবাস শুরু করেন। কমঃ শান্তি যশোর জিলা স্কুলে দশম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। তিনি খুবই সাধারণ জীবন-যাপন করতেন। বড় ভাইদের ব্যবহৃত লুঙ্গি-শার্ট পড়তেন। নতুন পোশাক-পরিচ্ছদ বাক্সবন্দী করে রাখতেন। প্রচলিত ধারার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা চেয়ে সমাজতন্ত্র সম্পর্কিত বই পড়ার প্রতি ছিল তাঁর প্রচন্ড ঝোঁক। সংগত কারণে কমিউনিস্ট পার্টির সাথে তাঁর ছিল প্রগাঢ় সম্পর্ক। ১৯৬২ সালের দিকে তাঁর সাথে যশোরের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতাদের যোগাযোগ হয় এবং পর্যায়ক্রমে সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে কাজ শুরু করেন। ১৯৭০ সালে তিনি পার্টিসভ্য পদ লাভ করেন এবং ঐ বছরেই আত্মগোপন করেন। তিনি যশোর জেলা কৃষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দ্বায়িত্বও পালন করেন। ১৯৬৯-৭০ সালের কৃষক আন্দোলনের সাথে তিনি ঘনিষ্টভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন।

শহীদ কমরেড মানিকঃ- আহসান উদ্দিন মানিক পিতা আফাজ উদ্দিন। তিনি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা থানার তোলা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। পিতার চাকুরির সুবাদে তারা যশোর শহরের ডিসি বাংলো রোডে নিজস্ব বাড়ীতে বসবাস করতেন। বর্তমানে তার পরিবারের সদস্যরা কুষ্টিয়া শহরে বসবাস করেন। বাবা ছিলেন ফুড ইন্সপেক্টর। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল আনুমানিক ২৪ বছর। কমঃ মানিক ১৯৬৪ সালে যশোর মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের উচু মাপের নেতা ছিলেন। কমঃ মানিক যশোর জেলার প্রায় সর্বত্রই তার অপর ছাত্র নেতা-বন্ধুদের সাথ মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্রদের নিয়ে ছাত্র সংগঠন গড়ে তুলতেন। ১৯৬৯ সালে ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে জেলার ছাত্র সমাজের অন্যতম নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিলেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের যশোর জেলা কমিটির সভাপতি ছিলেন। এ সময় অর্থাৎ ছাত্র রাজনীতির পাশাপাশি কিছু দিনের মধ্যেই তিনি পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিষ্ট পার্টি (এম-এল)’র গ্রুপভূক্ত হন। ১৯৭০ সালে পার্টি সভ্যপদ লাভ করেন। ১৯৭১ সালে তিনি পার্টির সার্বক্ষণিক কর্মী হিসেবে বিপ্লবের কাজে আত্মনিয়োগ করেন।

শহীদ কমরেড তোজোঃ- কমরেড মাশুকুর রহমান তোজো ১৯৪২ সালের ৩১ জানুয়ারী যশোর শহরের ষষ্টিতলা পাড়ায় জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা এ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান, মাতা করিমা। দুই ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সকলের বড়। তাঁর ছোট ভাই খালেদুর রহমান বর্তমান আওয়ামী লীগের যশোর সদর-৩ আসনের সাবেক এমপি। কমরেড তোজো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। তিনি ১৯৫৬ সালে যশোর জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ১৯৫৮ সালে যশোর এম.এম. কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেক পদার্থ বিদ্যা ও গণিতশাস্ত্রে কৃতিত্বের সাথে সম্মান শ্রেণী পাশ করেন। পদার্থ বিজ্ঞানে এমএসসি পাশ করার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ যান। রাজনৈতিক ভূমিকা গ্রহণের তাগিদ অনুভব করে সেখানে (লন্ডন, একচুয়ারী ডিগ্রি) শিক্ষা শেষ না করেই দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে ১৯৬৯ সালের দিকে হোমল্যান্ড বীমা কোম্পানীতে যোগদান করেন। দেশে ফিরে প্রথমে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (এম-এল) এর সাথে যুক্ত হলেও ১৯৭১ সালে রাজনৈতিক সচেতনা এবং প্রয়োগিক উপলব্ধি বোধের মধ্য দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি (এম-এল) তে যোগ দেন। পার্টিতে যোগ দেওয়ার পূর্বে ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে তিনি পাক আর্মির হাতে গ্রেফতার এবং নির্যাতনের শিকার হন, এক পর্যায়ে ছাড়া পান। এরপর তিনি গ্রামে সার্বক্ষণিক পার্টির কর্মী হিসেবে কৃষকদের সাথে একাকার হয়ে যান। কমঃ তোজোর মধ্যে কোন কৃত্রিমতার ছাপ ছিল না।

শহীদ কমরেড ফজলুঃ- ফজলু দফাদার যশোর জেলার মনিরামপুর থানার গোপালপুর গ্রামে এক নি¤œ মধ্যবিত্ত পরিবারে ১৯৫১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা রজব আলী দফাদার ছিলেন একজন সাধারণ কৃষক, মাতা নুরজাহান। তিনি ৬ ভাই ৫ বোনের মধ্যে সকলের বড় ছিলেন। অবশ্য তার বাবার ২য় স্ত্রী ছিল। যার নাম আমেনা বেগম। তিনি স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণী এবং জুনিয়র হাই স্কুল থেকে ৮ম শ্রেণী পাশ করার পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। দেশে যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি হলে ফজলু সেনাবাহিনী ত্যাগ করে গ্রামে ফিরে এসে এক পর্যায়ে কমিউনিষ্ট পার্টি সিপিইপি (এম-এল)এর নেতৃত্বে লড়াইয়ে অবতীর্ন হন।

বার্তা প্রেরক

হাফিজুর রহমান

সাধারণ সম্পাদক

যশোর জেলা শাখা

মোবাঃ ০১৭-১৪৮৪-৯২৬২

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *