তাংঃ ০৫/১২/১৬
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
আজ ৫ ডিসেম্বর’১৬ সোমবার কৃষকনেতা সাইফুল্লাহ লস্কর’র ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সকাল সাড়ে ১০টায় তার সাতক্ষীরা জেলার কাঠিয়া লস্কর পাড়ার সমাধিস্থলে পুষ্পমাল্য অর্পন করা হয়। এ সময় সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বি.এম. শামীমুল হকের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সাতক্ষীরা সদর থানা আহ্বায়ক মাহমুদুদ্দিন লস্কর দুষ্টু ও তালা থানার সভাপতি আব্দুল হাকিমসহ স্থানীয় এলাকাবাসী পুষ্পমাল্য অর্পন করেন। প্রয়াতের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন ও শপথ পাঠ করা হয়। শপথ পাঠ করান বি.এম. শামীমুল হক।
এরপর বিকাল সাড়ে ৩ টায় সাতক্ষীরা জেলার তালা ডাকবাংলা চত্বরে এক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি তোজাম্মেল হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ব্রিগেঃ জেনাঃ (অবঃ) এম. জাহাঙ্গীর হুসাইন। অন্যান্যের মধ্যে রাখেন কৃষক সংগ্রাম সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান কবির, যুগ্ম-সম্পাদক অধ্যাপক তাপস বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক বি.এম. শামীমুল হক, খুলনা জেলার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সদস্য গিয়াস উদ্দিন, খুলনা জেলার অপর সহ-সভাপতি মোকাম মোল্লা, যশোর জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক সমীরণ বিশ্বাস, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট খুলনা জেলা সভাপতি আবুল হোসেন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ যশোর জেলার সভাপতি আশুতোষ বিশ্বাস ও জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সাতক্ষীরা জেলার তালা থানার সভাপতি আব্দুল হাকিম প্রমূখ। সভাটি পরিচালনা করেন যুগ্ম-সম্পাদক কামরুল হক লিকু।
সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, সাইফুল্লাহ লস্কর সমগ্র জীবন ধরে শ্রমিক-কৃষক মেহনতি জনগণ ও সাতক্ষীরার ক্ষেত্রে ভূমিহীন গরীব কৃষকদের খাস জমিতে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তাঁর প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা নিবেদনে তাঁর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার জন্য সর্বস্তরের জনগণের ঐক্যবদ্ধ লড়াই-সংগ্রামের বিকল্প নাই। একই সাথে দেশের শ্রমিক-কৃষক-জনগণ গভীর অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক তথা সামগ্রিক সংকটে জর্জরিত হয়ে তাদের জীবন-জীবিকা আজ দুঃখ-কষ্টের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। সা¤্রাজ্যবাদ ও তার দালাল অতিতের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতাসীন সরকার ও শোষকগোষ্ঠির সীমাহীন শোষণ-লুন্ঠন, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতি, দফায় দফায় তেল-গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি, শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি, ঢালাও লুটপাট, দূর্ণীতি, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, খুন-গুম, বিনাবিচারে হত্যাকান্ডসহ রাষ্ট্রীয় ও দলীয় সন্ত্রাস, এছাড়াও শেয়ার বাজারের লুটপাট, ব্যাংকিং খাতে লুটপাট, রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ’র নামে লুটপাট, শিক্ষা খাতে দূর্ণীতি, প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ দেশব্যাপী দূর্ণীতি ও লুটপাটের মহোউৎসব চলছে। কিন্তু সা¤্রাজ্যবাদের দালাল মহাজোট সরকার গালভরা বুলি আওড়িয়ে মিথ্যাচার করে চলেছে।
অন্যদিকে সা¤্রাজ্যবাদী লগ্নিপুঁজির স্বার্থে গড়ে ওঠা গার্মেন্টস শিল্পের শ্রমিকদেরও নেই সংগঠন করার অধিকার, নেই বাঁচার মত মজুরী, না আছে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা। একই সাথে হোটেলসহ বিভিন্ন সেক্টরের শ্রমিকদেরও তাদের দাবী ও অধিকার থেকে বঞ্চিত করার পাশাপাশি শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী শ্রম আইন প্রণয়ন করে সা¤্রাজ্যবাদ ও তার দালাল শাসক-শোষক গোষ্ঠির স্বার্থ রক্ষা করে চলেছে সরকার। শ্রমিকদের বর্তমান বাজার দরের সাথে সঙ্গতি রেখে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে তালবাহান করে চলেছে। নৌ-যান ও হোটেল শ্রমিকদের গেজেট খসড়া গেজেট প্রকাশের ৯০দিন অতিবাহিত হলেও পূর্ণাঙ্গ গেজেট প্রকাশ করা হচ্ছে না।
ভূমিহীন গরীব কৃষকের জমি ও কাজ নাই, ফসলের ন্যায্য দাম না পেয়ে গরীব কৃষক ভূমিহীন কৃষকে পরিণত হচ্ছে। সর্বোপরি উৎপাদনের খরচের তুলনায় ফসলের মূল্য কম হওয়ায় কৃষকের জীবন ও কৃষি আজ চরম সংকটে জর্জরিত। শিক্ষাঙ্গন আজ সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের পেশি শক্তির নিয়ন্ত্রণে। একই সাথে শিক্ষাকে পণ্যে পরিণত করার পাশাপাশি ছাত্রদের বিদ্রোহের মনোভাব ও মূল্যবোধকে ধ্বংস করতে শাসক-শোষক গোষ্ঠি ধারাবাহিক চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে।
নয়াঔপনিবেশিক-আধাসামন্তবাদী মায়ানমারে রোহিঙ্গা জাতি সত্ত্বার ওপর মাসাধিক সময় থেকে চলছে নির্মম, বর্বর নির্যাতন। সা¤্রাজ্যবাদের দালাল অং সান সুচি’র সরকার সেনাবাহিনী দিয়ে এই হত্যাযঞ্জ ও নির্যাতন চালাচ্ছে। বাংলাদেশেও কখনো ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন আবার কখনো ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার ওপর নির্যাতন ঘটেই চলেছে। সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর মন্দির ভাংগচুর ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে লুটপাট, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদের জন্য চলে লুটপাট, ভাংচুর ও নির্যাতন। এর পিছনে সা¤্রাজ্যবাদের পরিকল্পনা এবং তার দালালদের স্বার্থ নিহিত থাকে।
সা¤্রাজ্যবাদের দালাল প্রতিক্রিয়াশীল প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র নেতৃত্বে ২০দলীয় জোট জনগণ ও জাতীয় জীবনের মূল সমস্যাকে আড়াল করে মার্কিনের নেতৃত্বে পাশ্চাত্যের আর্শীবাদ নিয়ে ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতা ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের শ্লোগান অব্যাহত রেখে ক্ষমতায় আসতে মরিয়া। মহাজোট সরকার প্রভুদের স্বার্থরক্ষায় ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে মিটিং-মিছিল, সভা-সমাবেশ ইত্যাদি গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহকে ধ্বংস এবং প্রতিপক্ষকে কোনঠাসা করার জন্য স্বৈরাচারী রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদী শাসন চালাচ্ছে। কৃষক ও কৃষি এর থেকে বাইরে নয়। চলতি মৌসুমে সরকার ধানের দাম ২৩ টাকা দরে মণপ্রতি ৯২০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও কৃষক নির্ধারিত মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারেনি। বিক্রি করেছে দলীয় কর্মী ও মধ্যসত্ত্বভোগীরা আর কৃষক সাড়ে ৫শ থেকে ৬শ টাকায় ধান বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে। বিগত সময়ে অতিবৃষ্টি, বন্যা ও জলাবদ্ধতায় কৃষক ও কৃষির সমস্যাকে আরো তীব্রতর করে তুলেছে। এমতাবস্থায় ‘কৃষি উৎপাদন ও কৃষককে বাঁচানো’র বিষয়টি জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্ব প্রেক্ষাপটে ভূ-রাজনৈতিক ও রণনীতিগত গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশকে নিয়ে সা¤্রাজ্যবাদী দেশগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্রতর হয়ে চলেছে। বাজার ও প্রভাব বলয় পুর্নবন্টনকে কেন্দ্র করে সা¤্রাজ্যবাদী দেশগুলোর মধ্যকার দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও শক্তি সম্পর্কের পুর্নবিন্যাস প্রক্রিয়ার প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে। বাংলাদেশকে আগামী সম্ভাব্য আগ্রাসী যুদ্ধে সম্পৃক্ত করার জন্য চলছে নানমুখি তৎপরতা ও ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত। তাই প্রয়াত কৃষকনেতার সংগ্রামী জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে শ্রমিক-কৃষক জনগণের রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধার প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বস্তরের জনগণের প্রতি স্মরণসভা থেকে উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়।
বার্তা প্রেরক
বি.এম.শামীমুল হক
সাংগঠনিক সম্পাদক
মোবাঃ ০১৭-১২৭৫-২৮৫৭।