১ ডিসেম্বর ২০১৭ শুক্রবার মহান রুশ বিপ্লবের শতবর্ষ উদযাপন কমিটি, সিলেট কর্তৃক শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় এর মিনি অডিটোরিয়ামে সেমিনার অনুষ্ঠিত

ুদট-০১-১২-১৭

১ ডিসেম্বর ২০১৭ শুক্রবার মহান রুশ বিপ্লবের শতবর্ষ উদযাপন কমিটি, সিলেট কর্তৃক শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় এর মিনি অডিটোরিয়ামে সেমিনার অনুষ্ঠিত

‘পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থার গভীর সংকট এবং রুশ বিপ্লবের মহান শিক্ষা ও বৈপ্লবিক দিকনির্দেশনা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা —

রুশ বিপ্লবের অজেয়-অমর শিক্ষাকে সামনে রেখে বিশ্বব্যাপী শ্রমিক শ্রেণি, নিপীড়িত জাতি ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ৩য় বিশ্বযুদ্ধের বিপদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহবান জানান।

মহান রুশ বিপ্লবের শতবর্ষ উদ্যাপন কমিটি, সিলেট এর উদ্যোগে আজ ১ ডিসেম্বর’১৭ সকাল ১০ টায় শাবিপ্রবির মিনি অডিটোরিয়ামে ‘পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থার গভীর সংকট এবং রুশ বিপ্লবের মহান শিক্ষা ও বৈপ্লবিক দিকনির্দেশনা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন মহান রুশ বিপ্লবের শতবর্ষ উদযাপন কমিটি, সিলেট এর আহবায়ক ও জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সিলেট জেলা শাখার সভাপতি এডভোকেট কুমার চন্দ্র রায়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহান রুশ বিপ্লবের শতবর্ষ উদযাপন কমিটির সদস্য ও জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি খলিলুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট মৌলভীবাজার জেলা শাখার সভাপতি কবি শহীদ সাগ্নিক, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট ই ইউ শহিদুল ইসলাম শাহিন, জাতীয় ছাত্রদল শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি পরেশ চাকমা।

মহান রুশ বিপ্লবের শতবর্ষ উদযাপন কমিটি, সিলেট এর যুগ্ম আহবায়ক প্রভাষক জয়দীপ দাস চম্পুর পরিচালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মহান রুশ বিপ্লবের শতবর্ষ উদযাপন কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান কবির।

প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, রুশ বিপ্লব হচ্ছে পৃথিবীর ইতিহাসে যুগান্তকারী ঘটনা। রুশ বিপ্লব শ্রমিক শ্রেণি, নিপীড়িত জাতি ও জনগণের মুক্তির আলোকবর্তিকা। ১৯১৭ সালের ৭ নভেম্বর মহামতি কমরেড লেনিনের পরিচালনাধীনে সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট (বলশেভিক) পার্টির নেতৃত্বে বলপ্রয়োগে বুর্জোয়া শ্রেণিকে উৎখাত করে রাশিয়ায় সর্বহারা শ্রেণির একনায়কত্বাধীন মহান সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব জয়যুক্ত হয়। পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী বিশ^ব্যবস্থার বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক বিশ^ব্যবস্থা, বিশ্বব্যাপী তিন মৌলিক দ্বন্দ্বের সাথে আর একটি মৌলিক দ্বন্দ্ব যোক্ত হয়ে চার মৌলিক দ্বন্দ্ব এবং ‘দুনিয়ার শ্রমিক শ্রেণি ও নিপীড়িত জাতি ও জনগণ এক হও’ স্লোগান সামনে আসে। রাশিয়া তথা সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ও গঠন কার্যের মধ্য দিযে শ্রেণি শোষণ, বেকারত্ব, নারী নির্যাতন, দারিদ্র ইত্যাদির অবসান ঘটে। শ্রমিক শ্রেণির নেতৃত্বে কষক, জনগণ এবং নিপীড়িত জাতিসমূহের মুক্তি অর্জিত হয়। শিক্ষা-সংস্কৃতি, চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়। রুশ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠা লাল ফৌজ কমরেড স্টালিনের নেতৃত্বে ২য় বিশ্বযুদ্ধে ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করার ক্ষেত্রে নির্ধারক ভূমিকা পালন করে। যার ফলশ্রুতিতে পূর্ব ইউরোপ ও এশিয়ার কয়েকটি দেশে শ্রমিক শেণির নেতৃত্বে জনগণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকায় জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের জোয়ার সৃষ্টি হয়।

বক্তারা বলেন, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থলসংযোগ সেতু বঙ্গোপসাগরীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক ও রণনীতিগত গুরুত্বের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে আন্ত:সাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে চলেছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ তার প্রাধান্য ধরে রাখতে যৌথ অংশিদারিত্ব চুক্তি, যৌথ অংশিদারিত্ব সংলাপ, সন্ত্রাস দমনে সহযোগিতা চুক্তি, নিরাপত্তা বিষয়ক সংলাপ ইত্যাদি তৎপরতাকে সামনে নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। মার্কিনের সাথে সমন্বিত হয়ে সাম্রাজ্যবাদী জাপান তার ‘বে অফ বেঙ্গল ইন্ড্রাস্টিয়াল গ্রোথ বেল্ট (বিগ-বি)’ উদ্যোগ অগ্রসর করতে সচেষ্ট। এতদাঞ্চলের প্রধান আঞ্চলিক শক্তি নয়া উপনিবেশিক ভারতকে চীনের পাল্টা ভারসাম্য হিসেবে গড়ে তোলার জন্য মার্কিনের এশিয়া প্যাসিফিক রণনীতির সাথে ভারতের ‘এক্ট এশিয়া পলিসি’ সমন্বিত করে অগ্রসর হচ্ছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের সাথে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সংযোগের প্রেক্ষিতে ভারত ট্রানজিট, করিডোরসহ সকল যোগাযোগ মাধ্যম, সকল বন্দর ব্যবহার, সুন্দরবন ধ্বংসকারী রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, ভারত-বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা চুক্তি ইত্যাদি কার্যকরী করে চলছে। আবার রাশিয়া ও চীন বাংলাদেশে তাদের প্রভাব বৃদ্ধি করে নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়ার অস্ত্র বিক্রয় ও পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন চুক্তি এবং চীনের এশিয়ার অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক এর সদস্য করা, বিসিআইএম প্রক্রিয়ার বিআরআই এ সম্পৃক্ত করা তাৎপর্যপূর্ণ।

সাম্প্রতিক রোহিঙ্গা সংকট এর থেকে বিচ্ছিন্ন কোন বিষয় নয়। বরং অভ্যন্তরীণ কারণ ছাড়াও এর পেছনে রয়েছে রণনীতিগত গুরুত্বপূর্ণ নয়া-উপনিবেশিক আধা-সামন্তবাদী মিয়নমারকে কেন্দ্র করে আন্ত:সাম্রাজ্যবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী পুঁজিবাদী দ্বন্দ্ব ও ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত। মিয়ানমারের গ্যাস, তেল, খনিজ ও বনজসহ প্রাকৃতিক সম্পদ স্বীয় স্বার্থে কাজে লাগানোর জন্য পুঁজিবাদী চীন গভীর সমুদ্র বন্দর ও পাইপলাইন, শিল্পপার্ক, যোগাযোগ ইত্যাদি প্রকল্পে বিপুল পুঁজি বিনিয়োগকে চীনের প্রভাব কমিয়ে মার্কিনের নেতৃত্বে পাশ্চাত্যের প্রভাব বৃদ্ধির লক্ষ্যে এতদাঞ্চলে বিশৃঙ্খল ও সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চায়। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ কৌশলী ভূমিকা নিয়ে রাখাইনে বসবাসরত রোহিঙ্গা ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের আকাঙ্ক্ষাকে ব্যবহার করে এবং তাদের উপর দমন পীড়নমূলক পরিস্থিতির সৃষ্টির কৌশলে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পাড়ি জমায়। এ প্রক্রিয়ায় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ স্বীয় আগ্রাসী পরিকল্পনায়  বাংলাদেশকে সম্পৃক্ত করতে চায়।

বক্তারা বলেন, বিশ্বব্যাপী শ্রমিক শ্রেণি ও জনগণের ওপর শোষণ-লুন্ঠন, নিপীড়ন-নির্যাতন, দুঃখ-দারিদ্র, সন্ত্রাস, আগ্রাসী যুদ্ধ তথা বিশ্বযুদ্ধের মূল হোতা সাম্রাজ্যবাদ। সাম্রাজ্যবাদী তথা পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থাকে বৈপ্লবিক পন্থায় উচ্ছেদ সাধন করে সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা করাই বিশ্বের শ্রমিক শ্রেণি  ও জনগণের মুক্তির একমাত্র বিকল্প।

বার্তাপ্রেরক

জয়দীপ দাস চম্পু (০১৬৭৩ ৯৮৩ ২৯৬)

যুগ্ম আহবায়ক

মহান রুশ বিপ্লবের শতবর্ষ উদ্যাপন কমিটি, সিলেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *