এনডিএফ’র ১৪ মার্চ সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ১৩ দফা দাবীসমূহ ও কর্মসূচি

1653773_600598986699935_761523677_n

সংগ্রামী সাথী ও বন্ধুগণ,
যুগ যুগ ধরে চলে আসা ঔপনিবেশিক ও বিদ্যমান নয়াউপনিবেশিক-আধাসামন্তবাদী আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় পতাকার পরিবর্তন ও ক্ষমতার পালাবদল হলেও শ্রমিক-কৃষক-জনগণের ভাগ্যেও কোন পরিবর্তন ঘটেনি। আমাদের দেশের জাতীয় ও জনজীবনের সমস্যা-সংকটের জন্য দায়ী হচ্ছে সা¤্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও আমলা মুৎসুদ্দি পুঁজির নির্মম শোষণ ও স্বৈরাচারী শাসন। এর থেকে মুক্তির লক্ষ্যে শ্রমিক-কৃষক-জনগণের রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধান প্রতিষ্ঠার আন্দোলন বেগবান করার জন্য অদ্যকার এই কেন্দ্রীয় সমাবেশ সমাবেশ থেকে-

জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের
১৩ দফা দাবীতে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করছি
১। ক) সাম্রাজ্যবাদের এক দালাল বা জোটের পরিবর্তে আরেক দালাল বা জোট নয়, এক সাম্রাজ্যবাদের পরিবর্তে আরেক সাম্রাজ্যবাদ নয়- সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও আমলা মুৎসুদ্দি পুঁজি বিরোধী শ্রমিক-কৃষক-জনগণের রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধান প্রতিষ্ঠার লড়াই বেগবান করুন। বিকল্প বিপ্লবী গণতান্ত্রিক ধারা প্রতিষ্ঠা করুন।
খ) দালাল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার প্রভু সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালাল নয়াউপনিবেশিক-আধাসামন্তবাদী ভারতের সাথে সমন্বিত পরিকল্পনায় একতরফা প্রহসনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় অব্যাহত থাকা এবং সাম্রাজ্যবাদের অপর দালাল বিএনপি’র নেতৃত্বে ১৯ দলীয় জোট প্রভুর আর্শীবাদ নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার দ্বন্দ্ব-সংঘাতময়, বিশৃঙ্খল, নৈরাজ্যিক পরিস্থিতির জন্য দায়ী সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লবের লক্ষ্যে অগ্রসর হউন।
২। সাম্রাজ্যবাদের সাথে জাতীয় স্বার্থ বিরোধী সকল চুক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলুন।
ক) মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সাথে স্বাক্ষরিত বাণিজ্য ও বিনিয়োগ রূপরেখা চুক্তি (টিক্ফা), সন্ত্রাস দমনে সহযোগিতা চুক্তি, মার্কিন-বাংলাদেশ নিরাপত্তা সংলাপ চুক্তি, মার্কিন-বাংলাদেশ অংশীদারিত্ব সংলাপ চুক্তি স্বাক্ষরসহ সোফা চুক্তি স্বাক্ষরের পাঁয়তারার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।
খ) সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনায় তাদের দালাল ভারত সরকারের স্বার্থে ফারাক্কা বাঁধ, তিস্তা বাঁধ, টিপাই মুখ বাঁধ, অভিন্ন নদীসমূহে একতরফা বাঁধ ও গ্রোয়েন নির্মাণ, রামপালে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, সমুদ্রবক্ষে বঙ্গোপসাগরে ৪ ও ৯ নং ব্লক ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার লুণ্ঠনমূলক ও পরিবেশ বিধ্বংসী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলুন।
গ) শেখ হাসিনা ও মনমোহন সিং-এর যথাক্রমে ভারত ও বাংলাদেশ সফরকালে ৫০ দফা ও ৬৫ দফা যৌথ বিবৃতি, দক্ষিণ এশিয়ায় সন্ত্রাস দমনে ও জঙ্গী বিরোধী টাক্স ফোর্স গঠন ইত্যাদির বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলুন।
ঘ) বাংলাদেশের গ্যাস, সম্ভাব্য তেলসহ প্রাকৃতিক সম্পদ সাম্রাজ্যবাদী বহুজাতিক কোম্পানী ইউনিকল, শেভরন, কনকো ফিলিপস, সান্তোষ, গ্যাসপ্রমের হাতে তুলে দিয়ে অবাধ লুটপাট চালানোর বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলুন।
ঙ) সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়ার সাথে অস্ত্র চুক্তি, পারমাণবিক বি্যুৎ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা চুক্তি, বাংলাদেশের সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (SCO)ভুক্ত হওয়ার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলুন।
৩। সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনায় সর্বোচ্চ মুনাফার লক্ষ্যে অবকাঠামো তথা সড়ক, রেল যোগাযোগ, বিদ্যুৎ খাতকে সা¤্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের হাতে তুলে দেওয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলুন। এ প্রেক্ষিতে-
ক) ভারতকে উত্তর-পূর্ব ভারতের সাথে যোগাযোগের জন্য এক পাক্ষিকভাবে ট্রানজিটের নামে করিডোর, বি্যুৎ করিডোরের নামে ভারতের জাতীয় গ্রীড লাইনের সাথে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে সম্পৃক্ত করার বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলুন।
খ) এশিয়ান হাইওয়ে, ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের সাথে সাথে বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও মায়ানমারকে নিয়ে সাম্প্রতিক বিসিম অর্থনৈতিক করিডোর ও যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলুন।
৪। সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব সংস্থা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা কর্তৃক মুক্ত বাজার অর্থনীতি ও বিশ্বায়নের আলোকে প্রদত্ত নীতি-নির্দেশের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলুন।
৫। ক) দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির মূল্য বৃদ্ধি, ঘুষ-দূনীতি, চাঁদাবাজী-টেন্ডারবাজী, শেয়ার বাজার-ব্যাংকিং ক্ষেত্রসহ সামগ্রিক লুটপাট, হত্যা-খুন-গুম, নারী নির্যাতন, ক্রসফায়ার-এনকাউন্টার-বন্দুক যুদ্ধের নামে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড, রাষ্ট্রীয় ও দলীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।
খ) সকল ধরণের কালাকানুন বাতিল করাসহ বিক্ষোভ-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং, হামলা-মামলা এবং নূন্যতম গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ ও নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলুন।
গ) শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-পেশাজীবিসহ জনগণের ন্যায্য দাবী ও অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামের উপর সরকারের স্বৈরাচারী আক্রমণ, দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলুন।
ঘ) ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (ইঝঋ)-এর এক তরফা বাংলাদেশী নাগরিক হত্যার বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলুন।
৬। ক) অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার, গণতান্ত্রিক শ্রম আইন, বাজার দরের সাথে সঙ্গতি রেখে নি¤œতম মজুরী নির্ধারণ, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, সমকাজে সমমজুরী, শ্রমিক ছাটাই, শ্রমিক নির্যাতন বন্ধের দাবীতে আন্দোলন গড়ে তুলুন।
খ) লক্ষ লক্ষ প্রবাসী শ্রমিককে সকল প্রকার প্রতারণা ও চক্রান্তের ফাঁদ থেকে রক্ষা ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলুন।
৭। ভূমিহীন কৃষকের জমি ও কাজ, সার-ডিজেল-কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণের দাম কমানো, সহজ শর্তে কৃষি ঋণ প্রদানসহ ফসলের ন্যায্যমূল্যের দাবীতে দূর্বার কৃষক আন্দোলন গড়ে তুলুন।
৮। শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ, শিক্ষার ব্যয় বৃদ্ধি, বৈষম্যমূলক প্রতিক্রিয়াশীল শিক্ষা নীতি, শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস ইত্যাদির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলুন।
৯। নারীর উপর সকল রূপের নির্যাতন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে নারী মুক্তির লক্ষ্যে নারী-পুরুষের ঐক্যবদ্ধ শোষণ মুক্তির আন্দোলন গড়ে তুলুন।
১০। সা¤্রাজ্যবাদের স্বার্থরক্ষাকারী নয়াউপনিবেশিক-আধাসামন্তবাদী প্রতিক্রিয়াশীল অবক্ষয়ী সংস্কৃতির বিরুদ্ধে প্রগতিশীল জাতীয় গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলুন।
১১। ক) সা¤্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের স্বার্থরক্ষাকারী উগ্রবাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলুন।
খ) ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বাসমূহের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারকে (বিচ্ছিন্ন হওয়ার অধিকারসহ) সমর্থন করে সকল প্রকার ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বিরুদ্ধে বাঙ্গালীসহ সকল জাতিসত্ত্বার শ্রমিকশ্রেণী ও জনগণের সা¤্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলুন।
১২। ক) পরিবেশ ও আবহাওয়া দূষণ এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতার জন্য দায়ী সা¤্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলুন।
খ) সা¤্রাজ্যবাদের শোষণা-লুণ্ঠন রক্ষা এবং বিপ্লব বিরোধী সকল রূপের এনজিও তৎপরতার কার্যক্রম বন্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করুন।
১৩। ক) বাজার ও প্রভাব বলয় পুনর্বন্টন নিয়ে সা¤্রাজ্যবাদী দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও যুদ্ধ তথা বিশ্বযুদ্ধের সাথে ভূ-রাজনৈতিক ও রণনীতিগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশকে সম্পৃক্ত করার বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলুন।
খ) সা¤্রাজ্যবাদ বিরোধী সকল গণতান্ত্রিক শক্তি ও ব্যক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব সফল করার লক্ষ্যে অগ্রসর হউন।
গ) বৈশ্বিক মন্দায় সংকটের বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে বিশ্ব শ্রমিকশ্রেণী এবং নিপীড়িত জাতি ও জনগণের সংগ্রামকে সমর্থন ও সংহতি প্রকাশ করুন।

সংগ্রামী সাথী ও বন্ধুগণ,
আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে গড়ে তুলি শ্রমিক-কৃষক-জনগণের দূর্বার আন্দোলন। সমস্যার মোহজাল ছিন্ন করে লাগাতার আন্দোলনের মধ্যদিয়ে ছিনিয়ে আনি মুক্তির লাল সূর্য। এ প্রেক্ষিতে-
ক্স        ২১ মার্চ থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত উপজেলা বা থানায় আঞ্চলিক সমাবেশ।
ক্স        ১ মে- মহান মে দিবস সর্বাত্মকভাবে পালন এবং মে মাসব্যাপী শিল্পাঞ্চলগুলোতে শ্রমিক সমাবেশ।
ক্স        জুন মাসব্যাপী মহাজোট সরকারের গণস্বার্থ ও জাতীয় স্বার্থ বিরোধী সকল কার্যক্রমের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল।
ক্স        জুলাই মাসব্যাপী সাংগঠনিক সফর।
ক্স        আগষ্ট মাসে জেলা পর্যায়ে গণসমাবেশ।

১৪ মার্চ ২০১৪

সংগ্রামী অভিনন্দনসহ
কেন্দ্রীয় কমিটি
জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *