তারিখ ঃ ০১/০৪/১৮ প্রেস বিজ্ঞপ্তি
৪ এপ্রিল ১৮ বুধবার ৬৯ ’এর গণঅভ্যূত্থানের অন্যতম রূপকার ডা. আশিকুল আলম-এর ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী
সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ, আমলা দালালপূঁজি বিরোধী সংগ্রামের অগ্রসেনানী, ৬৯’এর গণঅভ্যূত্থানের অন্যতম রূপকার, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এর কেন্দ্রীয় নেতা, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও বিপিএমপি-এর সাবেক সভাপতি ডা. আশিকুল আলম-এর ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ৪ এপ্রিল জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে সকাল ৮টায় মিরপুর সমাধিস্থলে পুস্পস্তবক অর্পণ ও বিকাল সাড়ে ৪ টার সময় এনডিএফ-এর ৮ বি, বি, এভিনিউ, গুলিস্তানস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্টিত হবে। গৃহিত কর্মসূচি সফল করার জন্য ফ্রন্টের সভাপতি ডা. এম এ করিম ও সাধারণ সম্পাদক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) ডা. জাহাঙ্গীর হুসাইন সংগঠনের সকল নেতাকমী ও শুভানুধ্যায়ী প্রতি উদ্বাত্ত আহবান জানান।
উল্লেখ্য, গণতান্ত্রিক বিপ্লবের অগ্রসেনানী ও নেতা ডাঃ আশিকুল আলমের পূর্ণ নাম ঃ আবু আয়েশ মুহম্মদ আশিকুল আলম। জন্ম ঃ ২০ মার্চ ১৯৪৫, লালমনির হাট, ৬৮ টিমুল পাড়া, বৃহত্তর রংপুর জেলা। গোপালগঞ্জ জেলার (বৃহত্তর ফরিদপুর) কাশিয়ানী থানার সীতারামপুর গ্রামে পিতৃপুরুষের আদিবাস। ডাঃ আশিক পৈত্রিক সূত্রে মধ্যবিত্ত ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। পিতার নাম ঃ মরহুম আবদুর রহমান। তিনি বাংলাদেশ রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা ছিলেন। মাতা ঃ মরহুমা বেগম আয়েশা রহমান। গৃহবধু ছিলেন। ভাইবোন ঃ সাত ভাই, চার বোন। স্ত্রী ডাঃ সাদেকা আশিক (পপি)। তিনি স্ত্রীরোগ ও ধাত্রী বিদ্যায় অভিজ্ঞ চিকিৎসক, অনির্বাণ নার্সিং হোমের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, ডাঃ আশিকের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সাথী এবং অন্যতম অনুপ্রেরণাদাতা। ডাঃ আশিকের একমাত্র কন্যা শামসী সুমাইয়া আশিক (মুনমুন)।
শিক্ষা ঃ সরকারি চাকুরে পিতার চাকুরিসূত্রে বিভিন্ন জেলায় ডাঃ আশিকের লেখাপড়া করতে হয়েছে। শিক্ষা জীবনের সূত্রপাত ঘটে বৃহত্তর রংপুরের লালমনিরহাট প্রাথমিক স্কুলে; এরপর চুয়াডাঙ্গার দর্শনার মেমনগর হাইস্কুল, পরি ফরিদপুর জেলা স্কুল। শৈশব থেকে ডাঃ আশিক অত্যন্ত মেধাবী ও কৃতী ছাত্র ছিলেন। স্কুল জীবনে তিনি সব সময় ক্লাসে প্রথম স্থান অধিকার করে এসেছেন। মেধার স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি স্কুল জীবনে দু’বার ডবল প্রমোশনও লাভ করেন।
স্কুলে ছাত্রাবস্থায় স্কাউটে যোগ দেন এবং দর্শনা মেমনগর হাইস্কুলের স্কাউট ট্রুপ লিডার নিযুক্ত হন। ১৯৫৮ সালে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত সমগ্র পাকিস্তান স্কাউট জাম্বুরীতে অংশ নেন। তিনি কুমিল্লার লাকসাম হাইস্কুল (দৌলতগঞ্জ) থেকে মেট্রিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৬০ সালে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন।
ডাঃ আশিক ১৯৬২ সালে ঢাকা কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে ইন্টার মিডিয়েট পাশ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। সে সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তিনিই ছিলেন ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বরের অধিকারী। ঢাকা মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি কেমিস্ট্রিতে অনার্সসহ বিভিন্ন পরীক্ষায় কৃতিত্বের পরিচয় দিয়ে ১৯৬৮ সালে এমবিবিএস পাশ করেন।
রাজনৈতিক জীবন ঃ ডাঃ আশিক এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় ছ্রা রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ষাটের দশকের গোড়ার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগ সমর্থিত ‘অভিযাত্রিক’ এবং ছাত্র ইউনিয়ন সমর্থিত ‘অগ্রগামী’ নামে দু’টি সংগঠন ছিল। ‘অগ্রগামী’ সংগঠনটি সে সময় ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনা ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যম ছিল। অধিকাংশ মেডিকেল ছাত্রছাত্রীর কাছে ‘অগ্রগামী’ সে সময় গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। ডাং আশিক তাঁর ছাত্র-রাজনীরি সূচতাতে ‘অগ্রগামী’র ঢাকা মেডিকেল কলেজ শাখার একজন সমর্থক ছিলেন। ১৯৬৭-৬৯ সালে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জি.এস) নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি ছিলেন তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের প্রগতিশীল অংশের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি।
ডাঃ আশিক শুরু থেকেই লেজুড়বৃত্তির ছাত্র-রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন না, তিনি ছাত্র সংগঠনের স্বাধীন অস্তিত্বে বিশ্বাস করতেন। এ বিশ্বাস তিনি আমৃত্যু লালন করেছেন। সাধারণ সম্পাতক থাকাকালে তিনি সংগঠক হিসেবে বিশেষ দক্ষতা ও কর্তব্যনিষ্ঠার পরিচয় দেন। তাঁর যখন ইন্টার্নীশীপ চলছিল তখন ইন্টার্নী ডাক্তারের দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালনের সাথে সাথে ছাত্র-রাজনীতির কাজ-কর্মে ব্যস্ত থাকতেন। এ সময় প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতির একজন সক্রিয় সমর্থক হিসেবে তৎকালীন মেডিকেল ছাত্রী সাদেকা আক্তার বানু (পপি)’র সাথে তাঁর পরিচয় ও প্রগাঢ় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে তাঁরা বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন।
১৯৬৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকার ডেমরা এলাকায় ভয়াবহ টর্নেডোতে এই জনপদ বিধ্বস্ত হয়, হতাহত হয় বহুলোক। এ সময় ডাঃ আশিক ঢাকা মেডিকেল কলেজ কলেজ থেকে একটি মেডিকেল টিম নিয়ে টর্নেডো বিধ্বস্ত ডেমরাতে ছুটে যান এবং সেখানকার আহকদের বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ঔষধ বিতরণের ব্যবস্থা করেন।
১৯৬২ সালের শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৪ সালের সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং ১৯৬৯ এর ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানসহ আমৃত্যু অসংখ্য গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। ঊনসত্তরের ১১ দফা আন্দোলনের অন্যতম রূপকার হিসেবে প্রগতিশীল রাজনৈতিক অঙ্গনে তিনি বেশি পরিচিত।
৬ ডিসেম্বর ১৯৬৮-তে মওলানা ভাসানীর আহ্বানে গভর্নর হাউস ঘেরাও কর্মসূচিতে ডাঃ আশিক সক্রিয় অংশ নেন। ২৯ ডিসেম্বর ১৯৬৮-তে মওলানা দেশব্যাপী গণআন্দোলন ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে গ্রামে-গঞ্জে হরতাল আহ্বান করলে ধীরে ধীরে সারাদেশ উত্তাল হয়ে উঠতে থাকে। এই আন্দোলনে ১১ দফা ভিত্তিক তৎকালীন সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের (প্রগতিশীল অংশ) কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্র-সংসদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ডাঃ আশিক এই পরিষদের নেতৃস্থানীয় সদস্য ছিলেন। তিনি আত্মদানের মনোভাব নিয়ে বলিষ্ঠ সংগঠক হিসেবে ১১ দফার আন্দোলন সংগঠিত করার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ৬ ডিসেম্বর ১৯৬৮ সালে গণআন্দোলনের এক পর্যায়ে ঢাকায় গুলিস্তান সিনেমা হলের সামনে তাঁর নেতৃত্বাধীন ছাত্রছাত্রীদের এক জঙ্গী মিছিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এক পর্যায়ে পুলিশ ডাঃ আশিকের মাথায় বেয়োনেট চার্জ করে। অল্পের জন্য তিনি প্রাণে বেঁচে যান। তাঁকে পুলিশ রক্তাক্ত অবস্থায় গ্রেফতার করে। তাঁর ঘনিষ্ট বন্ধু প্রখ্যাত সিনিয়র ফটো জার্নালিষ্ট রশীদ তালুকদারের হস্তক্ষেপের ফলে শেষ পর্যন্ত তিনি গ্রেফতার এড়াতে সক্ষম হন। রশীদ তালুকদার তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
১৭, ১৮, ১৯ জানুয়ারি ১৯৬৯ আইয়ুব সরকার গণআন্দোলন স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য জারি করে ১৪৪ ধারা। এই স্বৈরাচারী পদক্ষেপ ছাত্র-জনতাকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে। পরপর তিনদিন পুলিশের নিচ্ছিদ্র বেষ্টনী এবং লাঠি-গুলি-টিয়ারগ্যাস উপেক্ষা করে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে ডাঃ আশিক, শহীদ আসাদ সহ অসংখ্য সাহসী ছাত্র নেতা-কর্মী রাজপথে জঙ্গী মিছিল করেন।
২০ জানুয়ারি ছাত্রনেতা আসাদ শহীদ হলে এই বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের সুতীব্র নিন্দা জানিয়ে ডাঃ আশিকের নেতৃত্বে রফিকুল হাসান জিন্নাহ, আমিনুল হাসান রিন্টু, কবীর, সিরাজ, ফ্রান্সিস রোজারিও, ফওজিয়া মোসলেম, নিলুফার সুলতানা নীলা, রেখা, নেলীসহ ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রছাত্রীরাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রথম কালো পতাকা উত্তোলন করে এবং প্রথম প্রতিবাদ সমাবেশ ও এক বিরাট শোক মিছিল বের করে। এ মিছিল সমাবেশ থেকেই ২১ জানুয়ারি দেশব্যাপী হরতাল আহ্বান করা হয়। এটা কোন পূর্ব পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত ছিল না। আসাদের সহকর্মীরা এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র সংসদের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ডাঃ আশিক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে সম্মিলিতভাবে এই হরতালের ডাক দেন। এই হরতাল ব্যাপক সাড়া জাগায়। এছাড়া ২০ জানুয়ারি ১৯৬৯ শহীদ আসাদের লাশ গয়েব করে দেয়ার জন্য যখন ইপিআর-পুলিশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যৌথ অভিযান চালায় তখন ডাঃ আশিকের নেতৃত্বে মেডিকেল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ লাশ গোপনে রক্ষা করেন। এর ফলে পুলিশী অভিযান ব্যর্থ হয়। আসাদের লাশ পরে তাঁর আত্মীয়দের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
২৪ জানুয়ারি গণঅভ্যুত্থান যখন তুঙ্গে তখন মিছিলে পুলিশের গুলি চলে। মারা যায় মতিয়ুর, রোস্তম এবং নাম না জানা আরো অনেক শহীদ। এদিন যারা আহত হন তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। এ ব্যাপারে ডাঃ আশিক অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
১৯৭০ সালের প্রথম দিকে তিনি সাংগঠনিক কাজে গোপালগঞ্জ শহরে যান। তিনি এখানে ‘সেবা চিকিৎসালয়’ নামে একটি চিকিৎসালয় খোলেন। এখানে তিনি একই সঙ্গে পেশাগত কাজ এবং কৃষকদের মধ্যে সংগঠন গড়ে তোলেন। স্থানীয় প্রতিক্রিয়াশীল চক্র তাঁর এই কর্মকান্ড সুনজরে দেখেনি। তাদের অপতৎপরতার ফলে তাঁর বাড়িতে একদিন পুলিশ হানা দেয়। তিনি তখন বাড়িতে ছিলেন না। ডাঃ আশিকের নামে হুলিয়া জারি করা হয় এবং তাকে গ্রেফতারের জন্য জোর পুলিশী তৎপরতা শুরু হয়। এ সময় হুলিয়া মাথায় নিয়ে বিভিন্ন গ্রামে আত্মগোপন করে থাকেন। হুলিয়া জারি থাকাকালে তিনি ঢাকায় আসেন এবং রূপগঞ্জ, মাতুয়াইল, নারায়গঞ্জ, নরসিংদী, ডেমরা ইত্যাদি এলাকায় পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী)-এর নির্দেশে কাজ পরিচালনা করেন। তিনি বিভিন্ন জুটমিল- যেমন সাত্তার জুটমিল, নরসিংদী আলিজান জুটমিল, ডেমরার লতিফ বাওয়ালী জুটমিলে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তাঁর এই ভূমিকা অব্যাহত থাকে। এই সময়টা তাঁর আত্মগোপনে থাকার সময়।
একাত্তরের যুদ্ধে ঢাকায় যেসব প্রগতিশীল নেতা-কর্মী আহত হন তাদেরকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রক্ষার জন্য ডাঃ আশিক, ডাঃ রফিকুল হাসান জিন্নাহসহ অনেক প্রগতিমনা ডাক্তার এগিয়ে আসেন। এক্ষেত্রে শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক ডাঃ ফজলে রাব্বির নাম বিশেষভাবে স্মরণীয়। এ সময় ডাঃ রাব্বি ও ডাঃ জিন্নাহর সহযোগিতায় ডাঃ আশিক রাজবন্দীদের চিকিৎসার সমস্ত দায়-দায়িত্ব বহন করতেন। তিনি ডাঃ রাব্বির খুবই ¯েœহভাজন ছিলেন।
১৯৭৩ সালে ডাঃ আশিক আত্মগোপন অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসেন। ১৯৭৫ সালে বিমানে মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগ দেন। এখানে তিনি বিমানের সাধারণ কর্মচারীদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করেন। এর ফলে বিমান-কর্মচারীদের আস্থা অর্জন করলেও বিমানের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চক্ষুশূল হন। রাজনৈতিক কর্মকান্ডে যুক্ত থাকার জন্য তাঁর বিমানে চাকুরী করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায় এবং তিনি ১৯৭৭ সালে পদত্যাগ করেন।
প্রবাস জীবন ঃ বাংলাদেশ বিমানের চাকরি ছেড়ে দেওয়ায় ডাঃ আশিকের জীবনে আর্থিক বিপর্যয় নেমে আসে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাঁর মাতৃবিয়োগ ঘটে। একই সালের ২০ মে তাঁদের কন্যা সন্তান মুনমুনের জন্ম হয়। তাঁর পিতা ইতিপূর্বে সরকারী চাকরী থেকে অবসর নিয়েছিলেন। ছোট ভাইবোনরা সবাই স্কুল-কলেজে পড়াশুনারত ছিল। ডাঃ আশিক সংসারের প্রতি দায়বদ্ধতার তাড়না থেকে এ সময় বিভিন্ন পরিস্থিতির শিকার হয়ে ইরানে যাবার সিদ্ধান্ত নেন, যদিও রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার জন্য বিদেশে যাবার ক্ষেত্রে তার অনিচ্ছা ছিল প্রবল। ২৭ মে ১৯৭৭ তিনি ইরানের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন।
তিনি ইমপেরিয়াল গভর্নমেন্ট অব ইরানিয়ান এয়ারফোর্সের অধীনে দু’বছর (১৯৭৭-১৯৭৯) ইরানের বেলুচিস্তান প্রদেশের জাহেদান শহরে চিকিৎসক হিসেবে যোগদান করেন। এ সময় ইরানে শাহ বিরোধী গণআন্দোলন চলছিল। প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে এই গণআন্দোলন থেকে তিনি শিক্ষা গ্রহণ করেন। এই রাজনৈতিক দূর্যোগপূর্ণ সময়ে তিনি ও তাঁর স্ত্রী ইরানের দু’টি প্রদেশে চাকুরীরত ছিলেন। এর ফলে উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় দিন কাটে। ১৯৭৯ সালে তিনি নয় মাসের জন্য দেশে ফিরে আসেন। বিদেশে থাকলেও দেশের প্রগতিশীল রাজনৈতিক অঙ্গনের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছিলেন। ফলে দেশে যে নয় মাস ছিলেন পুরো সময়টা এখানকার রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ব্যয় করেন। ১৯৮০ সালে পুনরায় ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে তাঁরা স্বামী-স্ত্রী দু’জনে চাকুরী নিয়ে ইরানে যান এবং এবং ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত সেখানেই চাকুরীরত ছিলেন। তিনি চিকিৎসক হিসেবে কর্মনিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে দেশের ভাবমূর্তি ইরান সরকারের কাছে তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশী চিকিৎসক হিসেবে ভূয়শী প্রশংসা অর্জন করেন।
প্রবাসী জীবনেও তাঁর রাজনৈতিক কর্মকান্ড থেমে থাকেনি, তবে কর্মকৌশল ছিল ভিন্ন মাত্রার বা প্রবাসী জীবনের বাস্তবতার সঙ্গে ছিল সঙ্গতিপূর্ণ। আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব এবং প্রতিবাদী ভূমিকার ফলে অল্প দিনের মধ্যে ডাঃ আশিক প্রবাসী বাংলাদেশী ডাক্তারদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। প্রবাসে তাঁর বাড়িকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশী ডাক্তারদের বিভিন্ন কার্যক্রম আবর্তিত হতে থাকে। ফলে ডাঃ আশিকের বাসভবন ‘বাংলাদেশ হাউজ’ নামে বাংলাদেশী ডাক্তারদের মধ্যে পরিচিতি অর্জন করে। এক্ষেত্রে ডাঃ আশিকের সহধর্মিনী হিসেবে সাদেকা আশিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
দশ বছরের প্রবাস জীবনে ডাঃ আশিকের উল্লেখযোগ্য কর্মকান্ডের মধ্যে ছিল- বিএমএ ইরান শাখা গঠন করা। তিনি এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। তিনি এই শাখার মাধ্যমে প্রবাসী ডাক্তারদের মধ্যে সংগ্রামী চেতনা ও প্রেরণা সৃষ্টি করেন এবং ডাক্তারদের স্বার্থ সংরক্ষণের আন্দোলন গড়ে তোলেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালন ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে সুস্থ্য জাতীয়তাবোধ এবং সেবা ও সহমর্মিতার মনোভাব জাগিয়ে তোলার জন্য সচেষ্ট ছিলে। ইরানে নিযুক্ত বাংলাদেশী দূতাবাস দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি সীমাহীন দায়িত্বহীনতা ও অবহেলা প্রদর্শন করে আসছিল। ডাঃ আশিকের নেতৃত্বে বিএমএ ইরান শাখা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে। ইরানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত যে দায়িত্ব পালন করেননি, সে দায়িত্ব পালনে ডাঃ আশিক অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। যেমন বাংলাদেশের নতুন ডাক্তারদের ইরানে অভ্যর্থনা জানানোর দায়-দায়িত্ব উক্ত দূতাবাসের ছিল, দূতাবাস তা পালন না করায় ডাঃ আশিক নিজ উদ্যোগে ও অন্যান্য ডাক্তারদের সহায়তায় সে দায়িত্ব পালন করেন। যেসব ডাক্তার ইরানে মৃত্যুবরণ করেন তাদের মরদেহ দিনের পর দিন হিমাগারে পড়ে থাকতো দূতাবাসের অবহেলায়। এখানে ডাঃ আশিক নিজ উদ্যোগে এবং অন্যান্য ডাক্তারদের সহায়তায় মৃত ডাক্তারদের মরদেহ দ্রুত দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। এসব ব্যাপারে যেসব ডাক্তার অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তাঁরা হলেন ডাঃ সাদেকা আশিক, ডাঃ লায়লা আমীন, ডাঃ দেলোয়ার হোসেন, ডাঃ মইনুল হক, ডাঃ খালেক, ডাঃ শাহেদ, ডাঃ ফকরুদ্দীন স্বপন, ডাঃ এনামুল হক, ডাঃ আকিকুল আলম, ডাঃ নূরুল আলম প্রমুখ। এ সময় কোন কোন বিক্ষুব্ধ প্রবাসী ডাক্তারকে মন্তব্য করতে শোনা গেছে- ‘এখানে আমাদের এ্যাম্বেসেডর নেই, এ্যাম্বেসীও নেই। আশিক ভাই আমাদের এ্যাম্বেসেডর, তাঁর বাসভবনই আমাদের এ্যাম্বেসী।’
প্রবাসে অসহায় সাধারণ বাঙালীদের ডাঃ আশিক বিভিন্নভাবে সাহায্য করতেন। বিভিন্ন কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে তিনি প্রবাসী বাঙালীদের স্বার্থ সংরক্ষণের প্রতীক হয়ে ওঠেন। অপরদিকে ইরানের বাংলাদেশী দূতাবাসের কর্মকর্তাদের চক্ষুশূলে পরিণত হন। দেশের প্রতি মমত্ববোধশূণ্য এসব নির্দয় আমলারা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ডাঃ আশিককে ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ আখ্যায়িত করে তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের কাছে অভিযোগ করে। এ অভিযোগ শেষ পর্যন্ত ফলপ্রসূ হয়নি।
এ সময় ইরাক-ইরান যুদ্ধ ভয়াবহ আকার ধারণ করে। সমগ্র তেহরানের জনজীবনে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। যুদ্ধকালীন সময়ে ডাঃ আশিক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রবাসী অন্যান্য বাঙালীদের খোঁজ খবর নিতেন, ছুটে যেতেন যুদ্ধ আক্রান্ত এলাকায়। ১৯৮৮ সালের এপ্রিলে তিনি সস্ত্রীক কন্যা মুনমুনসহ স্থায়ীভাবে দেশে ফিরে আসেন।
উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম ঃ ইরান থেকে ফেরার পর ১৯৮৮ সালের জুলাইয়ে তিনি সাভারের গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিকেলস-এ মেডিকেল ডাইরেক্টর হিসেবে যোগ দেন। এ সময় দেশে শুরু হয় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা। ডাক্তার আশিক নিজ উদ্যোগে গণস্বাস্থ্যের পক্ষ থেকে বন্যাদূর্গত এলাকায় খাবার-ঔষধ মেডিকেল টিমসহ ছুটে যান এবং ত্রাণ কাজে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯০ সালের জুলাই পর্যন্ত তিনি গণস্বাস্থ্যে কর্মরত ছিলেন।
ক. অনির্বাণ নার্সিং হোম ঃ সমাজের আমূল পরিবর্তন ছাড়া কোটি কোটি নিস্পেষিত শ্রমজীবী মানুষের সুচিকিৎসার গ্যারান্টি দেয়া যাবে নাÑ এই সত্য ডাঃ আশিকের কাছে স্পষ্ট ছিল। তাই তিনি সমাজের মৌলিক পরিবর্তনের সংগ্রামের সাথে সাথে যেমন সীমিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থায়ও সাধারণ মানুষকে কিভাবে, কত স্বল্পব্যয়ে চিকিৎসা সেবা দেয়া যায় এটাও ছিলো তাঁর অবিরাম প্রচেষ্টা। তিনি উদ্যোগ নিয়েছিলেন ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করে সীমিত হলেও তাঁর স্বপ্নকে রূপ দিতে। তিনি তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগে ও কয়েকজন ডাক্তার সহকর্মীর প্রচেষ্টায় যৌথ মালিকানায় ঢাকার মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার সংলগ্ন স্থানে ১৯৯০ এর ১ ফেব্রুয়ারিতে প্রতিষ্ঠা করেন ‘অনির্বাণ নার্সিং হোম’। তিনি ছিলেন ক্লিনিকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ক্লিনিকটির যৌথ মালিকানার সঙ্গে অন্যান্য যাঁরা যুক্ত রয়েছেন এবং ছিলেন তাঁরা হলেন ঃ তাঁর স্ত্রী ডাঃ সাদেকা আশিক, মরহুম ডাঃ দেলোয়ার হোসেন, ডাঃ দোলোয়ার বেগম, ডাঃ ইমতিয়াজ হোসেন, ডাঃ জুয়েলা নাসরিন ও ডাঃ গোলাম সারোয়ার হোসেন জিএম। শুরুর দিকে অধ্যাপিকা ডাঃ সুলতানা জাহান যুক্ত ছিলেন।
ডাঃ আশিক অনির্বাণ নার্সিং হোমকে আর দশটি ক্লিনিকের মত নিছক ব্যবসায়িক দৃষ্টিতে পরিচালিত করেননি। রোগীরা যাতে প্রকৃত সেবা ও উপযুক্ত পরিবেশে স্বল্পব্যয়ে সুচিকিৎসা পেতে পারে সেভাবেই ক্লিনিকটিকে রূপ দিতে চেষ্টা করেছেন। এখানে দুস্থ রোগী, দেশপ্রেমিক প্রগতিশীল কর্মীদেরকে নিতান্তই স্বল্প ব্যয়ে চিকিৎসা দিয়েছেন। এ জন্য অনেক সময় তাঁকে ভর্তুকি দিয়ে ঘাটতি পূরণ করতে হয়েছে। আমৃত্যু তাঁর এ ভূমিকা অব্যাহত ছিল। এজন্য তাঁকে সাংসারিক আর্থিক ক্ষতি ও বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছে।
খ. অনির্বাণ-১ সেবামূলক চিকিৎসা প্রকল্প ঃ ডাঃ আশিক কেবল গণমুখী স্বাস্থ্যনীতি বাস্তবায়ন আন্দোলনের অন্যতম প্রবক্তাই ছিলেন না ব্যক্তিগত জীবনে তার স্বপ্নকে তিনি বাস্তবে রূপ দেয়ার আন্তরিক প্রয়াস নেন। এরই ফসল হিসেবে ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৪ তে ২০, দারুস সালাম রোড, মিরপুর (কিয়াংসী চাইনিজ হোটেল সংলগ্ন) ঢাকায় তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগে ও অন্যান্য ডাক্তারদের সহযোগিতায় ‘অনির্বাণ-১’ নামে সেবামূলক চিকিৎসা প্রকল্পের অফিস উদ্বোধন করা হয়। এ উপলক্ষ্যে প্রচারিত লিফলেটে এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য-লক্ষ্য, সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে যা উল্লেখ করা হয় তা এই ঃ “একদিকে সরকারী স্বাস্থ্য ও হাসপাতালের করুণ ও অপ্রতুল ব্যবস্থার উপর যেমন জনগণ তাদের আস্থা হারিয়ে ফেলেছে, অন্যদিকে আবার কিছু বেসরকারী ক্লিনিক ও হাসপাতালের উর্ধ্বগতি ব্যয়ে জনগণ ভীত ও সন্ত্রস্ত। এই দুই ব্যবস্থার চাপে পড়ে জনগণ আজ দিশেহারা, অসহায়। এমন একটি অবস্থায় আমরা কয়েকজন ডাক্তার জনগণের স্বাস্থ্যের একটা বিকল্প ব্যবস্থা বের করার আপ্রাণ চেষ্টা করছি- যেখানে জনগণ তাদের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থা তাদের আর্থিক সঙ্গতির মধ্যে পেতে পারে।”
গ্রামের চিকিৎসা-বঞ্চিত মানুষকে বিনামূল্যে বা স্বল্প মূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য তিনি গোপালগঞ্জে নিজ এলাকায় ‘অনির্বাণ-১’ এর শাখা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু স্বাস্থ্যগত কারণে তিনি তাঁর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারেননি।
বিপিএমপিএ-তে সক্রিয় অংশ গ্রহণ ঃ ডাঃ আশিক ইরান থেকে দেশে ফেরার পর পরই রাজনৈতিক-সামাজিক কর্মকান্ডে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ১৯৮৮ সালে তিনি বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল প্র্যাকটিশনার্স এসোসিয়েশনে যোগ দেন। তিনি এর আজীবন সদস্য ছিলেন। ১৯৯২ সালে বিপিএমপিএ-এর ঢাকা মেট্রোপলিটন শাখার মহাসচিব পদে নির্বাচনে জয়লাভ করেন। ১৯৯২ থেকে ২৮ নভেম্বর’৯৪ পর্যন্ত তিনি এ পদে আসীন ছিলেন। ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বরে তিনি বিপিএমপিএ-এর কেন্দ্রীয় মহাসচিব পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এসময় তিনি চিকিৎসকদের ত্রিমুখী ধারার বিরুদ্ধে গণমুখী বিকল্প ধারা সৃষ্টির জন্য কেন্দ্রীয় মহাসচিব পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে এ নির্বাচনে জয়লাভ করেননি। ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত বিপিএমপিএ-এর নির্বাচনে তিনি কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হন। চিকিৎসকদের নেতা হিসেবে সমাজ সম্পর্কে ডাঃ আশিক কি ভাবতেন তা তিনি স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন ৪ এপ্রিল’৯৭-তে অনুষ্ঠিত বিপিএমপিএ-এর নবনির্বাচিত কার্যকরী কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠানে, সভাপতি হিসেবে জীবনের শেষ ভাষণে।
বার্তা প্রেরক
প্রকাশ দত্ত
সহ-সম্পাদক
মোবাঃ ০১৯২৪-০৪৮১৩৯।