প্রেস বিজ্ঞপ্তি তাং ২০ জুন ২০১৮
২০ জুন বুধবার বিকাল ৫টায় সমাজতান্ত্রিক নারী নেত্রী ক্লারা জেটকিনের ৮৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির যশোর জেলা কমিটির উদ্যোগে জেলা আহ্বায়ক ফরিদা পারভীনের সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নেত্রী রহিমা আক্তার। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নেত্রী কামরুন নাহার ও খুলনা জেলা আহ্বায়ক খাদিজা বেগম। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের আব্দুর রাজ্জাক মাস্টার, ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের আশুতোষ বিশ্বাস, কৃষক সংগ্রাম সমিতির কামরুল হক লিকু, ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদের জাকির হোসেন মাস্টার, জাতীয় ছাত্রদলের ঢাকা মহানগরের নেতা আফরিন তানিয়া, যশোর জেলার রাসেল রানা, মিজানুর রহমান টিটু ও মহিলা সমিতির নিদ্রিতা আফরোজ প্রমুখ। সভাটি পরিচালনা করেন জেলা যুগ্ম-আহ্বায়ক সেজুতি শাকিলা। কবিতা আবৃতি করেন আফরিন তানিয়া।
উল্লেখ্য, ক্লারা জেৎকিন একজন কমিউনিস্ট নেত্রী ছিলেন। তার পুরো নাম ক্লারা জেৎকিন এইছ্নার। ১৮৫৭ সালের ৫ জুলাই জার্মানির উইডারউ-র স্যাক্সোনী শহরে জন্মগ্রহণ করেন এবং লিপজিগ শহরের ”স্টেইবার টিচারস্ কলেজ ফর ওম্যান” এ অধ্যয়ন করেন। উক্ত কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি তরুণ বয়স থেকেই একজন সোশ্যালিস্ট হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। জার্মান সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রতিষ্ঠাতা উইলিয়াম লিককানেটের লেকচার ক্লাসে তিনি নিয়মিত উপস্থিত থাকতেন।
জার্মান ও আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলনে ক্লারা এক অতি পরিচিত নারী ব্যক্তিত্ব। পিতা ছিলেন স্কুল শিক্ষক এবং মাতা ফরাসী বিপ্লবের একজন দৃঢ় সমর্থক। ১৮৭৪ সালে যদিও একজন নারীর জন্য তখন কোন রাজনৈতিক দলে যোগদান করা ছিল বেআইনি তবুও তিনি যোগ দেন উক্ত রাজনৈতিক দলে এবং ধীরে ধীরে সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী হয়ে ওঠেন। আপাতদৃষ্টিতে ক্লারা ছিলেন সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী একজন নারী। পেটি বুর্জোয়া পরিবারে জন্মগ্রহণকারী ও প্রচলিত একাডেমি শিক্ষায় শিক্ষিত ক্লারা জার্মান সমাজের শ্রেণী বৈষম্য ও পুঁজিতন্ত্র কর্তৃক শ্রেণী শোষণের ব্যবস্থা উচ্ছেদ করে শ্রমিক শ্রেণীর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মার্কস্বাদী মতবাদ গ্রহণ করেন। শ্রমিক শ্রেণীর মতবাদ মার্কস্বাদ অনুযায়ী সমাজের আমূল পরিবর্তন ঘটাতে হলে পশ্চাৎপদ নারীদেরকেও যে রাজনৈতিকভাবে সচেতন করে তুলতে হবে এ সত্য ক্লারা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছিলেন এবং নারী জাতি তার শৃঙ্খল ভেঙ্গে মুক্ত হতে না পারলে মানব জাতির সামগ্রিক মুক্তি সম্ভব নয় এ শিক্ষায় তিনি নিজেকে সুদৃঢ়ভাবে গড়ে তুলেছিলেন। নারীদের সমস্যা নিয়ে ব্যাপক প্রচার এবং বিশ্লেষণ করে দেখান যে জার্মান নারীরা কিভাবে পুঁজিবাদের শ্রম শোষণ এবং যৌন নিপীড়নের শিকার ও পুঁজিবাদ কিভাবে নারীকে ভোগ্যপণ্যে পরিণত করেছে। ১৮৯৬ সালে অনুষ্ঠিত তার পার্টি কংগ্রেসে নারীদের সমস্যার উপর তিনি দীর্ঘ বক্তব্য প্রদান করেন। কংগ্রেসের প্রদত্ত বক্তব্যে বেকোফেন, মর্গান ও বুর্জোয়া নারীবাদীদের তিনি তীব্র সমালোচনা করেন। ক্লারা বিশ্লেষণ করে দেখান যে ”ব্যক্তিগত মালিকানা ও শ্রেণী শোষণই হচ্ছে নারী নিপীড়নের মূল উৎস; সমাজতন্ত্রই পারে নারী নিপীড়নের শিকড় উপড়ে ফেলতে”। এই ধারণাই তিনি দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেবার আহ্বান জানান এবং কিছু দিকনির্দেশনা দেন যে, কিভাবে নারীদেরকে শ্রেণী শোষণের কবল থেকে উদ্ধার করে সচেতন করে গড়ে তুলতে হবে, তাদেরকে শ্রেণী সংগ্রামে কিভাবে উদ্বুদ্ধ করতে হবে এবং কিভাবে ট্রেড ইউনিয়নগুলোতে নারীদের অংশ গ্রহণ আরো বাড়াতে হবে। তিনি দেখান বৃহৎ শিল্প ছাড়াও কুটির শিল্প কারখানার নারীদেরকে জাগিয়ে তুলতে হবে। ১৮৯৮ সালে ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট উইমেন্স অর্গানাইজেশন (ISWO)’র কোপেন হেগেন সম্মেলনে ক্লারা জেৎক্নি ৮ মার্চকে বিশ্ব নারী দিবস হিসাবে পালনের প্রস্তাব দেন। জার্মানীর ”আয়রণ চ্যান্সেলর” অটোভন বিসমার্ক জার্মান সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে বেআইনি ঘোষণা করলে ক্লারা পার্টির জন্য গোপন কাজে সক্রিয় হন। গোপন জীবনে থাকাকালীন সময়ে উক্ত পার্টির কর্মী একজন রাশিয়ান মার্কস্বাদী উড্ওয়ার্কার ওসিফ জেৎকিনের সাথে পরিচিত হন। জেৎকিনের একজন ব্যক্তিগত বন্ধু ছিলেন ফ্রেডারিক এঙ্গেলস্। তিনি গভীর ভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন বেবেলের ÓWomen and socialist” পড়ে। যেখানে বলা হয়েছে, ÓThere can be no liberation of mankind without the independence and equality of sexes” ১৮৮৯ সালে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ফাউন্ডিং কংগ্রেসের তিনি প্রতিনিধি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। কংগ্রেসে ক্লারা বক্তব্য রাখেন নারীদের সমঅধিকার নিয়ে এবং সেই সাথে যুক্ত করেন ভোটাধিকার এবং সমান কাজে সমান মজুরির দাবি। ১৮৯০ সালে বিসমার্ক এটা খারিজ করে দেয়। জেৎকিন জার্মান ফিরে আসেন। ১৮৯২ সালে তিনি ইকুয়ালিটি (Die Glei chheit) পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯১৭ সাল থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি ঐ একই পদে বহাল ছিলেন। কারখানার শ্রমিক ধর্মঘট, শ্রমিক নারীদের কর্মতৎপরতা এবং সোশ্যাল ডেমোক্রেটদের প্রধান ইস্যুগুলিই ছিল পত্রিকাটির প্রতিপাদ্য বিষয়। ১৯১৪ সালের ৭ নভেম্বর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বিরুদ্ধে জার্মান সোশ্যালিস্ট ডেমোক্রেটিক পার্টি বিরোধিতা করে। সেখানে জেৎকিন বলেছিলেন, যদি অধিক সংখ্যক নারীরা যুদ্ধ প্রতিরোধের জন্য শ্লোগান দেয় তাতেই জনগণের শান্তি নিশ্চিত হতে পারে। এটাই ছিল যুদ্ধের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম সমাজতান্ত্রিক বিরোধিতা। সম্মেলন শেষ হবার পরেই তিনি গ্রেফতার হন। ১৯৩৩ সালের ২০ জুন সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের এই অক্লান্ত নেত্রী মৃত্যুবরণ করেন।
বার্তা প্রেরক
সেজুতি শাকিলা
যুগ্ম-আহ্বায়ক
মোবাঃ ০১৭-৯৪২৩-৯৫৮১